Home Bangla Recent পোশাক খাতে ডিজিটাল ব্যবস্থায় মজুরি পরিশোধ : বছরে সাশ্রয় ৪ লাখ ডলার

পোশাক খাতে ডিজিটাল ব্যবস্থায় মজুরি পরিশোধ : বছরে সাশ্রয় ৪ লাখ ডলার

দেশের পোশাক খাতের স্বল্প মজুরির কর্মীরা এখনো নগদ লেনদেনেই অভ্যস্ত। কিন্তু নগদে মজুরি পরিশোধের ঝামেলাও পোহাতে হয় কারখানা কর্তৃপক্ষকে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতি মাসে কারখানায় মজুরি পরিশোধের দিন অনেকটা সময় উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। এতে একদিনে উৎপাদন ক্ষতি হয় ২৫ শতাংশ। আর ডিজিটাল ব্যবস্থায় মজুরি পরিশোধে একটি কারখানার বছরে সাশ্রয় হয় ৪ লাখ ডলার।

তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্টে বিতরণ সেবা নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। ‘বিকাশ-রেডিমেড গার্মেন্ট পেরোল সিস্টেম’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সেবাগ্রহীতা কারখানা কর্তৃপক্ষ। সভায় তারা নগদে মজুরি পরিশোধে প্রতিকূলতা ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাড়তি সুবিধাগুলো তুলে ধরেন।

বিকাশের আয়োজনে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন সেবাগ্রহীতা পোশাক কারখানা আজিম অ্যান্ড সন্সের পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানটির চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. জাকিউর রহমান বলেন, নগদে মজুরি পরিশোধের দিন মধ্যাহ্নভোজের পর কোনো কাজ হতো না। এর প্রভাবে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ প্রডাকশন লস হতো। ২৫ থেকে ৩০ জন লোককে মজুরি পরিশোধ প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত থাকতে হতো। কিন্তু বিকাশের সেবা ব্যবহার শুরুর পর বছরে প্রায় ৪ লাখ ডলার সাশ্রয় হচ্ছে আমাদের।

আজিম অ্যান্ড সন্সের পরিচালক সৈয়দ সালমান আজিম বলেন, বিকাশের মাধ্যমে আমাদের ২ হাজার ৬০০ পোশাক কর্মী পে-রোল সুবিধা পাচ্ছে। এতে খরচ ও অনেক ঝঞ্ঝাট কমেছে। বিকাশের ব্যবস্থায় শুরুতে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করলেও এখন এর সুফল ভোগ করছে সবাই।

বিকাশের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মিজানুর রশীদ বলেন, ২০১৫ সালে জানুয়ারি মাসে তৈরি পোশাক খাতে বিকাশের এ সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। প্রথম ভিয়েলাটেক্স বিকাশের গার্মেন্টস পে-রোল অটোমেশন সিস্টেমস ব্যবহার শুরু করে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১৭০টি তৈরি পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিকাশের এ সেবা ব্যবহার করছে। বিকাশের মাধ্যমে বেতন পাচ্ছে এমন উপকারভোগী শ্রমিকের সংখ্যা বর্তমানে দুই লাখেরও বেশি এবং এদের ৭০ শতাংশই নারী শ্রমিক।  সারা দেশে বিকাশের প্রায় দুই লাখ এজেন্ট রয়েছে। ফলে শ্রমিকরা কোনো ধরনের বাড়তি সময় ব্যয় না করেই মজুরির টাকা ক্যাশ আউট করে নিতে পারেন। এছাড়া সারা দেশে বিকাশের প্রায় ৭৮ হাজার মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট আছে। ফলে শ্রমিকরা চাইলে অনেক দোকানে সরাসরি পেমেন্টও এ অ্যাকাউন্ট থেকে করতে পারে।

বিকাশ জানিয়েছে, বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে মজুরি বিতরণে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ে ‘ডিজিটাইজিং ওয়েজ পেমেন্টস ইন বাংলাদেশ’স গার্মেন্টস প্রডাকশন সেক্টর (২০১৭) শীর্ষক একটি জরিপ পরিচালনা করে, যা ২০১৭ সালের মার্চ মাসে প্রকাশ করা হয়। জরিপে দেখা গেছে, একটি কারখানায় একজন শ্রমিকের নগদ টাকায় বেতন নিতে মাসে ১৮ মিনিট ব্যয় হয়। সে হিসাবে ২ হাজার ৫০০ শ্রমিক কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ৭৫০ ঘণ্টার রাজস্ব হারায় বেতন দেয়ার সময় ব্যবস্থাপনায়। অন্যদিকে বেতন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকেন, তাদের গড়ে প্রতি শ্রমিকের জন্য মাসে ১৩ মিনিট সময় ব্যয় হয়। সে হিসাবে মাসে বেতন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের প্রায় ৫৪২ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। নগদ টাকায় বেতন দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে আলাদা করে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করতে হয়। এসব কিছু বিবেচনায় হিসাব করে দেখা গেছে, নগদ টাকায় বেতন দিতে একটি কারখানার প্রতি মাসে একজন শ্রমিকের পেছনে প্রায় ৩৮ টাকা বা দশমিক ৪৪ ডলার খরচ হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here