Home Bangla Recent প্রতিবছর সরবরাহ বাড়লেও কমছে চামড়া রপ্তানি

প্রতিবছর সরবরাহ বাড়লেও কমছে চামড়া রপ্তানি

প্রতিবছর চামড়ার সরবরাহ বাড়ছে। তবে এ পণ্যের রপ্তানি আয় কমে যাচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গেল বছর তা কমে ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে নেমে আছে। আর চলতি অর্থবছরে রপ্তানি কমে ১০০ কোটির নিচে নেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে প্রতি বছরই দেশে চামড়ার সরবরাহ ৫ থেকে ৭ শতাংশ করে বাড়ছে। সরবরাহ আর রপ্তানির বিপরীতমুখী এ চরিত্রের কারণে বাড়ছে অবিক্রিত চামড়ার পরিমাণ। যার প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারে চামড়ার দামে। মূলত কোরবানী ঈদের সময় দেশের মোট চামড়ার সিংহভাগ আসে। এবছর পানির দরে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে কোরবানীদাতাদের।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চামড়ার সরবরাহ এবং রপ্তানির মধ্যে ভারসম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। যে কারণে প্রতিবছর দেশের বাজারে চামড়ার দাম কমছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে-দেশের ট্যানারিগুলোর সক্ষমতা নিয়েও।

এ অবস্থায় উদ্বৃত্ত লবনযুক্ত কাঁচা চামড়ার ও প্রাথমিক প্রক্রিয়া করা ওয়েট ব্লু রপ্তানির অনুমোদন দিলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে সরকার এবিষয়ে অনুমোদন দেবে না বলে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সম্প্রতি তিনি বলেন, শিল্প রক্ষার কথা বিবেচনা করে কাঁচা চামড়া রপ্তানির কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই। কাঁচা চামড়া রপ্তানি করলে দেশের চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চামড়া বাংলাদেশের পাঁচটি রপ্তানি খাতের মধ্যে অন্যতম। সম্ভাবনাময় এ খাত যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত  না হয় সেজন্য সরকার সতর্ক।

নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশবান্ধব শিল্প নগরী গড়ে তুলতে না পারলে এ খাত সামনে এগুতে পারবে না। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার সক্ষমতা থাকলেও রপ্তানি করার সক্ষমতা তাদের নেই। এদিকে গেল কোরবানীর ঈদে কাঁচা চামড়ার দাম কম থাকায় তা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)। তারা বলছে, আমাদের দেশের চামড়ার মান ভাল। এজন্য ভারত বাংলাদেশের চামড়া নিতে চায়। চামড়া যাতে পাচার না হতে পারে সেজন্য আগামী একমাস বিজিবি সদস্যদের সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বিটিএ।

বিটিএ চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, গতবছর যেসব কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তারা এখনো উত্পাদনে যেতে পারেনি। আর ওই সময় আস্থা সঙ্কটের কারণে দীর্ঘদিনের বায়ার (ক্রেতা) চলে গিয়েছে। কমপ্লায়েন্সের ইস্যুতে আমরা সেসব বায়ারকে আনতে পারছি না। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে এক থেকে এক দশমিক ৭৫ শতাংশ দাম কমেছে। এতে আমরা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছি না। চায়না প্রচুর রপ্তানি আদেশ বাতিল করেছে। গত বছরের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ চামড়া মজুদ আছে। এবছরও বিক্রির কোন নিশ্চয়তা নেই।

বিটিএর চেয়ারম্যান অভিযোগ তোলেন প্রতিবছর যে ব্যাংক ঋণ দেওয়া হয় তা পর্যাপ্ত নয়। তিনি বলেন, এবছর ব্যাংকগুলো মাত্র ৪২টি ট্যানারিকে ব্যাংক ঋণ দিয়েছে। অন্যরা উত্পাদনে যেতে না পারায় ও রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে তা দেওয়া হয়নি। বর্তমানে দেশের চামড়ার বাজার দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) তথ্যে দেখা গেছে, সার্বিকভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমলেও বেড়েছে চামড়ার তৈরি জুতা ও সেন্ডেল রপ্তানি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়ার জুতা ও সেন্ডেল রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৫৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অন্যদিকে গেল অর্থবছরে এ আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া রপ্তানির করে আয় হয়েছিল ২৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার। অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ আয় কমে দাঁড়িয়েছিল ১৮ কোটি ৩১ লাখ ডলার। অর্থাত্ আগের অর্থবছরের চেয়ে আয় ২১ দশমিক ২৮ শতাংশ কম হয়। আর চামড়াজাত অন্যান পণ্য রপ্তানি করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয় ৪৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। গেল অর্থবছরে এ খাতে আয় ২৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমে যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৩৩ কোটি ৬৮ লাখ ডলার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here