Home Bangla Recent পোশাক খাতের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই

পোশাক খাতের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই

সরকারি সহায়তার দাবি অযৌক্তিক - মির্জ্জা আজিজ

নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করলেও পোশাক খাতের শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তবে এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা পেলে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে তারা। অন্যথায় বড় ধরনের বিপর্যয় নামবে এই শিল্পে। আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক উন্নতি লাভ করবে। ২০২৭ সাল থেকে সব বাড়তি সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের এক শীর্ষ পোশাক কারখানার মালিক জানান, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করায় সম্মান বেড়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে পোশাক শিল্পে ঝুঁকি বেড়েছে। এর ফলে জিএসপি সুবিধা কমে যাবে। জিএসপি পস্নাস পেতে হলে ২৭টি শর্ত পূরণ করতে হবে। যেটা একটা চ্যালেজ্ঞিং। অথচ এটা মোকাবিলা করার জন্য এখনো প্রস্তুত না তারা। দ্রম্নত প্রস্তুত্মতি গ্রহণ না করলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে দেশের প্রধান রপ্তানিখাতকে। আর এজন্য সরকারকে অবশ্যই সহায়তা দিতে হবে।

অন্যদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ ফ ম মোস্ত্মফা কামাল মনে করেন, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের রপ্তানি কমবে না। এই অর্জনে দেশের যে সম্মান ও মর্যাদা বেড়েছে তাতে রপ্তানি আরও বাড়বে। বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। ক্রেতারা উৎসাহের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে পণ্য কমবে। তারা এ দেশের ব্যবসায়ীদের এখন অন্যভাবে দেখবে। কারো প্রতিপত্তি বাড়লে যেটা হয়। তাই ব্যবসায়ীদের কোনো প্রকার শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া সরকার সব সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকবেন বলেও জানান তিনি।

তবে অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের সুবিধাগুলো কমে যাবে। তবে এই তালিকায় উন্নীত হবে ২০২৪ সালে। আর সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হবে ২০২৭ সালে। সুতরাং তাদের হাতে দীর্ঘ সময় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তারা নিজেরাই প্রস্তুত হতে পারে। সরকারকে টানার প্রয়োজন নেই।

এতদিন নিম্ন আয়ের দেশের তালিকায় থাকার কারণে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে অনেক বাড়তি সুবিধা পেত। যে সুবিধাগুলো কেবল নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার কারণে এই সুযোগগুলো হারাবে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ইউরোপের বাজারে জিএসপি সুবিধা, স্বল্প সুদে ঋণ, বিভিন্ন প্রকার আর্থিক সহায়তা।

উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের প্রবেশ করার বিষয়ে সরকার আরেকটু সময় নিলে ভালো হতো বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। অনেক ব্যবসায়ী মনে করেন, দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প। বর্তমানে এই শিল্প অনেকগুলো সংকট মোকাবিলা করে আসছে। তাজরীণ ফ্যাশনে আগুন লাগা, রানা পস্নাজা ধসের পর বড় ধাক্কা লাগে এই শিল্পে। এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে পোশাক খাতের পরিবেশ। এরই মধ্যে আবারও নতুন চ্যালেজ্ঞ সামনে আসায় বাড়তি চাপ পড়বে তাদের উপর। সরকার একটু দেরি করে আবেদন করলে আরও কিছুদিন সময় পাওয়া যেত। এই সময়ের মধ্যে শক্তিশালী হয়ে উঠত পোশাক কারখানার সার্বিক অবস্থা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়ার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামিম এহসান যায়যায়দিনকে জানান, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ায় তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। প্রাপ্তি বলতে এটুকুই। কিন্তু এর থেকে অনেকগুণ বেশি বাধার সম্মুখীন হতে হবে তাদের। বাংলাদেশকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করে পোশাক রপ্তানি করতে হয়। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন সব সুযোগ-সুবিধা। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক উন্নীত হলে বেশির ভাগ সুবিধা কমে যাবে। সেই ধাক্কা সামাল দিতে এখন থেকেই প্রস্তুত্মত হতে হবে তাদের। ইতিমধ্যে বড় ধরনের ধাক্কা তারা সামলে নিয়েছেন। বর্তমান ধাক্কা সামলানো তাদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

শামীম মনে করেন, যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতির সনদ লাভ করেছে তাই পিছানো যাবে না। কিন্তু হাতে যে সময়টুকু রয়েছে, সেই সময়ের মধ্যে পোশাক খাতের মালিক, শ্রমিক ও সরকার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। অন্যথায় হিতে বিপরীত হতে পারে। মুখথুবড়ে পড়তে পারে অর্থনীতির অগ্রগতি। আর এ জন্য সব থেকে বড় সহায়তা দিতে হবে সরকারকে। তাদেরই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে।

তবে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বন্ধ রয়েছে। তার পরেও সেখানে রপ্তানি করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প অনেক পুরাতন একটি শিল্প। এখানে সবাই অভিজ্ঞ। জিএসপি পস্নাস পেতে যে ২৭টি শর্ত রয়েছে, সেগুলো তারা নিজেরাই পূরণ করতে সক্ষম। তাই সরকারের প্রতি ধরণা দেয়ার যৌক্তিকতা নেই। এখন থেকে পোশাক তারা নিজেদের পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন করতে হবে। পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। কর্ম পরিবেশের উন্নতি করতে হবে। তাহলে তাদের রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পাবে। তাহলে হয়তো ২০২৭ সালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আরও মজবুত অবস্থায় দাঁড়াবে।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্ত্মতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মনে করেন, উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের প্রবেশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মনে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে মনে করেন, এর ফলে তাদের ক্ষতি হবে। রপ্তানিতে যে সুযোগগুলো তারা পাচ্ছে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আশার কথা হচ্ছে, জিএসপি পস্নাস নামক একটি সুবিধা উন্নয়নশীল দেশের ব্যবসায়ীরা পেয়ে থাকে। এটা অর্জন করার জন্য তারা ২০২৭ সাল পর্যন্ত্ম সময় পাবে। যদিও এটা অনেক কঠিন কাজ। এটার জন্য বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হবে তাদের।

সিদ্দিক মনে করেন, যত সমস্যাই হোক না কেন দেশের স্বার্থে নিজেদের স্বার্থকে ত্যাগ করতে হবে। গরিব দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নতির ফলে মর্যাদা বেড়েছে। সেটা ধরে রাখা সবার দায়িত্ব। ব্যবসায়ীরা তাই কিছুটা সমস্যা হলেও দেশের কথা চিন্ত্মা করে এটাকে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। তবে সেক্ষেত্রে সরকারকেও তাদের পাশে চান এই ব্যবসায়ী নেতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here