Home Bangla Recent শেষ দিনের অপেক্ষায় দুই সহস্রাধিক কারখানার শ্রমিক

শেষ দিনের অপেক্ষায় দুই সহস্রাধিক কারখানার শ্রমিক

ঈদের আগে ১৬ আগস্টের মধ্যে শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শিল্পমালিকরা। বকেয়া বেতনের পাশাপাশি ১৯ আগস্টের মধ্যে চলতি মাসের বেতনের আংশিক অগ্রিম দেয়ার ঘোষণাও এসেছিল। যদিও এ প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি রাখতে পারেনি মালিকপক্ষ। গতকাল পর্যন্ত বেতন-বোনাস হাতে পাননি সব খাতের দুই সহস্রাধিক কারখানার শ্রমিক। বেতন-বোনাসের জন্য তাই শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের।

দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায়িত্বে নিয়োজিত সূত্রগুলো জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত জুলাই মাসের বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধ হয়নি অনেক কারখানায়। অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষের ব্যাংক থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া বোনাস পরিশোধ হয়ে গেলে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত শ্রমিকদের ধরে রাখা যাবে না, এমন আশঙ্কা থেকেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অধিকাংশ কারখানায় বোনাস পরিশোধ সম্পন্ন হয়নি।

১৭ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত বড় ধরনের অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে একটি। এটি ঘটেছে গাজীপুরে পোশাক খাতের এলিগেন্ট গ্রুপের কারখানায়। এ কারখানায় অগ্রিম বেতনের দাবিতে শুক্রবার কারখানা ভাংচুর করে শ্রমিকরা।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অধীনস্থ কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা ভাংচুরের ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকলেও এতে বহিরাগতদের প্ররোচনা ছিল। গাজীপুরের এলিগেন্ট ছাড়াও গত তিনদিনে বেশকিছু কারখানায় কাজ বন্ধের ঘটনা ঘটেছে।

 

গতকাল রাত সোয়া ৮টায় পাওয়া তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় বস্ত্র ও পোশাক খাতের প্যানটেক্সে বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা চলছিল। আবার স্টিল খাতের অ্যাপোলো স্টিলের কারখানার ভেতরে প্রায় ৩৫০ শ্রমিক বেতন-বোনাসের দাবিতে অবস্থান নিয়েছিল। এছাড়া সব এলাকায়ই ছোট সাব-কন্ট্র্যাক্ট কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে বরাবরের মতোই সমস্যা দেখা গেছে।

রাত পৌনে ৯টায় পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আশুলিয়া এলাকায় বেশকিছু কারখানার বেতন-বোনাস নিয়ে জটিলতা চলছিল। এসব কারখানার একটি ইউনাইটেড ট্রাউজার। এ কারখানায় শ্রমিক সংখ্যা চার হাজার। এছাড়া ডোরিন গ্রুপের পোশাক কারখানায়ও বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা চলছিল। এছাড়া পোশাক কারখানা লিন্ডাতেও বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যার কথা জানা যায়।

দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনা। শিল্প পুলিশের হিসাবমতে, বস্ত্র ও পোশাক, চামড়া, পাদুকাসহ সব খাত মিলিয়ে এসব শিল্প এলাকায় শিল্প-কারখানা রয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৩০০টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৩০১টি পোশাক কারখানা। বাকি কারখানাগুলো অন্যান্য খাতের।

আশুলিয়ায় শিল্প পুলিশ-১-এর আওতায় কারখানা রয়েছে মোট ১ হাজার ১৪৭টি। এসব কারখানায় কর্মরত আছেন ৫০ হাজার ২৫৭ জন শ্রমিক। গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ এলাকার ১ হাজার ১১৩টি কারখানায় বেতন পরিশোধ হয়েছে। বোনাস পরিশোধ হয়েছে ৮৭০টিতে। এ হিসাবে গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৩৪টি কারখানায় বেতন ও ২৭৭টি কারখানায় বোনাস পরিশোধ হয়নি।

গাজীপুরে শিল্প পুলিশ-২-এর আওতায় কারখানা রয়েছে ২ হাজার ১৬৯টি। এসব কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬৪। এসব কারখানার মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পোশাক খাতের ১ হাজার ২৬১টি কারখানায় জুলাই মাসের বেতন পরিশোধ হয়েছে। পোশাক খাতের বাইরে অন্যান্য খাতের ৮৪১টি কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে। বোনাস পরিশোধ হয়েছে পোশাক খাতের ৩৯১টি কারখানায়। পোশাক খাতের বাইরে বোনাস পরিশোধ হওয়া কারখানার সংখ্যা ২৫৮।

