Home Bangla Recent চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে ৪২%

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে ৪২%

বাংলাদেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে এ খাতে এফডিআই স্টক বা পুঞ্জীভূত বিদেশী বিনিয়োগের প্রবাহ বেড়েছে ৪২ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে তাইওয়ান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও নেদারল্যান্ডস থেকে।

ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো যে অর্থ বাংলাদেশে আনে, জরিপের ভিত্তিতে বিদেশী বিনিয়োগ প্রবাহের পরিসংখ্যান ও গতিপ্রকৃতি-সংবলিত তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিট নিজস্ব মূলধন বা ইকুইটি, আয়ের পুনর্বিনিয়োগ বা রিইনভেস্টেড আর্নিং ও আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ বা ইন্ট্রা-কোম্পানি লোন— এ তিন ভাগে এফডিআই প্রবাহ হিসাব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির খাতভিত্তিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে বিদেশী বিনিয়োগের প্রবাহ বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্রমতে, ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে পুঞ্জীভূত বিদেশী বিনিয়োগ প্রবাহ ছিল ১৮ কোটি ৫৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার। ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত এ প্রবাহের পরিমাণ ছিল ২৬ কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ প্রবাহ বেড়েছে ৪২ দশমিক ৮ শতাংশ।

প্রস্তুতকারকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের বৈশ্বিক বাজার ২৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের। এ শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অপার। এশীয় অন্যান্য দেশের তুলনায় পণ্যের মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। এসব কারণেই প্রতিনিয়ত এ খাতে বিদেশীদের বিনিয়োগ আগ্রহ বাড়ছে। তবে পরিবেশ ও কর্মক্ষেত্র-সংক্রান্ত বিষয়গুলোয় ঘাটতি থাকায় এখন পর্যন্ত রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোতেই (ইপিজেড) এ খাতের বিদেশী বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এফডিআই পরিসংখ্যানে উল্লিখিত এ প্রবৃদ্ধিও ইপিজেডে স্থাপিত কারখানাগুলোর হাত ধরেই হয়েছে বলে তাদের ধারণা।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএলএফইএ) সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী এম আবু তাহের বলেন, বর্তমানে দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আগ্রহী বিদেশীরা নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বিনিয়োগের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এলএফএমইএবি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল মোনেম ভুঁইয়া বলেন, পাদুকা শিল্পে এখন বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন। তবে এ ধরনের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা দেখা যায় না। এ খাতে উদ্যোক্তাদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় ক্রেতারা আসেন। কিন্তু অন্য খাতগুলোয় ক্রেতারা বাংলাদেশে এসে বসে থাকেন। পাদুকা শিল্পে প্রযুক্তিগতসহ সব ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসা দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে এক বছরে পুঞ্জীভূত বিদেশী বিনিয়োগ প্রবাহ সবচেয়ে বেশি এসেছে তাইওয়ান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও নেদারল্যান্ডস থেকে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশগুলো থেকে আসা পুঞ্জীভূত বিদেশী বিনিয়োগ প্রবাহ ছিল যথাক্রমে ৭ কোটি ১৫ লাখ ৮০ হাজার, ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার, ৫ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার ও ৪ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ খাতে আরো অনেক বিদেশী বিনিয়োগ আসার সুযোগ রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন সংযোগ শিল্প বা ব্যাকওয়ার্ড অ্যান্ড ফরোয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি। চীন ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়াসহ আরো অনেক দেশে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ কম আসছে। এখনো চীন থেকে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আকর্ষণের সুযোগ রয়েছে। বিদেশী অনেক ব্যবসায়ী যৌথ বিনিয়োগের উদ্যোগও নিয়েছে। তবে বড় ধরনের যৌথ বা শতভাগ বিদেশী বিনিয়োগ এখনো আসেনি। বাংলাদেশের চামড়া ও পাদুকা খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে, এমন দেশের তালিকায় রয়েছে ভারত, জাপান, তাইওয়ান, কোরিয়া ও চীন। তবে কারখানার শেয়ার কিনে বা নতুন কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য কোনো বিনিয়োগ এখনো আসেনি।

এলএফএমইএবি সূত্রে জানা গেছে, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা খাতে অসংখ্য দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ থাকলেও বিদেশী বিনিয়োগ খুবই নগণ্য। এলএফএমইএবির দেড় শতাধিক সদস্যের মধ্যে ১২টি শিল্প-ইউনিট রয়েছে, যারা যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্প স্থাপন করেছে। আর চারটি ইউনিট শতভাগ বিদেশী বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সংগঠনটির সভাপতি মো. সায়ফুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় বাংলাদেশের চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কম। গত বছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করেছিল সরকার। নগদ প্রণোদনাসহ নানা রকম নীতিসুবিধাও ঘোষণা করা হয়েছে। পোশাক খাতের বিকল্প ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত হিসেবে এ খাতকে আরো সম্প্রসারণের সম্ভাবনা উন্মোচন হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here