Home Bangla Recent জিএসপি সুবিধা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারিতে ভারত

জিএসপি সুবিধা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারিতে ভারত

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রফতানিতে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকারের সুবিধা ভারতের আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কিনা, তা যাচাই করে দেখবে মার্কিন প্রশাসন। সাম্প্রতিক এক ঘোষণায় ওয়াশিংটন বলেছে, রফতানিতে শূন্য অথবা স্বল্প শুল্কের কোটা ব্যবস্থা জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) পেতে ভারতের সক্ষমতা পর্যালোচনা করা হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভারতের প্রায় ৩ হাজার ৫০০টি পণ্যের বাণিজ্য প্রভাবিত হবে। এছাড়া মুদ্রা বিনিময় নীতিমালা নিয়ে নজরদারিতে রাখা দেশগুলোর কাতারেও ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর ইকোনমিক টাইমস ও এএফপি।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ভারতই সবচেয়ে বেশি জিএসপি সুবিধা ভোগ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের ৫৬০ কোটি ডলার মূল্যমানের সাড়ে তিন হাজারের পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি থাকা দেশগুলোর আমদানিতে নজর দিয়েছে। এরই মধ্যে চীনের ছয় হাজার কোটি ডলার আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক ঘোষণা করেছে দেশটি।

ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ভারতের জিএসপি সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা পর্যালোচনা করবে। জিএসপি সুবিধা পাওয়ার মানদণ্ড রক্ষা নিয়ে উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দুটি পিটিশনও আমলে নেয়া হয়েছে।

দিল্লির একজন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ‘এটি আমাদের ওপর চাপ। প্রতি বছরই এ খড়্গটি আমাদের ওপর ঝুলানো হয়।’ তিনি আরো জানান, ‘সম্ভবত চলতি বছর থেকেই জিএসপি সুবিধা দেয়া বন্ধ করবে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ তারা আমাদের আর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচনা করে না।’

উল্লেখ্য, ভারতের জিএসপি সুবিধা নিয়ে পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়ে পিটিশন দায়ের করেছে মার্কিন দুগ্ধপণ্য শিল্প ও চিকিৎসা সরঞ্জাম শিল্প। সেখানে বলা হয়েছে, ভারতের বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার কারণে এসব খাতে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি প্রভাবিত হচ্ছে। ইউএসটিআর দাবি করছে, ভারত বিস্তৃত পরিসরে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ জেফরি গেরিশ বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে অবাধ ও ন্যায্য বাণিজ্য প্রসারে ট্রাম্প প্রশাসনের মূলনীতি বাস্তবায়নে জিএসপি খুবই শক্তিশালী হাতিয়ার। যেসব দেশ জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে, তারা কংগ্রেসের সক্ষমতা মানদণ্ড অব্যাহতভাবে পূরণ করছে কিনা তা নিশ্চিত করতে প্রেসিডেন্ট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ প্রসঙ্গত গত মাসে জিএসপি ২০২০ সাল পর্যন্ত নবায়নের পক্ষে ভোট দিয়েছে কংগ্রেস।

এদিকে প্রশ্নবিদ্ধ বিদেশী মুদ্রা বিনিময়নীতির জন্য বেশ কয়েকটি দেশকে নজরদারিতে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইস্যুকৃত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালিকাটিতে এবার ভারতকেও যোগ করা হয়েছে।

কংগ্রেসে পাঠানো অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নজরদারি তালিকায় যেসব শীর্ষ বাণিজ্য সহযোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মূলত এসব দেশের মুদ্রা বিনিময় চর্চা আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।’

ভারত ছাড়াও এ তালিকায় চীন, জার্মানি, জাপান, কোরিয়া ও সুইজারল্যান্ড রয়েছে। তালিকাভুক্ত দেশগুলো নিয়ে পরপর দুটি প্রতিবেদন তৈরি করবে যুক্তরাষ্ট্র। ‘নির্ধারিত মানদণ্ডের বিপরীতে দেশগুলোর কোনো উন্নতি হলো কিনা এবং এ অগ্রগতি অস্থায়ী হবে না,’ তা যাচাই করে দেখতেই প্রতিবেদনগুলো তৈরি করা হবে। তবে প্রধান বাণিজ্য সহযোগীরা মুদ্রা নীতিমালায় কারসাজির আশ্রয় নিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত পাঁচটি দেশই তিনটি মানদণ্ডের দুটিই পূরণে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে তালিকায় চীনের নাম থাকার কারণ ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে অসামঞ্জস্যপূর্ণ শেয়ার’।

যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক ৫৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যে শুধু চীনের সঙ্গেই ৩৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ঘাটতি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানিউচিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অন্যায় মুদ্রা বিনিময় চর্চার বিরুদ্ধে নজরদারি ও তা প্রতিরোধে কার্যক্রম অব্যাহত রাখব আমরা। পাশাপাশি বড় ধরনের বাণিজ্যিক অসামঞ্জস্যতা দূর করতে সংস্কার ও নীতিমালা গ্রহণে উৎসাহ দেয়া হবে।’

বাণিজ্যে সুবিধা পেতে কৃত্রিমভাবে মুদ্রার মান নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে— এমন দেশগুলোকে চিহ্নিত করতে কংগ্রেসের সুপারিশ অনুযায়ী প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেক দেশই রফতানি খরচ কমাতে মুদ্রা বিনিময় হার ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে রাখে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারতের ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। দেশটি ‘২০১৭ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে বিদেশী মুদ্রার ক্রয় বাড়িয়ে দিয়েছিল, অথচ সে সময় স্থানীয় মুদ্রা রুপির মানেও ঊর্ধ্বগতি ছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here