চট্টগ্রামে শিল্প পুলিশ-৩-এর আওতায় মোট কারখানা আছে ১ হাজার ৯৮টি, যার ৬৪৭টিই পোশাক খাতের। এর মধ্যে জুলাই মাসের বেতন পরিশোধ হয়েছে ৫৬৯টি কারখানায়। বাকি ৭৮টি কারখানায় গতকাল পর্যন্তও বেতন পরিশোধ হয়নি। পোশাক খাতের বাইরে অন্যান্য খাতের ৪৪৩টি কারখানার মধ্যে বেতন পরিশোধ হয়েছে ৪০৩টিতে ও বাকি রয়েছে ৪০টির। এছাড়া বোনাস পরিশোধ হয়েছে ২৯৪টিতে। বাকি ১৪৯টি কারখানা বোনাসও পরিশোধ করেনি।

নারায়ণগঞ্জে শিল্প পুলিশ-৪-এর আওতায় ছোট-বড় মিলিয়ে কারখানা আছে মোট ২ হাজার ৩৮০টি, যার অধিকাংশই পোশাক খাতের। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বেতন পরিশোধ হয়েছে ১ হাজার ৮৬০টিতে ও বোনাস ৮৬৩টি কারখানায়। এ হিসাবে ৫২০ কারখানায় বেতন ও ১ হাজার ৫১৬টি কারখানায় বোনাস পরিশোধ বাকি আছে। এছাড়া এ এলাকার ৩৮টি কারখানা আগস্ট মাসের অগ্রিম বেতন পরিশোধ করেছে।

ময়মনসিংহে শিল্প পুলিশ-৫-এর আওতায় বিভিন্ন খাতের প্রায় ২৯০টি কারখানায় শ্রমিক রয়েছেন ৫৫ হাজার ৩০২ জন। এ এলাকায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ সম্পন্ন হয়েছে। ভালুকায় দুটি কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে জটিলতা দেখা দিলেও আজ শেষ দিনে কারখানাগুলোয় সব বকেয়া পরিশোধ হবে বলে মনে করছেন শিল্প পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা।

খুলনায় শিল্প পুলিশ-৬-এর আওতায় কারখানা রয়েছে ২০০-এর কিছু বেশি। এসব কারখানার বেশির ভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত। এ কারখানাগুলোর বকেয়া ও বোনাস পরিশোধ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশের প্রতিনিধিরা।

 

অনেক কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ না হওয়ার বিষয়ে শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক এডিশনাল আইজিপি আবদুস সালাম বণিক বার্তাকে বলেন, অনেক মালিকই শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে বেতন-বোনাস পরিশোধ করেন। এখন পর্যন্ত এলিগেন্ট ছাড়াও দুয়েকটি কারখানা আছে, যেগুলো আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ। বড় কোনো সমস্যার আশঙ্কা না থাকলেও শিল্পের ধরন বিবেচনায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছি। কারণ সমস্যা তৈরি হতে খুব বেশি সময় লাগে না। তবে আশা করছি এ বছর বড় কোনো সমস্যা আর হবে না।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরও (ডিআইএফই) শিল্প-কারখানার বেতন-বোনাস পরিশোধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এ সংস্থাটির দাবি, সব খাত মিলিয়ে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে শতভাগ কারখানায় বেতন পরিশোধ হয়েছে। এলাকাগুলোয় সব খাত মিলিয়ে কারখানার সংখ্যা ১৪ হাজার ১০৩টি। বোনাস পরিশোধ হয়েছে ৯৫ শতাংশ কারখানায়। এ হিসাবে ৭০০ কারখানায় বোনাস অপরিশোধিত ছিল।

যদিও প্রায় শতভাগ কারখানায় বেতন পরিশোধ হয়েছে বলে দাবি করেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম মান্নান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে আজকে (গতকাল রাত ৯টা) পর্যন্ত বোনাস পরিশোধ হয়েছে ৯৩ শতাংশ কারখানায়। দু-তিনটি সমস্যা আছে, যেগুলো সমাধানও হওয়ার পথে। এ ধরনের কারখানার মধ্যে আছে অ্যাড্রন, ইউনাইটেড ট্রাউজার। এছাড়া লিন্ডা নিয়ে সমস্যা থাকলেও মেশিন বিক্রি করে সমাধান করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here