পাবনায় ক্ষুদ্র তৈরি পোশাকশিল্প উদ্যোক্তা উন্নয়ন মেলায় বক্তারা বলেন, গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের শুরুতে পাবনায় হোসিয়ারি শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। কালের পরিক্রমায় বর্তমানে পাবনায় মিনি গার্মেন্ট শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। বর্তমানে পাবনা জেলার ৩০-৪০টি গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মিনি গার্মেন্ট ছড়িয়ে আছে।
‘এসো ক্ষুদ্র তৈরি পোশাকশিল্পের উন্নয়ন করি, টেকসই উন্নত দেশ গড়ি’ সেøাগানে গতকাল সোমবার এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পিকেএসএফের প্রকল্পের অধীন ক্ষুদ্র তৈরি পোশাকশিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি শীর্ষক ভ্যালু চেইন উন্নয়ন প্রকল্প এ মেলার আয়োজন করে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অরগানাইজেশন ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট অ্যান্ড কারচারাল এক্টিভিটিসের (ওসাকা) নির্বাহী পরিচালক কবি মজিদ মাহমুদের সভাপতিত্বে মেলা উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাফিউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস, পাবনা প্রেস ক্লাব সভাপতি প্রফেসর শিবজিৎ নাগ, সহসভাপতি আক্তারুজ্জামান আক্তার, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ সভাপতি আবদুল মতিন খান, পাবনা চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি আলি মুর্তজা বিশ্বাস সনি।
বক্তারা বলেন, প্রকল্পের কর্ম এলাকা পাবনা সদর উপজেলা ও ঈশ্বরদী উপজেলা। প্রকল্পের আরও একটি ক্লাস্টার নাটোরের জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর, চান্দাই ও নগড় ইউনিয়ন। গত শতাব্দীর আশির দশকের শুরুতে বিক্রমপুরের কতিপয় ব্যবসায়ী রাজাপুরে স্থায়ীভাবে বসবাসের পাশাপাশি ঢাকার সদরঘাট থেকে অল্প কাপড় নিয়ে এসে তৈরি পোশাকের কাজ শুরু করেন। ২০০৭-০৮ সালে রাজাপুরের আশপাশের ১০-১২টি গ্রাম কাজ শুরু করে। এখন এটি প্রায় ২০-২৫টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। দু-তিন কর্মী কাজ করছে এমন দুই হাজারের বেশি উদ্যোক্তা বিদ্যমান, যেখানে প্রায় আট হাজার নারী-পুরুষ পোশাক তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে।
প্রকল্পের কর্ম এলাকায় বিদ্যমান উদ্যোক্তা ও মিনি গার্মেন্টের সঠিক হিসাব না থাকা, উদ্যোক্ত ও কারিগরদের উন্নত পোশাক তৈরির প্রশিক্ষণ না থাকা, আধুনিক মেশিন ও প্রযুক্তি ব্যবহারে অদক্ষতা, কাঁচামালের অপ্রতুলতা, কারখানার কর্মপরিবেশ ও ব্যবসা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব, বাজার সম্প্রসারণের কৌশল সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব এবং উৎপাদিত পণ্যের মান উন্নত না হওয়ায় উদ্যোক্তারা কাক্সিক্ষতভাবে লাভবান হতে পারছে না।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্ম এলাকার বিদ্যমান সমস্যা সমাধান ও সম্ভাব্য সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে এ শিল্পের যথাযথ উন্নয়নের মধ্য দিয়ে উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে রাজধানীকেন্দ্রিক এই শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণের জন্য ওসাকা ‘ক্ষুদ্র তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি’ শীর্ষক ভ্যালু চেইন উন্নয়ন উপ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে।
এরই মধ্যে এ শিল্পের উন্নয়নে উদ্যোক্তাদের সেলাই ও ফিনিশিংয়ের পাশাপাশি ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, হিসাব সংরক্ষণ, ই-মার্কেটিং প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়া এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের সেলাইয়ের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।