Home Bangla Recent পোশাক খাতে ৫ বছরে বিস্ময়কর উন্নতি

পোশাক খাতে ৫ বছরে বিস্ময়কর উন্নতি

নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল

বিশ্বজুড়ে আলোচিত রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টা। সাভারে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ‘রানা প্লাজা’ ধস। বাংলাদেশসহ বিশ্বে তৈরি পোশাক শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মর্মন্তুদ শিল্প দুর্ঘটনা এটি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে নির্মম এই দুর্ঘটনার খবর সে সময় গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় তৈরি পোশাক খাতে বিদেশিদের নানা ধরনের খড়গ নেমে আসে। এ দেশের কারখানাগুলোর অবকাঠামোগত নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের বিষয়টি বিশ্ববাসীর আলোচনার খোরাক জোগায়। এতে চাপে পড়ে সরকার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্প মালিকরা হাজারও সমালোচনা গায়ে মেখেই শোককে শক্তিতে পরিণত করেন। তারা সার্বিক পরিস্থিতি ধৈর্যসহকারে মোকাবেলা করেন। এ দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা পোশাক কারখানায় নিরাপত্তা ও কাজের পরিবেশের সার্বিক সংস্কারের উদ্যোগ নেন। এর মধ্য দিয়ে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের পোশাক খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। বিস্ময়কর উন্নতি ঘটেছে। যা বিশ্বে নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে বাংলাদেশকে রোল মডেলের স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় করুণ মৃত্যু হয় ওই ভবনের পাঁচটি পোশাক কারখানায় কর্মরত এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিকের। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় দুই হাজার ৪৩৮ জন শ্রমিককে। নিখোঁজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় আরও ২৬১ জনকে। সেই মর্মন্তুদ দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকের অনেকে তাদের হাত-পা হারিয়েছেন। অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। নয় তলা ভবনটির তৃতীয় থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত ছিল পোশাক কারখানা। নবম তলা ছিল নির্মাণাধীন। নিচের দুটি তলায় ছিল মার্কেট, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। ঘটনার সময় ভবনের ওই কারখানাগুলোয় কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা যাওয়া সত্ত্বেও কারখানা মালিকরা শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন। যার করুণ পরিণতি হয় মানব সভ্যতার ইতিহাসের এ ট্র্যাজেডি।

এ ঘটনায় বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজারে বড় ধরনের নাড়া দেয়। বন্ধ হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানিতে পাওয়া জিএসপি সুবিধা। যা আজও মিলছে না। অনেক রফতানি অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হয়। এ ছাড়া তৈরি পোশাক খাতে এ ঘটনা ঝাঁকুনির মধ্যে ফেলেছিল বাংলাদেশের শ্রমবাজারকেও। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের পোশাক খাতে এ প্রভূত সংস্কার হয়েছে। ফলে বিশ্ববাসীকে এখন বাংলাদেশ সম্পর্কে আবার ভাবতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে বিশ্ববাসীর এখনকার ভাবনা হচ্ছে সম্পূর্ণ ইতিবাচক এবং প্রশংসনীয়।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরপরই তারা শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশের পোশাক শিল্পকে টেকসই, নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত কর্মপরিবেশ সৃষ্টির সর্বাত্মক উদ্যোগ নেন। এ লক্ষ্যে এ দেশে সংস্কারমূলক তদারকি প্রতিষ্ঠান অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ন্যাশনাল ত্রিপত্র অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করা হয়। ক্রেতা দেশগুলোর শর্তানুযায়ী সাসটেইনেবল কমপ্যাক্ট বাস্তবায়নেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এসব কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিক উন্নতির ফলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এখন অনেক বেশি পরিণত ও নিরাপদ বিবেচিত হচ্ছে। সার্বিক কমপ্লায়েন্স ছাড়া এখন কোনো কারখানাই রফতানি শিল্পের জন্য বিবেচিত হচ্ছে না। কমপ্লায়েন্সে বাংলাদেশ এতটাই উন্নতি করেছে, যেখানে সবুজ শিল্পায়নে বাংলাদেশের অবস্থান নেতৃত্ব সারিতে। তিনি বলেন, লিড সার্টিফাইড ১০টি কারখানার মধ্যে ৭টি কারখানার অবস্থানই বাংলাদেশে। ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল থেকে আমাদের ৬৭টি কারখানা লিড সনদ পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৩টি প্লাটিনাম কারখানা। আরও ২৮০টি কারখানা সনদ পাওয়ার পাইপলাইনে আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here