রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পোশাক রপ্তানিতে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে সেখানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৫০ কোটি ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকার উপরে। আলোচ্য সময়ে সারা বিশ্ব থেকে ইউরোপের দেশগুলোর পোশাক আমদানি গড়ে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়লেও সেখানে বাংলাদেশের বেড়েছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ। অথচ গত ২০১৭ সালে সেখানে বাংলাদেশে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল সোয়া ৪ শতাংশেরও কম। শুধু তাই নয়, গত নয় মাসে ইউরোপের ২৮টি দেশে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। সেখানে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের উপরে কেবল এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পোশাক আমদানির তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য ইউরোপ। গত বছর (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) সেখানে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৭২৭ কোটি ডলার। মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশের বেশি যায় ইউরোপের বাজারে। ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশ ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে। এর আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৪৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ইউরোপে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৫০ কোটি ডলার বা ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে প্রথম ৯ মাসে ইউরোপ ৭ হাজার ৫৪৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ পোশাক বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো থেকে আমদানি করেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি করে চীন যথারীতি প্রথম স্থানে রয়েছে। আর বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে। রপ্তানিকারক শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে বাকীগুলো হলো যথাক্রমে তুরস্ক, ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মরক্কো, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশের উপরে হলেও সেখানে প্রধান রপ্তানিকারক দেশ চীনের রপ্তানি বেড়েছে এক শতাংশেরও কম হারে।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, চীনে পোশাকের উত্পাদন খরচ বাড়ছে। ফলে ক্রেতারা চীনের বিকল্প খুঁজছেন। বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে গার্মেন্টস খাতের কর্মপরিবেশ (কমপ্লায়েন্স) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অন্যদিকে চীনের চাইতে অপেক্ষাকৃত কম খরচে পোশাক ক্রয়ের সুযোগ থাকায় ক্রেতারা বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোতে ক্রয়াদেশ বাড়িয়েছেন। গত কয়েক মাসের চিত্রে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের অন্যতম পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসিস গার্মেন্টস। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ও বিজিএমইএ’র পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে অনেক অগ্রগতি করেছে। এটি বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায় ক্ষেত্রে আস্থা বাড়িয়েছে। ফলে চীনের বিকল্প হিসেবে তারা এখন বাংলাদেশকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। এছাড়া গত কয়েক মাসে কারখানাগুলোতে চীন সরকারের পরিবেশগত বিধিনিষেধের কারণে অনেক কারখানা বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার নিতে পারেনি। ওইসব ক্রয়াদেশ বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ অন্য দেশগুলো পেয়েছে। এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
ইউরোপের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় জার্মানিতে। এর পরে রয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডসহ অন্য দেশগুলো।