Home Bangla Recent ইইউতে প্রবৃদ্ধি বেশি যুক্তরাষ্ট্রে কম

ইইউতে প্রবৃদ্ধি বেশি যুক্তরাষ্ট্রে কম

ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) তৈরি পোশাকের রফতানি অন্যান্য বাজারের তুলনায় বেশ ভালো। প্রায় দুই বছর জোটের ২৮ দেশে রফতানি বাড়ছে ধারাবাহিকভাবে। মোট পোশাক রফতানি আয়ের প্রায় ৬৫ ভাগই আসে এ জোট থেকে। অন্যদিকে একক রাষ্ট্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বাজার যুক্তরাষ্ট্রেও রফতানিতে অস্বস্তিকর অবস্থা কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। তবে নতুন বা উদীয়মান বাজার হিসেবে পরিচিত দেশগুলোতে রফতানি আশানুরূপ নয়। এ ধরনের ২৫ দেশ থেকে আয়ের পরিমাণ ১৫ থেকে ১৬ শতাংশের মধ্যেই আটকে আছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ ৯ মাসে খাতভিত্তিক রফতানি আয়ের চিত্রে দেখা যায়, ইইউতে রফতানি বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ। মোট রফতানি হয়েছে ১৪৭৩ কোটি ডলারের পণ্য। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৩১৯ কোটি ডলার। ইইউতে নিট ও ওভেন রফতানিতে খুব বেশি তফাৎ নেই। ভালো রফতানির ফলে মোট রফতানিতে ইইউর অবদান গত বছরের একই সময়ের ৬৩ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, প্রধান বাজার ও উদীয়মান বাজারে পোশাক রফতানিতে বিপরীতমুখী এ অবস্থানের একটা বড় কারণ ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বিনিময়হার। নতুন বাজার শ্রেণির অনেক দেশেই স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী ছিল এ সময়। ফলে এসব দেশের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে অন্যান্য পণ্যের মতো পোশাকের চাহিদাও কিছুটা কমেছে। আবার বড় বাজার জার্মানিসহ ইইউর অনেক দেশে অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে। যুক্তরাষ্ট্রেও কর্মসংস্থান ও ভোগক্ষমতা বাড়ছে। ফলে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি কিছুটা বেড়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মোট রফতানিতে পোশাকের অংশ আরও বেড়ে এখন ৮৪ শতাংশ। প্রায় সব দেশেই যাচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক। তবে এখনও ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রকেই প্রধান বাজার বা প্রচলিত বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৩০ বছর ধরে একক প্রধান বাজার ছিল যুক্তরাষ্ট্র। চলতি অর্থবছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র্রকে টপকে যায় ইইউর দেশ জার্মানি। এ ধারা এখনও অব্যাহত আছে। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে রফতানি হয়েছে ৪২০ কোটি ডলারের পোশাক। এর চেয়ে ২৭ কোটি ডলার কম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ৩৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয় এ সময়। যদিও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় জার্মানিতে রফতানি বেড়েছে আড়াই শতাংশ। রানা প্লাজা ধসের পর আন্তর্জাতিক মানের কর্মপরিবেশ না থাকার অভিযোগে ২০১৩ সালে শুল্ক্কমুক্ত রফতানি সুবিধা বা জিএসপি স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তৈরি পোশাক কখনও এ সুবিধার আওতায় ছিল না তারপরও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভাবমূর্তি সংকট এবং কিছুটা নেতিবাচক প্রচারণায় পোশাকের রফতানি কমে যায়। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমেছে ৫ শতাংশ। পরের বছরের একই সময়ে বেড়েছে ১৫ শতাংশের মতো। এর পর আবার কমতে শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় গত অর্থবছরে রফতানি কম হয়েছে ৯ শতাংশেরও বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রফতানি কমেছে। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে আবার বাড়তে শুরু করে। সব মিলিয়ে গড়ে গত ৯ মাসে রফতানি বেড়েছে ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

অন্যদিকে নুতন বাজার শ্রেণির দেশগুলোতে গত ৯ মাসে রফতানি ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৪৬ কোটি ডলার। এ সময় পোশাকের বিশ্ববাজার থেকে আয় ৯ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২২৮৩ কোটি ডলার। রফতানি হয়েছে ৩৪৬ কোটি ডলারের পোশাক। এতে মোট রফতানিতে নতুন বাজারের অংশ দাঁড়াল ১৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে এ সময়ে এ হার ছিল ১৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। প্রচলিত বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইইউ বিবেচনা করে থাকেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। এর বাইরে গত প্রায় এক দশক ধরে ২৫ দেশকে নতুন বাজার হিসেবে গণ্য করা হয়। এর মধ্যে ১১ দেশকে নতুন বাজার শ্রেণির বড় বাজার হিসেবে ধরা হয়। চীন, জাপান, ভারত, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও তুরস্ক এ শ্রেণির উল্লেখযোগ্য দেশ।

উদ্যোক্তারা মনে করেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় পোশাকের মোট চাহিদা অনুযায়ী আরও বেশি রফতানি বাড়নোর সামর্থ্য রাখেন তারা। নিট পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি ও এমবি গার্মেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিযোগী অন্য দেশের রফতানি আরও বেশি হারে বেড়েছে। দেশটির মোট চাহিদার মাত্র ৬ শতাংশ বাংলাদেশ সরবরাহ করে। প্রধান দুই প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ১৪ শতাংশ ও চীন ৩৩ শতাংশ পোশাক রফতানি করে সেখানে।

তিনি আরও বলেন, নতুন বাজারের মধ্যে রাশিয়ায় উচ্চ শুল্ক্ক, জাপানের মিয়ানমারমুখী হওয়ার কারণে রফতানি খুব একটা আশানুরূপ নয়। অন্যান্য নতুন বাজারে এ ধরনের কিছু না কিছু সমস্যা রয়েছে। ইইউ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইউরোপের অর্থনীতি আগের তুলনায় শক্তিশালী। ইইউর মুদ্রা ইউরোও ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে। ফলে ইউরোর বিপরীতে বেশি ডলার পাওয়া যাচ্ছে। সে বিবেচনায় রফতানি আরও বেশি হওয়ার কথা। তার ধারণা, আগামীতে এ দুই বাজারে রফতানি আরও বাড়বে। তিনি বলেন, হাতে এখন প্রচুর রফতানি আদেশ। নতুন রফতানি আদেশ নিয়েও প্রায় প্রতিদিন আসছেন ক্রেতা প্রতিনিধিরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here