Home Bangla Recent অ্যাকর্ডের মেয়াদ বাড়ানোর তাগিদ

অ্যাকর্ডের মেয়াদ বাড়ানোর তাগিদ

বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতকে আরো টেকসই ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং আইএলওর সমন্বয়ে গঠিত সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের চতুর্থ সভা গতকাল সোমবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সভায় গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নেওয়া উদ্যোগ ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এ ছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত কারখানা পরিদর্শন জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের চলমান কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়। বিশেষত অ্যাকর্ডের কার্যক্রম পরিচালনার মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

তবে গত কয়েক বছরে শ্রম অধিকার রক্ষায় সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এ লক্ষ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে উপস্থিত ছিল। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের দুটি সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর প্রতিনিধি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতিনিধিরা এ দলে রয়েছেন।

শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকার শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়াকে সহজ করতে সরকার এরই মধ্যে শ্রম আইনে বেশ কিছু সংশোধনের প্রস্তাব এনেছে। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল লেবার কনফারেন্সেও (আইএলসি) ওই সংশোধনীর প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে আইএলসিতে বাংলাদেশ বিষয়ে স্পেশাল প্যারাগ্রাফের নামে অতীতের বছরগুলোর মতো শ্রম অধিকারসংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে।

অন্যদিকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে বর্তমানে যেকোনো কারখানার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের লিখিত স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। এটি আরো সহজ করার জন্য ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন গঠন প্রক্রিয়াও সহজ করা হচ্ছে। এ ইস্যুটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এ প্রক্রিয়া সহজ করার তাগিদ দিয়ে আসছিল। এ ছাড়া ট্রেড ইউনিয়নের বিদেশি অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রেও আইনি ভিত্তি দেওয়া, শ্রমসংক্রান্ত বিরোধ ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ট্রেড ইউনিয়নের আদলে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার দেওয়া, সেখানে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কারখানা পরিদর্শনের বিষয়গুলোও শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের সভায় এসব অগ্রগতি তুলে ধরেছে বাংলাদেশ।

সভায় যোগ দিতে ঢাকা ছাড়ার আগে বিজিএমইএর এক নেতা জানিয়েছিলেন, শ্রম অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের উদ্যোগ নিয়ে সন্তুষ্ট আইএলও। গত আইএলসিতে এর প্রমাণ মিলেছে। সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের আলোচনায়ও আশা করছি এ বিষয়ে তারা সন্তুষ্ট হবে। কিন্তু অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির ইস্যুটিতে ইউরোপ থেকে চাপ আসতে পারে। বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রমের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। সরকার আরো ছয় মাস বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যক্রমের অনুমতি দিয়েছে। এরপর আর সময়সীমা বাড়ানো হবে না বলে এরই মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কারখানার নিরাপত্তা রক্ষায় সরকারের স্বাধীন ও সক্ষম কোনো তদারক সংস্থা এখনো গড়ে না ওঠাকে কারণ হিসেবে দাঁড় করিয়ে কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়াতে চাইছে অ্যাকর্ড।

এর আগে একাধিক সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও বলেছেন, ছয় মাস বাড়ানোর পর অ্যাকর্ডের কার্যক্রমের মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না।

সাসটেইনিবিলিটি কম্প্যাক্টের ৪র্থ পর্যালোচনা সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রদানের সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো উন্নত করে গড়ে তোলা হয়েছে। বিল্ডিং ও ফায়ার সেপটি নিশ্চিত করা হয়েছে। উন্নত ও কর্মবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে করে শিল্প মালিকরা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে কিন্তু তৈরি পোশাকের মুল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে না। বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের মূল্য বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের গার্মেন্টকে টেকসই করার লক্ষ্যে গঠিত হয় সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আইএলও ছাড়াও বাংলাদেশও এতে যুক্ত রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here