Home Bangla Recent পোশাক শিল্পে অসন্তোষের আশঙ্কা সতর্ক থাকার নির্দেশ

পোশাক শিল্পে অসন্তোষের আশঙ্কা সতর্ক থাকার নির্দেশ

সাম্প্রতিক সময়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সারা দেশ অচল হয়ে পড়ে। অচলাবস্থা থেমে গেলেও আবারো দেশ অচল করার ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে কোরবানি ঈদের আগে তৈরি পোশাক শিল্পেও অসন্তোষ দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা করছে এ খাত সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা ও শ্রম মন্ত্রণালয়। এ জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বেতন-বোনাস দেয়াকে কেন্দ্র করে বহিরাগতরা এই অসন্তোষ তৈরি করতে পারে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্কতা অবলম্বন করেছে শ্রম মন্ত্রণালয় ও পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ।

বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  জানা গেছে, সচিবালয়ে ৯ই আগস্ট শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক কোর কমিটির বৈঠকে ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদান ও সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী, বিকেএমইএ, ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ অংশ নেয়। বৈঠকে এ মাসের ১৬ তারিখে শ্রমিকদের বোনাস ও ১৯ তারিখে বেতন দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে উপস্থিত এক উদ্যোক্তা বলেন, এই মুহূর্তে গোয়েন্দারা মনে করছেন ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে বহিরাগতরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তবে এসব জটিলতা এড়ানোর জন্য সতর্কতামূলক সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

সভায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু জানান, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে জানে ও পারে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঈদের আগে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস অবশ্যই দিতে হবে। এ বিষয়ে কেউ ঝামেলা করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আগের ঈদগুলোতেও শিল্প পুলিশে ভালোভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে বলে কোনো ঝামেলা তৈরি হয়নি। এবারও ঝামেলা এড়াতে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিট পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ জানিয়েছে, ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাসসহ সার্বিক নির্দেশনা এরই মধ্যে জানানো হয়েছে। নিট শিল্পের উদ্যোক্তা, শিল্প শ্রমিক, পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে যেন সঙ্গে সঙ্গে মোকাবিলা করে। এ খাতে বহিরাগত শ্রমিক নামধারীরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়গুলো কঠিনভাবে বিকেএমইএ মনিটরিং করছে।

ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট ইউনিট জানিয়েছে, ঈদের আগে বিভিন্ন কারখানা তাদের কাঠামো অনুযায়ী বেতন-বোনাস দেয়। এটি নিয়েও অসন্তোষ তৈরি হয়। এসব কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকদের এলাকাভিত্তিক ছুটি দেয়ার সুপারিশ করেছে তারা। ঈদকে কেন্দ্র করে তৈরি পোশাক খাতে সম্ভাব্য যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গার্মেন্ট মালিকদের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, ঈদের আগে বেতন-বোনাসের দাবিতে ৫০০ থেকে ১ হাজার পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনা। শিল্প পুলিশের হিসাব মতে, এসব অঞ্চলে সব খাত মিলিয়ে মোট ৭ হাজার ৭৮টি শিল্প-কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ২৮৮টি পোশাক কারখানা। বাকি ৩ হাজার ৭৯০টি অন্য খাতের।

শিল্প পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, শিল্প অধ্যুষিত সব এলাকায়ই কম-বেশি অসন্তোষপ্রবণ কারখানা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ রয়েছে শিল্প পুলিশ-১ বা আশুলিয়ার কারখানাগুলো ঘিরে। শিল্প পুলিশের দাবি, এ এলাকায় বহিরাগত শ্রমিক নেতারা আছেন, যারা বিভিন্ন সময় সমস্যার সৃষ্টি করেন। এ কারণেই আশুলিয়া এলাকা ঘিরে বিশেষ নজরদারি রয়েছে শিল্প পুলিশের।

শিল্প পুলিশের সূত্র মতে, আশুলিয়ায় অসন্তোষ প্রবণ কারখানা রয়েছে ৯৭টি। এর মধ্যে বিজিএমইএ’র সদস্য ৩১টি, বিকেএমইএ’র ১৭টি, বিটিএমএ’র ২টি ও অন্য খাতের ৪৭টি। এসব কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৩২৫। শিল্প পুলিশ-২ গাজীপুরে অসন্তোষপ্রবণ কারখানা রয়েছে ১৩৩টি। তবে ঈদের আগেই বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ’র অন্তর্ভুক্ত সব কারখানার শ্রমিকের বেতন-বোনাস পরিশোধে বিজিএমইএ’র ১৫টি টিম দিন-রাত কাজ করছে বলে জানা গেছে।

শিল্প পুলিশ-৩ চট্টগ্রামে অসন্তোষপ্রবণ কারখানার সংখ্যা ৯২। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্য ৪৩টি, বিকেএমইএ’র ৪টি ও বিটিএমএ’র সদস্য ৭টি। বেপজার আওতায় ইপিজেডের কারখানা রয়েছে ১৪টি। এছাড়া অন্যান্য খাতের কারখানার সংখ্যা ২৪। বেতন- বোনাস ঘিরে অসন্তোষের আশঙ্কা থাকা এসব কারখানায় কর্মরত রয়েছেন মোট ৪১ হাজার ৬৭৯ শ্রমিক।

শিল্প পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জে অসন্তোষপ্রবণ কারখানা ৮৫টি। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্য ১১টি। এছাড়া বিকেএমইএ’র সদস্য কারখানা রয়েছে ৪৬, বিটিএমএ’র ৭ ও অন্যান্য খাতের কারখানা ২১টি। এসব কারখানায় কাজ করছেন মোট ৪০ হাজার ৭২৫ শ্রমিক।

শিল্প পুলিশ-৫ ময়মনসিংহে অসন্তোষপ্রবণ কারখানা রয়েছে ২৪টি। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্য ১৪টি, বিটিএমএ’র সদস্য ৪টি এবং অন্যান্য খাতের কারখানা ৬টি। এছাড়া শিল্প পুলিশ-৬ খুলনায় অসন্তোষপ্রবণ কারখানা রয়েছে ১১টি। সব কারখানাই পোশাক খাতের বাইরের। এ অসন্তোষপ্রবণ কারখানাগুলোয় শ্রমিক রয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ১৮৩ জন।

শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা মনে করেন, গত কয়েক বছরে ঈদের সময় বড় কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। আশা  করা যাচ্ছে, এ বছরও কোনো সমস্যা হবে না। সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে এমন কারখানাগুলোর সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও শ্রম অসন্তোষের কারণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। সব পক্ষই ঈদের আগে যেন কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে।

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র তথ্যমতে, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঈদের আগে পরিশোধ করার বিষয়ে তৎপরতা অব্যাহত আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here