বাংলাদেশের পোশাক কারখানার সংস্কারকাজের তদারকিতে থাকা ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট সংগঠন অ্যাকর্ড তাদের কারখানাগুলো বাংলাদেশ সরকারের রিমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল বা সংস্কারকাজ সমন্বয় সেলের (আরসিসি) কাছে হস্তান্তরপ্রক্রিয়া শুরু করেছে।
গতকাল বুধবার শ্রম মন্ত্রণালয়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) সূত্রে জানা যায়, আরসিসির কাছে হস্তান্তরপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অ্যাকর্ড ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে ২০টি কারখানা হস্তান্তর করেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১২টি, গাজীপুরে পাঁচটি ও চট্টগ্রামের তিনটি কারখানা রয়েছে।
এদিকে উত্তর আমেরিকান ক্রেতাজোট অ্যালায়েন্স সরকারের নির্ধারিত সময়ে হস্তান্তরপ্রক্রিয়া শুরু করবে বলে নিশ্চিত করলেও অ্যাকর্ড আরো সময় নিয়ে টালবাহানা করছিল। এরই প্রেক্ষাপটে আদালতে মামলাও হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
পোশাক কারখানার সংস্কারকাজ সমন্বয়ের জন্য বাংলাদেশ সরকার গত বছর ১৪ মে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অধীনে আরসিসি গঠন করে। এরই মধ্যে আরসিসির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, জনবল বাড়ানো হয়েছে। কারখানা ভবনের কাঠামোগত নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ ও অগ্নিনিরাপত্তাসহ উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে শতাধিক প্রকৌশলী নিয়োগ দিয়েছে।
২০১৩ সালের মর্মান্তিক রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পোশাক খাত সংস্কারে বিদেশি ক্রেতারা অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠন করে। এ দুই জোট দেশের পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা জোরদারকরণ এবং সংস্কার কার্যক্রমে অংশ নেয়।
এদিকে ডিআইএফই জনসংযোগ থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, এই ২০টি কারখানার ভবনের অগ্নি, অবকাঠামোগত ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়গুলো প্রাথমিকভাবে অ্যাকর্ড পরিদর্শন সম্পন্ন করেছে। অ্যাকর্ড ওই সব কারখানার ফ্যাক্টশিট, হিস্টোরিক্যাল ও টেকনিক্যাল ফাইলের ইলেকট্রনিক ফরম্যাট আরসিসি বরাবর হস্তান্তর করেছে।
জানতে চাইলে ডিআইএফই মহাপরিদর্শক মো. সামসুজ্জামান ভূইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুসারে চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে অ্যাকর্ডের আওতাধীনে থাকা কারখানাগুলোকে আরসিসিতে হস্তান্তর করার নির্দেশনা রয়েছে। এ ২০ কারখানা হস্তান্তরের মাধ্যমে অ্যাকর্ড তার কারখানাগুলো হস্তান্তরপ্রক্রিয়া শুরু করল। এ ছাড়া বাকি কারখানাগুলো কখন হস্তান্তর করা হবে এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে অ্যাকর্ড জানায়নি।
ডিআইএফই মহাপরিদর্শক বলেন, অ্যাকর্ডের আওতাধীন প্রায় এক হাজার ৮০০ কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি কারখানা হস্তান্তর করেছে। ১৮১টি কারখানার সম্পূর্ণ সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। এদিকে স্টিচিং বাংলাদেশ অ্যাকর্ড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েসের কাছে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন লিখিত প্রশ্ন পাঠাতে। ই-মেইলে তা পাঠানো হলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো ফিরতি জবাব পাওয়া যায়নি।
গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজারের প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবনে আরসিসির সম্মেলনকক্ষে দুই পক্ষ একটি হস্তান্তরপত্রে সই করে। এতে সই করেন আরসিসির প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুর রহমান, উপসচিব ও স্টিচিং বাংলাদেশ অ্যাকর্ড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েস।