Home Bangla Recent যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বলয়ে চলে যেতে পারে পোশাকের উত্পাদন

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বলয়ে চলে যেতে পারে পোশাকের উত্পাদন

ম্যাকেঞ্জির জরিপ

ঘন ঘন ফ্যাশন পরিবর্তনের কারণে দ্রুততম সময়ে ক্রেতার হাতে পোশাক পৌঁছানো কিংবা পরিবহন ব্যয় কমানোর জন্য তৈরি পোশাকের বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকার বায়াররা এখন ভিন্ন চিন্তা করছেন। এশিয়ার বদলে নিজ নিজ দেশ কিংবা কাছাকাছি দেশ থেকে তারা পণ্য ক্রয় করতে চান। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নিজ দেশ কিংবা মেক্সিকো এবং ইউরোপের জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর বাইরে তুরস্ককে ক্রেতারা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ২০২৫ সাল নাগাদ বাড়তে পারে এ ধরনের বাণিজ্য। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জি এন্ড কোম্পানির পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ইউরোপ ও আমেরিকার ২শ’ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের ওপর চালানো ওই জরিপে দেখা যায়, ১৮০ জনই নিজ দেশে উত্পাদন কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পোশাক ক্রয় বাড়াতে চান। সার্বিক বিচারে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই এই ব্যবস্থাকে তাদের জন্য সুবিধানজক মনে করছেন। ফলে চীন, বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলো বিশ্ব পোশাকের বাজারের বড় অংশ হারাতে পারে।

‘পোশাকের উত্পাদন কি নিজ দেশেই ফেরত যাচ্ছে?’ শিরোনামের এই জরিপটি পরিচালনা করা হয় গত সেপ্টেম্বরে। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ম্যাকেঞ্জির পক্ষ থেকে বলা হয়, নিজ দেশে উত্পাদন এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমদানিকে আরও বেগবান করবে চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কারোপ ও নতুন শুল্কারোপের হুমকি। জরিপে অংশ নেওয়া ৮০ ভাগ নির্বাহী মনে করেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি আমদানি-রপ্তানির সূচকে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় আমদানি উত্স দেশ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে ৩০ শতাংশ নির্বাহী যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলেছেন। মেক্সিকো থেকে আমদানি সুবিধাজনক মনে করেন ২০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। আর ইউরোপের জন্য বড় আমদানির উত্স হিসেবে তুরস্কের নাম উঠে এসেছে।

জরিপে বলা হয়, এক সময় ফ্যাশন সাইকেল বা পণ্যের নকশা করার পর ক্রেতার স্টোরে পৌঁছানো পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান ছিল ৬ মাসের মতো। এখন তা ৬ সপ্তাহে নেমে এসেছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিতে সমস্যা প্রসঙ্গে নির্বাহীরা বলেন, এতে পরিবহন ব্যয় এবং সময় বেশি লাগে।

স্থানীয়ভাবে কিংবা নিজ দেশের কাছাকাছি পোশাক উত্পাদন করতে গেলে উত্পাদনের মূল খরচ কিছুটা বাড়লেও পরিবহন ব্যয় কমবে। সেক্ষেত্রে সামগ্রিক উত্পাদন খরচে তেমন একটা হেরফের হবে না। এছাড়া কর্মী হিসেবে মানুষের বদলে রোবট ব্যবহারের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। স্বয়ংক্রিয় উত্পাদন, রোবটের ব্যবহার , থ্রি-ডি প্রিন্টিংয়ের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। কারণ, পোশাক উত্পাদনে সেলাইয়ের কাজেই মোট সময়ের ৯০ শতাংশ ব্যয় হয়। অটোমেশনের মাধ্যমে এই সময় অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায়। জরিপে অংশ নেওয়া নির্বাহীদের ৮০ শতাংশ মনে করেন, ২০২৫ সালের মধ্যে একটা সাধারণ পোশাক উত্পাদনে শ্রম ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রে উত্পাদন করা কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমদানি বাড়ানো প্রসঙ্গে চীনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মজুরি বৃদ্ধিকেও কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এশিয়ার দেশগুলোর দীর্ঘ দিনের কম মজুরির সুবিধাটি এখন আর নেই। উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, ২০০৫ সালে চীনের মজুরি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দশ ভাগের এক ভাগ। এখন এই ব্যবধান তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। অর্থাত্ চীন থেকে আমদানি ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সুবিধা অনেক কমে গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here