Home Bangla Recent তৈরি পোশাকের উপযুক্ত মূল্য দিতে ক্রেতাগোষ্ঠীকে আহ্বান

তৈরি পোশাকের উপযুক্ত মূল্য দিতে ক্রেতাগোষ্ঠীকে আহ্বান

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদার। বিশেষ করে ইইউ এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) ইনিশিয়েটিভের আওতায় বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে বেশ উপকৃত হচ্ছে। এ বাণিজ্য সুবিধার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, তৈরি পোশাক খাতের উন্নতি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের শ্রমিকরা উপকৃত হচ্ছেন। বাংলাদেশ আশা করছে, আগামীতে এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। গতকাল বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে সাসটেইনেবিলিটি কম্প্যাক্টের চতুর্থ পর্যালোচনা সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যদানকালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এসব কথা বলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো উন্নত করে গড়ে তোলা হয়েছে। বিল্ডিং ও ফায়ার সেফটি নিশ্চিত করা হয়েছে। উন্নত ও কর্মবান্ধব পরিবেশও নিশ্চিত করা হয়েছে। এ কাজে শিল্প মালিকরা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু ক্রেতাপক্ষ সে অনুযায়ী তৈরি পোশাকের দাম বাড়াচ্ছে না। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন। সরকার বাংলাদেশের শ্রম আইন সংশোধন করেছে। শ্রমিকরা এখন যেকোনো সময়ের তুলনার বেশি শ্রম অধিকার ভোগ করছেন। রানা প্লাজার পর বাংলাদেশে আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। শ্রমিক ও মালিকরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছেন।

তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, আমরা আশা করি, ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি তৈরি পোশাক আমদানি করবে। আমরা আরো আশা করি, ২০২৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রদান করা হবে। এজন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে। আগামী দিনগুলোয় ক্রেতাগোষ্ঠী বাণিজ্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার রাষ্ট্রদূত এবং আইএলওর প্রতিনিধি বক্তব্য রখেন। তারা বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। বক্তারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার ও শিল্প মালিকদের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশে এখন অনেক গ্রিন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠছে। কাজের পরিবেশ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। উন্নত পরিবেশে শ্রমিকরা কাজ করছেন। সরকার ও কারখানার মালিকদের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, আগামী দিনগুলোতেও বাংলাদেশ সরকার ও শিল্প মালিকরা এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাক খাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ৮ জুলাই বাংলাদেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কর্তৃক সাসটেইনেবিলিটি কম্প্যাক্ট গৃহীত হয়। এর প্রথম পর্যালোচনা সভা ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি ও ২০১৭ সালের ১৮ মে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ব্রাসেলসে চতুর্থ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হলো। সভায় ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আইএলওসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা, উৎপাদনকারী, ক্রেতা, ট্রেড ইউনিয়ন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এ পর্যালোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন। প্রতিনিধি দলটিতে আরো রয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু, বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব আফরোজা খান, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. হাবিবুর রহমান খান, বিকেএমইএর প্রতিনিধি, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। ব্রাসেলসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন।

এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী ইইউর ট্রেড কমিশনার সিসিলিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এ সময় তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের কল্যাণে সরকার ও শিল্প মালিকরা প্রয়োজনীয় সবকিছু করেছে। কারখানার পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ নিবিড়ভাবে কাজ করেছে। সরকারের তত্ত্বাবধায়নে ও শিল্প মালিকদের সহযোগিতায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো এখন কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরিতে পরিণত হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তৈরি পোশাকের মূল্য বাড়ানোর বিষয়ে ইইউ ট্রেড কমিশনারের একান্ত সহযোগিতা কামনা করেন।

ইইউ ট্রেড কমিশনার সিসিলিয়া বাংলাদেশে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, বিল্ডিং ও ফায়ার সেফটি নিশ্চিতকরণ এবং কর্মবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি এ দেশের তৈরি পোশাকের মূল্য বাড়ানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সহযোগিতায় ইইউ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here