Home Bangla Recent বিজিএমইএ ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাজউক

বিজিএমইএ ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাজউক

রাজধানীর হাতিরঝিলে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) গড়ে তোলা ভবন বিজিএমইএ কমপ্লেক্সের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করে ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে ভবনটির নিয়ন্ত্রণ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজউক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গতকাল সকালে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু করে। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ভবনটি প্রথমেই খালি করার উদ্যোগ শুরু হয়। ভবন খালি করার এ প্রক্রিয়া চলে বিকাল পর্যন্ত। দিনভর অবস্থানের পর ১৫ তলা ভবনটিতে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থেকে মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়।

ভবনটি কবে ভাঙা হবে, জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কবে ভাঙা হবে, সেটা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব না। ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য ভেতরের সব মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এরপর আমরা সেটি সিলগালা করে দিয়েছি।

সকাল ১০টায় ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) খন্দকার অলিউর রহমান। তিনি বলেন, ভবন ভাঙার জন্য আমাদের বুলডোজারসহ অন্যান্য গাড়ি প্রস্তুত। তবে এ ভবনের বিভিন্ন তলায় ১৯টি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। আমরা আপাতত এসব প্রতিষ্ঠানের মালামাল সরিয়ে নিতে বলছি। এটা ভবন ভাঙার প্রক্রিয়ারই একটা অংশ। এ ভবনে ব্যাংকসহ অন্যান্য অফিস আছে। ব্যাংকের ভল্টের টাকাসহ অফিসের অন্য মালামাল তারা সরিয়ে নেয়ার কাজ করছে। আমাদের কাছ থেকে তারা ২ ঘণ্টা সময় চেয়ে নিয়েছে। আমরা তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য সময় ও সুযোগ দিয়েছি।

ভবন থেকে আসবাবপত্র সরিয়ে নেয়ার কাজ সকালে শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত চলে। তার পরও বিভিন্ন অফিসে বেশকিছু মালামাল রয়ে যাওয়ায় সময়সীমা বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বেলা আড়াইটায় ফের সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন খন্দকার অলিউর রহমান। তিনি বলেন, বিকাল ৫টার মধ্যে কেউ যদি মালামাল সরাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির দায় রাজউক নেবে না। তবে বিকাল ৫টার পরও বিজিএমইএ ভবন থেকে ট্রাকে করে মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।

এ সময় ঘটনাস্থলে আসেন হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক এএসএম রায়হানুল ফেরদৌস। তিনি সাংবাদিকদের জানান, সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ভবন মালিকরা সব মালামাল সরিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন। এরপর ভবনটি সিলগালা করা হবে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ভবনটি সিলগালা করে দেয় রাজউক। এরপর তৃতীয় দফায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাজউকের পরিচালক খন্দকার অলিউর রহমান। তিনি জানান, আমরা ভবন মালিকদের মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য কয়েক দফা সময় দিয়েছি। আজ বিকাল ৫টার মধ্যে তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য বলা হলেও তখন পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লোরে ৭০ ভাগ মালপত্র সরানোর কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর তারা সময় চাওয়ায় আরো দুই ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। এর পরও দেখা গেছে, কোনো কোনো ফ্লোরে বেশকিছু মালামাল রয়ে গেছে। সেগুলো নেয়ার জন্য মালিকরা যদি রাজউকের কাছে আবেদন করেন তাহলে রাজউক বিবেচনা করবে, কীভাবে সেগুলো তাদের কাছে হস্তান্তর করা যায়। আমরা সন্ধ্যা ৭টার পর ভবনটির ফ্লোরগুলো সিলগালা করে দিয়েছি।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হলো। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ছয় মাস ও পরে সাত মাস সময়ও পায় তারা। সর্বশেষ গত বছর নতুন করে এক বছর সময় পায় সংগঠনটি। সে সময় তারা মুচলেকা দেয়, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here