পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ১০ হাজার করার প্রস্তাব দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, অঞ্চলভেদে পোশাক শ্রমিকদের ব্যয়ে তারতম্য রয়েছে। ঢাকার বাইরে গাজীপুরে জীবনযাত্রার ব্যয় সবচেয়ে বেশি। আর ঢাকার ভেতরেও ব্যয়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। তাই মিরপুর আর তেজগাঁওয়ের শ্রমিকের বেতন এক হওয়া ঠিক নয়। রবিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সিপিডি আয়োজিত ‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ প্রস্তাব করে সিপিডি। অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, যদি গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয় তাহলে তার পাশাপাশি বাড়ি ভাড়াও বৃদ্ধি পাবে। এজন্য মজুরি বৃদ্ধির জন্য শুধু আন্দোলন করলেই হবে না, বাড়ি ভাড়া কমানোর জন্যও আন্দোলন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, বিদ্যমান মজুরি কাঠামোর গ্রেড ৭ বিলুপ্ত করে নতুন মজুরি কাঠামোতে গ্রেড ৬ এর ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ২৮ টাকা করা যেতে পারে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে সিপিডির গবেষক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অঞ্চলভেদে পোশাক শ্রমিকদের ব্যয়ে তারতম্য রয়েছে। ঢাকার বাইরে গাজীপুরে জীবনযাত্রার ব্যয় সবচেয়ে বেশি। আর ঢাকার ভেতরেও ব্যয়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। তাই মিরপুর আর তেজগাঁওয়ের শ্রমিকের বেতন এক হওয়া ঠিক নয়।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র বাড়ি ভাড়াই সবচেয়ে বড় ব্যয় নয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বড় ব্যয় হচ্ছে। ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ৮৬ শতাংশ শ্রমিক এখনও টয়লেট শেয়ার করেন। ৮৫ শতাংশ শ্রমিক রান্নাঘর শেয়ার করেন। ৪০ শতাংশ শ্রমিকের ঘরে কোন টেবিল নেই। ৪৪ শতাংশ শ্রমিকের ঘরে চেয়ার নেই। মাত্র ৫ শতাংশ শ্রমিক বেতন পান মোবাইল বা ব্যাংকিং চ্যানেলে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সিপিডি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রেহমান সোবহান, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান এবং পোশাক মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। প্রফেসর ড. রেহমান সোবহান বলেন, পোশাক শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে মালিকদের একার দায় দিলে হবে না। এখানে বায়ারদেরও দায় আছে। একটি পোশাক পাঁচ ডলারে কিনে বায়াররা ২০ ডলারে বিক্রি করে। মাঝের এই ১৫ ডলার যায় কই। সেটাও আলোচনা করতে কবে। তাদেরও দায় নিতে হবে।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের বাস্তবভিত্তিক বেতনের ব্যবস্থা করতেই হবে। তারও তো মানুষ। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মালিকদের সামর্থ্যের কথা মনে রাখতে হবে। এমন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে, যেন মালিকের সক্ষমতা ও শ্রমিকের ন্যায়তা দুটাই হয়। আলোচনায় শ্রমিক প্রতিনিধি রুহুল আমিন বলেন, ১৬ হাজার টাকার দাবি নিয়েই আমাদের আরও বেশি কথা বলা উচিত।
সাত মাসে মজুরি বোর্ডের মাত্র তিনটি বৈঠক হয়েছে, এটি কোনভাবেই কাম্য নয়। আরেক শ্রমিক নেতা বাবুল আক্তার বলেন, শ্রমিকরা ১৬ হাজার টাকার মজুরির দাবিতেই রয়েছে। কিন্তু মজুরি বোর্ডে যিনি শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে শ্রমিক নেতা নন। মজুরি বোর্ডে কি সিদ্ধান্ত হবে না হবে, তা জানি না। আমরা কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপই কামনা করব। বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, সিপিডির পক্ষে মজুরির সুপারিশ দেয়া অযৌক্তিক। মজুরি নিয়ে প্রস্তাবনা দেয়া আমাদের কাজ নয়। মজুরি বোর্ডে এই আলোচনা চলমান রয়েছে। দুই পক্ষ নেগোসিয়েশন করছে। সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আরও বলেন, ন্যূনতম মজুরিকে আমরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পরিণত করছি। এর পরিণত ভালো নাও হতে পারে। তাই এখনই এ ঘৃণ্য খেলাটি থামানো উচিত। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতেই মজুরি নির্ধারণের কথা বলেন তিনি।
সমাপনী বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমাদের গার্মেন্টস সেক্টর দেশের অর্থনীতিতে উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় সেক্টর। বর্তমানে এই সেক্টরে ৪৪ লক্ষ শ্রমিক কাজ করছে। তারা যাতে তাদের জীবনযাপন সঠিকভাবে করতে পারে সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। তার পাশাপাশি আমরা গার্মেন্টস শ্রমিকের ছেলে-মেয়েরা ভালভাবে পড়াশুনা করার জন্য প্রত্যেকটা কারখানার পাশে স্কুল নির্মাণ করতে যাচ্ছি। এবং শ্রমিকরা যাতে খুব সহজেই তাদের বেতন ভাতা পেতে পারে তার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের গ্রার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে অনেক মহিলা শ্রমিক কাজ করে। তাই যৌন হয়রানি প্রতিরোধ করতে প্রত্যকটা কারখানায় সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যদি গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয় তাহলে তার পাশাপাশি বাড়ি ভাড়াও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী। তাই মজুরি বৃদ্ধির জন্য শুধু আন্দোলন করলেই হবে না, বাড়ি ভাড়া কমানোর জন্যও আন্দোলন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন (আইএলও) সব সময় ডাবল স্ট্যাডার্ট (দ্বৈতনীতি)। সব মাতব্বরি শুধু আমাদের বেলায়। বায়ারদের তারা কিছুই বলতে পারে না। সেফটি নিয়ে শুধু কথা বলে, দাম বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বললে পিছিয়ে যায়। এটা হওয়া উচিত নয়।