কারখানায় কর্মপরিবেশের দুর্বলতা এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে অনেক মাশুল দিতে হয়েছে পোশাক খাতকে। শ্রমিক অধিকারের বিষয়েও অনেক সমালোচনা আছে। এ দুই ইস্যুকে কেন্দ্র করেই প্রায় পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারভিত্তিক বাজার সুবিধা বা জিএসপি স্থগিত রয়েছে। রফতানি আদেশ দেওয়ার আগে এ বিষয়গুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে থাকেন ক্রেতারা। এ কারণে ছোট এবং মাঝারি মানের অনেক কারখানায় রফতানি আদেশ বলতে গেলে নেই। এত কিছুর পরও কমপ্লায়েন্স ইস্যুকে আমলে নিচ্ছে না অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ।
এখনও ২ শতাংশ কারখানা সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামো অনুসরণ করে না। সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও মজুরি নিয়মিত নয়- এমন কারখানার সংখ্যা ৩ শতাংশ। ২৭ শতাংশ কারখানায় পার্টিসিপেশন বা অংশগ্রহণ কমিটি নেই। এমনকি ৩৬ শতাংশ কারখানার ভবনের কাঠামোতে ত্রুটি পাওয়া গেছে। ৩০ শতাংশ কারখানায় বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কোনো ব্যবস্থা নেই। অগ্নি প্রতিরোধ এবং নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেই ২৬ শতাংশ কারখানায়। পোশাক খাতে কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) এক জরিপ প্রতিবেদনে এরকম ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এবং সংগঠনের সদস্য নয় এমন কারখানার ওপরও জরিপ চালানো হয়। তবে প্রতিবেদন বিশ্নেষণে দেখা যায়, পোশাক খাতের এ দুই সংগঠনের কোনোটির সদস্য নয়- এমন কারখানার পরিস্থিতি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কারখানার মধ্যে ৫৫ শতাংশের ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি আছে। ৩৬ শতাংশ কারখানায় অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ত্রুটি আছে। বৈদ্যুতিক ঝুঁকি আছে ২৩ শতাংশ কারখানায়।
এসব কারখানার তুলনায় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য কারখানার অবস্থা মোটামুটি ভালো। তারপরও জরিপে বিজিএমইএর সদস্য ২৯ শতাংশ কারখানায় ভবন-সংক্রান্ত ত্রুটি পাওয়া গেছে। বিকেএমইএর সদস্য কারখানার মধ্যে এ হার ২৯ শতাংশ। অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা চিত্রের হারও প্রায় একই রকম। এ সূচকে বিজিএমইএর ১১ শতাংশ এবং বিকেএমইএর ৮ শতাংশ কারখানায় ত্রুটি পাওয়া গেছে। বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনায় এ হার ২৯ এবং ২০ শতাংশ।
জানতে চাইলে ডিআইএফইর মহাপরিদর্শক সামসুজ্জামান ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নিনিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়গুলো আসলেই উদ্বেগের। জাতীয় উদ্যোগের অধীনে (এনএ) থাকা কারখানার মধ্যেই ত্রুটি বেশি পাওয়া গেছে। এসব কারখানাকে সতর্ক করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যেসব কারখানা ত্রুটি সংশোধন করবে না, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। তিনি জানান, বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ কারখানার অবস্থা এতটা খারাপ নয়। আগের তুলনায় পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে। উৎপাদনে থাকা সব কারখানাই পর্যায়ক্রমে কমপ্লায়েন্সের আওতায় আসবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিভিন্ন সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এ মুহূর্তে পোশাক খাতে মোট কত কারখানা রয়েছে, তার সঠিক হিসাব কারও কাছে নেই। বিজিএমইএতে নিবন্ধিত কারখানার সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার ২২১টি। এর মধ্যে নিয়মতি কাঁচামাল আমদানির অনুমতি ইউডি (ইটিলাইজেশন ডিক্লারেশন) নেয় আড়াই হাজারের মতো কারখানা। অর্থাৎ এই আড়াই হাজার কারখানাই উৎপাদনে রয়েছে। অন্যদিকে বিকেএমইএর কারখানার সংখ্যা দুই হাজার। এর মধ্যে এক হাজার ২০০ কারখানা নিয়মিত ইউডি নেয়। আবার বেশ কিছু কারখানা দুই সংগঠনেরই সদস্য। দুই ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানে এসব কারখানার সংস্কার কাজ চলছে। এই দুই জোটের বাইরে থাকা ৭৭৪ কারখানার ত্রুটি সংশোধন করার কাজ করছে ডিআইএফই। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এতে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে।
ডিআইএফইর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না ১০ শতাংশ কারখানায়। এ তালিকায় বিজিএমইএর কারখানার সংখ্যা ১২ শতাংশ। বিকেএমইএর এ হার ৬ শতাংশ। নিয়োগপত্র না থাকলে শ্রমিকরা আইনত কোনো সুবিধা দাবি করতে পারেন না। এ কারণে শ্রম আইনে নিয়োগপত্র দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া ওভার টাইম দেওয়া হয় না ৩ শতাংশ কারখানায়। অবশ্য জরিপে কোনো কারখানায় শিশু শ্রমিক নিয়োগের অনিয়ম পাওয়া যায়নি।