একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সর্ববৃহৎ বাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির একটি সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ তৈরি পোশাক আমদানি করেছে, তার ২৭ শতাংশই ছিল পুরুষদের কটন ট্রাউজার। এ সময় বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যটির রফতানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ওটিইএক্সএর তথ্য অনুযায়ী, নয় মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কটন ট্রাউজার রফতানি হয়েছে ১১৩ কোটি ৯৫ লাখ ২৭ হাজার ডলারের। ২০১৭ সালের একই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ১০৪ কোটি ২৪ লাখ ৫৭ হাজার ডলার।
সার্বিকভাবে জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রফতানি ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেড়েছে। উল্লিখিত সময়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র মোট ৪১৬ কোটি ৮০ লাখ ৮৩ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। ২০১৭ সালের একই মেয়াদে আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৯৩ কোটি ৮১ লাখ ৩১ হাজার ডলার।
মার্কিন বাজারে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া উল্লেখযোগ্য পোশাক পণ্যের মধ্যে শার্ট ও ট্রাউজারের পাশাপাশি রয়েছে কটন ড্রেস, নিট ব্লাউজ, স্ল্যাকস, কটন আন্ডারওয়্যার ও সোয়েটার। আলোচ্য নয় মাসে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়েছে ট্রাউজার, শার্ট ও আন্ডারওয়্যার।
রফতানি বেড়েছে, এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে স্ল্যাকস। নয় মাসে পণ্যটি রফতানি হয়েছে ৫৯ কোটি ৯৬ লাখ ১০ হাজার ডলারের। ২০১৭ সালের একই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ৫৪ কোটি ৮৫ লাখ ৩ হাজার ডলার। এ হিসাবে রফতানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।
রফতানি কমেছে, এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে কটন ওভেন শার্ট। জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর মেয়াদে পণ্যটি রফতানি হয়েছে ৪১ কোটি ৩১ লাখ ৯৬ হাজার ডলারের। গত বছরের একই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি ৭৯ লাখ ৫১ হাজার ডলার। এ হিসাবে কটন ওভেন শার্টের রফতানি কমেছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ।
চলতি বছর কটন আন্ডারওয়্যারের রফতানিও কমেছে। নয় মাসে পণ্যটি রফতানি হয়েছে ১৭ কোটি ৪১ লাখ ৮ হাজার ডলারের। ২০১৭ সালের একই সময় রফতানির আকার ছিল ১৯ কোটি ৭ লাখ ৮৪ হাজার ডলার। এ হিসাবে রফতানি কমেছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মান ভালো ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক কেনার বিষয়ে মার্কিন ক্রেতাদের আগ্রহ এখনো অটুট রয়েছে। পাশাপাশি চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ ত্বরান্বিত হওয়ায় ভবিষ্যতে পোশাকের ক্রয়াদেশ আরো বেড়ে যাওয়ার আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন অনেকে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ কিছুটা বেড়েছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে ভবিষ্যতে ক্রয়াদেশ আরো বাড়বে বলে আশা করছি।
মার্কিন ক্রেতাদের আগ্রহ অটুট থাকার বিষয়টি সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। ‘২০১৮ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্কিং স্টাডি’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যাশন পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পোশাক ক্রয়ের দায়িত্বে নিয়োজিতদের (সোর্সিং এক্সিকিউটিভ) বরাতে বলা হয়েছে, মার্কিন ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের উৎস দেশ হিসেবে কেবল চীনে সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে না। চীনের বিকল্প হিসেবে ভিয়েতনামসহ আরো বেশকিছু দেশের বিষয়ে ভাবছে তারা। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে পোশাক সংগ্রহ বাড়ানোর বিষয়ে আশাবাদী মার্কিন ক্রেতারা। ক্রয় বাড়াতে মার্কিন নির্বাহীদের এ আগ্রহ ২০২০ সাল পর্যন্ত অটুট থাকবে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চীনসহ শীর্ষ সরবরাহকারী দেশগুলোর ওপর আরোপিত হয়েছে শাস্তিমূলক শুল্ক। ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতির প্রভাবে ‘ব্যয়চাপ বৃদ্ধি’কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন মার্কিন ক্রেতা প্রতিনিধিরা।