শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ৪১টি শিল্পের একটি বেকারি, বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারি। মন্ত্রণালয়ের অধীন নিম্নতম মজুরি বোর্ডের পর্যালোচনায় ১৪ জুলাই এ শিল্পের সর্বনিম্ন মজুরি দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যদিকে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি মাসিক ৫ হাজার ৩০০ টাকা। এ হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাতটির মজুরিও বেকারি, বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারি শ্রমিকদের চেয়ে কম। শুধু বেকারি নয়, পোশাক খাতের এ মজুরি ৪১টি শিল্পের কম মজুরির মধ্যে অন্যতম।
বোর্ডের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৪১টির মধ্যে মোট ১২টি শিল্প আছে, যেগুলোর নিম্নতম মজুরি পোশাক খাতের চেয়ে বেশি। এ শিল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— অয়েল মিলস অ্যান্ড ভেজিটেবল প্রডাক্টস, ট্যানারি শিল্প, রাইস মিল, নির্মাণ ও কাঠ, কোল্ড স্টোরেজ, টি প্যাকেটিং ও জাহাজ ভাঙা শিল্প।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমদ বণিক বার্তাকে বলেন, নিম্নতম মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে মজুরির একটি মানদণ্ড তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সিদ্ধান্তগুলো বেশির ভাগই হচ্ছে রাজনৈতিক। যেহেতু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, কাজেই যেখানে চাপ বেশি থাকে, সেখানে মালিক সমিতি শক্তিশালী। আর যেখানে মালিকরা শক্তিশালী নয়, সে খাতে মজুরির হার কিছুটা যৌক্তিক হয়।
দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পঘন খাত পোশাক শিল্পে ২০১০ সালে নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় মাসিক ৩ হাজার ৩০০ টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মাসিক নিম্নতম মজুরি বাড়িয়ে করা হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকা। এ হারেই এখনো নিম্নতম মজুরি পাচ্ছেন পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা।
চলতি বছর নতুন কাঠামো পর্যালোচনার লক্ষ্যে বোর্ড ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত তিনটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ তৃতীয় সভায় শ্রমিক ও মালিক দুই পক্ষই মজুরি প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। শ্রমিকপক্ষ ১২ হাজার ২০ টাকা দাবি করলেও মালিকপক্ষের প্রস্তাবনা ৬ হাজার ৩৬০ টাকা। এক্ষেত্রে তাদের মূল বিবেচনা ছিল গত চার বছরের মূল্যস্ফীতি।
অন্যান্য অনেক খাতের তুলনায় পোশাক শিল্পের এ মজুরি যৌক্তিক বলে দাবি এ শিল্পের মালিকদের। তাদের মতে, দেশের অন্যান্য শ্রমঘন শিল্পের সঙ্গে পোশাক শিল্পের তুলনাও সমীচীন নয়। গত তিন দশকে পোশাক শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মনসুর আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, পোশাক খাতে শিশুশ্রম নেই। কাজের ঝুঁকিও অন্যান্য খাতের চেয়ে কম। এ খাতের কারখানায় সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকেন। রি-রোলিং মিলে শ্রমিকদের সার্বক্ষণিক ঘাম ঝরে। আমাদের খাতে শ্রমিকের ঘাম ঝরে না, শ্রমিকরা পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণ করতে পারছেন। এ ধরনের অনেক কিছু বিবেচনায় পোশাক শ্রমিকের মজুরি যৌক্তিক। এছাড়া গত তিন দশকে পোশাক শ্রমিকের মজুরি যে হারে বেড়েছে, অন্য কোনো খাতে বাড়েনি।
মজুরি পর্যালোচনার ক্ষেত্রে মজুরি বোর্ডের বিবেচনায় থাকা বিষয়গুলোর মধ্যে আছে শ্রমিকদের জীবনযাপন ব্যয় ও মান। উৎপাদন খরচ, উৎপাদনশীলতা, উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য, মূল্যস্ফীতি, কাজের ধরন, ঝুঁকি ও মান, ব্যবসায়িক সামর্থ্য, দেশের ও সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থাও এক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়। এছাড়া মজুরি নির্ধারণকালে সংশ্লিষ্ট খাতের কারখানা বা উৎপাদনক্ষেত্র সরজমিন পরিদর্শন করেন বোর্ড সদস্যারা।
নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় শিল্প রয়েছে মোট ৪১টি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম টাইপ ফাউন্ড্রি, পেট্রল পাম্প, দর্জি কারখানা, আয়ুর্বেদিক কারখানা, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, আয়রন ফাউন্ড্রি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, টি গার্ডেন, গ্লাস অ্যান্ড সিলিকেটস, প্রিন্টিং প্রেস, রি-রোলিং মিলস, হোমিওপ্যাথ কারখানা, কটন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি, ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রি, সল্ট ক্রাশিং, অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড এনামেল ইন্ডাস্ট্রি, রাইস মিল, প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি, ব্যক্তিমালিকানাধীন পাটকল, রাবার ইন্ডাস্ট্রি ও জুতা কারখানা।