বিশ্বের ১৩ হাজার কোটি ডলারের স্মার্ট পোশাকের বাজার ধরতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে দেশের পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ীদের মতে, আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বা ৫০ বছর উদ্যাপন হবে। ওই বছরই তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলার অর্জন করতে চায় পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উচ্চ মূল্যের বা স্মার্ট পোশাকের উপর গুরুত্ব দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তাদের ভাষ্য, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব নয়। কারণ, ২০২১ সালে বিশ্বে পোশাকশিল্পের বাজার বেড়ে দাঁড়াবে ৬৫ হাজার কোটি ডলারে। বর্তমানে আছে ৪৫ হাজার কোটি ডলারের বাজার। এর মধ্যে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র ৫ শতাংশ।
এটি ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে পারলেই লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয়। গত বছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আয় প্রায় তিন হাজার ৩শ’ কোটি ডলার। কিন্তু রপ্তানিকৃত পোশাকের সিংহভাগ শার্ট, টি-শার্ট, ট্রাউজার, ডেনিম ও সোয়েটার মোট ৫টি বেসিক বা মৌলিক পোশাক পণ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে বস্ত্রশিল্পের চতুর্থ বিপ্লব হিসেবে খ্যাত স্মার্ট পোশাকের বাজার অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমেই চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া এই বিশেষ পোশাকের বিশ্ব বাজার মূল্য ২০২৫ সাল নাগাদ ১৩ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে উল্লেখ করেছে সায়েন্টিফিকা রিসার্চ। এজন্য স্মার্ট পোশাকের বিশাল বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সুসংহত করার পথকে প্রশস্ত করার লক্ষ্য নিয়ে আগামী ২রা মে ঢাকার আন্তর্জাতিক বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে শুরু হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ ফ্যাশনলজি সামিট’র দ্বিতীয় আসর।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, যদিও সামপ্রতিক সময়ে একধরনের চাপ আছে। তবে প্রবৃদ্ধির এই উচ্চহার অর্জন অসম্ভব নয়। এ জন্য বর্তমানে কম মূল্যের পণ্যের চেয়ে বেশি মূল্যের পণ্য তৈরি ও রপ্তানির দিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি পণ্যের উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের পোশাক উদ্যোক্তাদের উচ্চ মূল্যের পোশাকের উপর গুরুত্ব দেয়া অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে আমাদেরকে ১৩০ বিলিয়ন ডলার বা ১৩ হাজার কোটি ডলারের মূল্যের স্মার্ট পোশাকের বাজারের দিকে নজর দিতে হবে। অর্থাৎ বেসিক বা মৌলিক ৫টি পণ্য থেকে উচ্চ মূল্যের পণ্য উৎপাদনের দিকে ধাবিত হওয়ার কাজটি খুব সহজ নয়। তাই আমাদেরকে যথার্থ পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে আগাতে হবে। আর এ প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে তোলাই বাংলাদেশ ফ্যাশনলজি সামিটের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে আগামীর ফ্যাশন জগতের জন্য প্রস্তুত হতে উৎসাহিত করাই ফ্যাশনলজি সামিটের দ্বিতীয় সংস্করণের অন্যতম লক্ষ্য। আর তাই এবারের আসরে জড়ো হবেন ফ্যাশন টেকনোলজির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রথম সংস্করণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে ফিউচার ফ্যাক্টরি, ভার্চুয়াল প্রোটটাইপিং, ফ্যাশন টেক এবং সাসটেইনেবল ইনোভেশন, মাস কাস্টোমাইজেশন এবং ডিমান্ড ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোচনার পথ ইতিমধ্যে উন্মোচিত হয়েছে।
সূত্র মতে, ‘ডিজিটালাইজেশন দ্য নেক্সট ডেস্টিনেশন’ কে বাংলাদেশ ফ্যাশনলজি সামিটের দ্বিতীয় সংস্করণের উপপাদ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের আসরে ৫টি প্যানেল আলোচনা সভায় ডিজিটালাইজেশন ব্যবহারের মাধ্যমে বস্ত্রখাতের চতুর্থ বিপ্লবের যুগে কিভাবে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা যায় সে বিষয়ের উপর আলোকপাতের জন্য বিশ্বের খ্যাতনামা আলোচকবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এই সামিট নতুনদের জন্য ফ্যাশনে তাদের অভিনব উদ্ভাবনসমূহ প্রদর্শনের একটি চমৎকার সুযোগ এনে দেবে।
বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার কর্তৃক তৈরিকৃত স্মার্ট পোশাকের ‘ডিজিটাল টেক ফ্যাশন রানওয়ে শো’ শীর্ষক একটি জমকালো প্রদর্শনীর আয়োজন থাকবে। এ ছাড়া ফ্যাশন জগতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনসমূহ প্রদর্শনের জন্য থাকবে ‘টেক ইনোভেশন জোন’। বাংলাদেশ ফ্যাশনলজি সামিটের সহযোগী হিসেবে রয়েছে ইথিক্যাল ট্রেডিং ইনিটিয়েটিভ, সাসটেইনেবল অ্যাপারেল কোয়ালিশন, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশন, সিঅ্যান্ডএ ফাউন্ডেশন, ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট, একসেস টু ইনফরমেশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ড দূতাবাস, জিআইজেড ও এইচ অ্যান্ড এম।