Home Bangla Recent ডেনিম রফতানিতে অশনি সংকেত

ডেনিম রফতানিতে অশনি সংকেত

কাঁচামাল পাচারের কারণে ডেনিম পণ্য রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, চলতি পঞ্জিকা বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ডেনিম রফতানিতে বেড়েছে ৩ শতাংশেরও কম। কিন্তু গত বছর একই সময়ে এ হার ছিল ১০ শতাংশ।

কয়েক বছর ধরে ডেনিম রফতানি বেশ ভালোই বাড়ছিল। ২৮ জাতির জোট ইইউতে বিভিন্ন ধরনের ডেনিম পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছিল। কিন্তু ডেনিমের কাঁচামাল পাচার ও রফতানি ঠেকাতে না পারলে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা। গোটা পোশাকপণ্য রফতানিতে ডেনিমের অবদানই এখন মুখ্য। রফতানিতে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে লিড টাইম (রফতানি আদেশ পাওয়ার পর ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছানোর সময়)। স্থানীয় কাঁচামালে দেশেই ডেনিম উৎপাদিত হওয়ায় অন্য পণ্যের তুলনায় কম সময়ের ব্যবধানে ক্রেতার কাছে ডেনিম পণ্য পৌঁছানো যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ডেনিমের উৎপাদন এবং রফতানি এখন সংকটে পড়েছে। দেশে উৎপাদিত কাঁচামাল পাচার হয়ে যাচ্ছে। ডেনিম তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে না। কাঁচামাল প্রক্রিয়া করার অন্তত ৫০টি কারখানা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে মিলগুলো সামর্থ্য অনুযাযী ডেনিম উৎপাদন করতে পারছে না। এতে পোশাকের রফতানি আয় ব্যাপক কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা।

ডেনিমের কাঁচামাল হচ্ছে ড্রপিং-১, ড্রপিং-২, ফ্লাট স্ট্রিপ, নিউমাফিল, কম্বার নয়েল ও হার্ড অয়েস্ট। স্পিনিং মিলে তুলা প্রক্রিয়া করার পর এগুলো তৈরি হয়। মূলত কারখানার অব্যবহূত জুট কাপড় রিসাইক্লিং বা পুনর্ব্যবহার এবং অন্যান্য ফাইবার মিশিয়ে ডেনিমের উপযোগী মোটা সুতা উৎপাদন করা হয়। সরাসরি ভালো মানের তুলা থেকেও কিছু কারখানা ডেনিমের সুতা উৎপাদন করে থাকে।

দেশে বর্তমানে ২৬টি ডেনিম মিল রয়েছে। এসব মিলে বছরে উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ কোটি মিটার। এ পরিমাণ ডেনিম উৎপাদনে ২০ কোটি কেজি সুতার প্রয়োজন হয়। বছরে ৭০ লাখ বেল তুলা আমদানি করা হয়। এ তুলা থেকে ১৫ কোটি কেজি ডেনিমের কাঁচামাল পাওয়া যায়। চাহিদার বাকি ডেনিম কাপড় ভারত, চীন, পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়। দেশে বর্তমানে ৫৩১টি ডেনিম পোশাক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় বছরে চাহিদা দেশে উৎপাদিত মোট ডেনিমের দ্বিগুণেরও বেশি।

ডেনিমের কাঁচামাল পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বস্ত্র কল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বরাবরে লেখা চিঠিতে বিটিএমএ সভাপতি এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তপন চৌধুরী বলেছেন, ডেনিম পোশাক উৎপাদনে যে পরিমাণ চাহিদা তার তুলনায় ডেনিম কাপড়ের ঘাটতি রয়েছে। তারপরও কোনো রকম সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থা না থাকায় ডেনিম উৎপাদনের কাঁচামাল পাচার হয়ে যাচ্ছে। দূরদর্শিতার অভাবেও বৈধপথে কিছু কাঁচামাল রফতানি হচ্ছে। এ কারণে অনেক মিল ডেনিম উৎপাদন করতে পারছে না বলে বিটিএমএর কাছে অভিযোগ এসেছে। ডেনিমের অবদান এবং রফতানিতে বিশাল সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে খাতটির সুরক্ষায় এখনই সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তপন চৌধুরী। চিঠিতে বস্ত্র খাতের যে কোনো ওয়েস্ট (বর্জ্য) জাতীয় পণ্য রফতানিতে যথার্থতা নিশ্চিত করতে বিটিএমএ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শুল্ক্ক কর্তৃপক্ষ ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সমন্বিত ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার অনুরোধ করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিটিএমএর চিঠিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ডেনিমের কাঁচামাল কীভাবে পাচার হচ্ছে, বৈধ পথে কাঁচামাল রফতানি হয় কি না- এ বিষয়ে খোঁজ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর বিটিএমএর কাছে ডেনিমের কাঁচামালের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে ইপিবি। ফিরতি চিঠিতে ডেনিমের কাঁচামালের স্থানীয় জোগান এবং চাহিদার তথ্যসহ আনুষঙ্গিক তথ্য দেওয়া হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ইপিবির নীতি উন্নয়ন বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ডেনিমের কাঁচামাল রফতানি নিরুৎসাহিত করার পদক্ষেপ আগে থেকেই নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম অনুযায়ী কোনো পণ্য সরাসরি রফতানি নিষিদ্ধ করা যায় না। তবে এ কারণে উচ্চ হারে কোনো কোনো পণ্যে টনপ্রতি ৬০০ ডলারসহ বিভিন্ন হারে রফতানি শুল্ক্কারোপ করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা জানান, সার্বিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে শিগগিরই আবার বসবেন তারা।

ডেনিমের কাঁচামাল কীভাবে পাচার হচ্ছে, এর প্রভাব কী- জানতে চাইলে বিটিএমএর সহসভাপতি এবং মেট্রো স্পিনিং মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী খোকন সমকালকে বলেন, বৈধ পথে তো কিছু কাঁচামাল রফতানি হয়ই। তার চেয়ে বেশি হচ্ছে পাচার। মূলত ভারতেই পাচার হচ্ছে। সে দেশের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ থেকে কাঁচামাল নিয়ে সুতা এবং কাপড় বানিয়ে আবার এ দেশে পাঠায়। নিজেদের পণ্যই পরে বেশি দামে আমদানি করতে হচ্ছে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের। একদিকে ডেনিমের কাঁচামাল তৈরি কারখানাগুলো বন্ধ হচ্ছে, আবার বেশি দামে নিজের পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। এই দুই দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, এই পাচার জালে পড়ে শুধু ডেনিম খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা-ই নয়। টেরিটাওয়েল, টুয়িল, খাদি, ক্যানভাসসহ সব খাতই সংকটে পড়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here