Home Bangla Recent ছুটি না পেয়ে মারাই গেলেন অসুস্থ পোশাককর্মী রাশেদুল

ছুটি না পেয়ে মারাই গেলেন অসুস্থ পোশাককর্মী রাশেদুল

সহকর্মীদের ভাঙচুর, ৫ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

সাভারে একটি তৈরি পোশাক কারখানার ভেতরে অসুস্থ হয়ে এক কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে কারখানাটির কর্মীরা। তারা কারখানার সামনে রাখা বেশ কয়েকটি গাড়ি ও কারখানার প্রধান ফটকও ভাঙচুর করে। গতকাল শনিবার দুপুরে সাভার পৌর এলাকার উলাইল মহল্লায় অবস্থিত প্রাইড গ্রুপের ফ্যাশন নিট কারখানায় কর্মী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া শ্রমিকের নাম মো. রাশেদুল ইসলাম (২৭)। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায়। তিনি পৌর এলাকার কাতলাপুর মহল্লায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থেকে ওই কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। রাশেদুলের তিন বছরের একটি সন্তান রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা।

রাশেদুলের সহকর্মী মাজেদা বেগম জানান, রাশেদুল দুপুরের খাবার খেয়ে মেশিনে এসে কাজ করতে বসলে কিছুক্ষণ পরই তাঁর বুক ও মাথাব্যথাসহ বমি হতে থাকে। এ সময় তাঁকে কারখানার নিজস্ব চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক একটি ব্যথার ওষুধ সেবন করতে দেন। ওই ওষুধ খাওয়ার পরও তাঁর শরীর ঠিক না হওয়ায় তিনি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য কারখানার পিএম আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে ছুটি চান। পর্যায়ক্রমে ফ্লোর ইনচার্জ জুলহাস, এপিএম রুবেলসহ অন্যদের কাছে ছুটি চেয়েও পাননি রাশেদুল। এর কিছুক্ষণ পর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। তখন কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কারখানার কর্মী ওসমান গণি বলেন, ‘রাশেদুল বারবার ছুটি চাওয়ার পরও পিএম তাঁকে ছুটি দেননি। একপর্যায়ে ছুটি না পেয়ে কারখানার ভেতরেই তাঁর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়ার পর তাঁকে বাইরের হাসপাতালে নেওয়া হয়।’

আমেনা বেগম নামে আরেক কর্মী জানান, কারখানার পঞ্চম তলায় কাজ করতেন রাশেদুল। মৃত্যুর বিষয়টি শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা বিকেল ৩টা থেকে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দোষীদের বিচারের দাবিতে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে উভয়মুখী যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ, শিল্প পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। বিচারের আশ্বাস দিয়ে প্রাথমিকভাবে বিকেল ৪টার দিকে কিছুক্ষণের জন্য শ্রমিকদের  রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু শ্রমিক-পুলিশ বৈঠকে বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আবারও মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করে বিচারের আশ্বাস দিয়েও ব্যর্থ হন।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বলছে, কারখানা কর্তৃপক্ষ কেন অসুস্থ হওয়ার পরও রাশেদুলকে ছুটি দিল না। এ ঘটনায় দায়ীদের বরখাস্তসহ বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায় তারা। এ ছাড়া রাশেদুলের তিন বছরের একটি বাচ্চা থাকায় তার ভবিষ্যতের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা এবং রাশেদুলের যাবতীয় পাওনা পরিশোধেরও দাবি জানানো হয়।

শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা মালিকের ছেলে নাহিদ হাসান ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিকভাবে দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা জানান। এ ঘটনায় শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে তাঁর ওপর চড়াও হয় এবং কারখানার সামনে রাখা বেশ কয়েকটি গাড়ি ও কারখানার মূল ফটকে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা রাস্তায় শুয়ে পড়ে। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মালিকপক্ষ মারা যাওয়া শ্রমিকের পরিবারকে আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাত পৌনে ৯টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে।

শিল্প পুলিশের পরিদর্শক মো. হারুন উর রশিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শ্রমিকরা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে তাণ্ডব চালিয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের।

তবে কারখানার কোনো কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here