Home Bangla Recent ভারতে পোশাক রফতানি বেড়ে দ্বিগুণ

ভারতে পোশাক রফতানি বেড়ে দ্বিগুণ

eu, india & china on sri lanka's apparel export radar

ভারতে রফতানি-সম্ভাবনা নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয়। প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকসহ ৬৬টি পণ্যে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধাও রয়েছে সে দেশে। তার পরও ভারতে পোশাক রফতানি তেমন বাড়েনি। তবে সর্বশেষ পরিসংখ্যান আশার ইঙ্গিত দিচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত গেল ৯ মাসে পোশাক রফতানি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। রফতানি বেড়েছে ১১১ শতাংশ। এ আয় ভারতে পোশাক রফতানিতে রেকর্ড।

পোশাক রফতানিতে এ সময়ের প্রবৃদ্ধি যেখানে মাত্র ৯ দশমিক ১১ শতাংশ, সেখানে একক দেশ হিসেবে ভারতে ১১১ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধিতে অনেক খুশি রফতানিকারকরা। বাণিজ্য বিশ্নেষকরা বলছেন, এতটুকুই যথেষ্ট নয়। ভারতে আরও বেশি পরিমাণে পোশাক রফতানির সামর্থ্য রাখে বাংলাদেশ। তারা মনে করেন, পৃথিবীর সব দেশের তুলনায় ভারতে রফতানি বেশি হওয়া উচিত। কারণ পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা লিড টাইম। অর্থাৎ, রফতানি আদেশ পাওয়ার পর ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছানো পর্যন্ত সময় অনেক বেশি লেগে যায়। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে লিড টাইম তিন মাসের মতো। অথচ চাইলে তিন দিনের মধ্যে ভারতে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব।

তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্র অনুযায়ী, গেল ৯ মাসে ভারতীয় বাজারে ২১ কোটি ৮১ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে আলোচ্য সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে নিট (গেঞ্জি জাতীয় পোশাক) এবং ওভেন (শার্ট, প্যান্ট) দুই খাতেই রফতানি বেড়েছে প্রায় সমান। ওভেনের রফতানি বেড়েছে ১১৩ শতাংশ এবং নিটের ১০৪ শতাংশ। ওভেনের রফতানির পরিমাণ ১১ কোটি ২৯ লাখ ডলার আর নিটের ১০ কোটি ৪২ লাখ ডলার।

ভারতীয় বাজারে পোশাক রফতানি বৃদ্ধির পেছনে তিনটি মুখ্য কারণ রয়েছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম রায়হান। সমকালকে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে রাজ্য থেকে রাজ্যে শুল্ক্ক নিয়ে যে জটিলতা ছিল, তা সমন্বয় করা হয়েছে। ফলে এতদিনের রাজ্যভিত্তিক শুল্ক্ক আর নেই। দ্বিতীয়ত, ভারতে রফতানিতে লেনদেন জটিলতা কমে আসায় অনেক নতুন উদ্যোক্তা দেশটির প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। তৃতীয়ত, বড় ব্র্যান্ডগুলো ভারতে নতুন নতুন শোরুম খুলেছে। ফলে সেখানে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। এসব ক্রেতা বাংলাদেশের প্রতিই বেশি আগ্রহী। কারণ, ভারতে পোশাক নেওয়ার ক্ষেত্রে লিড টাইমের বিষয়টি অনেক সুবিধাজনক। তার মতে, ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজার বড় হলেও তারা পোশাক আমদানি করে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের। এ কারণে সম্ভাবনা অনুযায়ী রফতানি বাড়ছে না। তবে চলতি ধারা বজায় থাকলে ভারতে বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের।

ড. সেলিম রায়হানের ব্যাখ্যার সঙ্গে নতুন আরও কয়েকটি কারণ যুক্ত করেছেন বিজিএমইএর সহসভাপতি এসএম মান্নান কচি। সমকালকে তিনি বলেন, পোশাক রফতানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দর বৃদ্ধি। এতে মনুফা বেশি পাচ্ছেন রফতানিকারকরা। কয়েক বছর আগে লিলিফুট নামে ভারতীয় একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিয়ে অর্থ ফেরত দেয়নি। দু’দেশের মধ্যে অনেক দেন-দরবারের পরে কিছু টাকা পাওয়া গেছে। বাকিটা আর পাওয়া যায়নি। এ ঘটনা ভারতে রফতানিতে বড় ধরনের ধাক্কা ছিল উদ্যোক্তাদের জন্য। এখন তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। অনেক উদ্যোক্তা ভারতের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। এ ছাড়া লিড টাইমের সুবিধাটাও কম নয়। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পোশাক খাতের ৪১ পণ্য এবং একই বছরের নভেম্বর থেকে সুপারি ও শাঁসজাতীয় অন্যান্য ফল, টয়লেট বা ফেসিয়াল টিস্যু, আলুসহ ১৫টি পণ্যকে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে ভারত।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, আলোচ্য সময়ে ভারতে মোট রফতানি বেড়েছে ১৫ শতাংশ। রফতানি হয়েছে প্রায় ৬২ কোটি ডলারের বিভিন্ন পণ্য। আগের একই সময়ে রফতানির পরিমাণ ছিল ৫২ কোটি ডলার। মোট রফতানিতে আয়ে ভারতে রফতানির অংশ এখন ২ শতাংশের কিছু বেশি। তৈরি পোশাকের বাইরে ভারতে রফতানিযোগ্য বড় পণ্যের মধ্যে রয়েছে- পাট ও পাটপণ্য, চামড়া ও চামড়া পণ্য, প্লাস্টিক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হোমটেক্সটাইল ইত্যাদি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here