Home Apparel বাণিজ্যযুদ্ধের সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ

বাণিজ্যযুদ্ধের সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ

চলমান চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে অনেক মার্কিন ক্রেতা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকেছেন। সে জন্য পোশাক কারখানায় ক্রয়াদেশ বেড়েছে। রপ্তানিও বেড়েছে। ফলে তিন বছরের ব্যবধানে বড় এই বাজারে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) যুক্তরাষ্ট্রে ২৫৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের এই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২২১ কোটি ডলারের পোশাক। তার মানে, চলতি বছরের পাঁচ মাসে রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশ। বাজারটিতে শীর্ষ ছয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।

দেশের উদ্যোক্তারা বলছেন, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। অনেক নতুন ক্রেতা খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে সুযোগটা ব্যাপক হারে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কারণ, ক্রেতারা খুবই কম দামে পোশাক কিনতে চান। তা ছাড়া, অধিক মূল্য সংযোজনের পোশাক তৈরির সক্ষমতাসম্পন্ন কারখানার সংখ্যা খুবই কম।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক আমদানির হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরেছে। তাদের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৩ হাজার ৩১১ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। রানা প্লাজা ধসের পর বাজারটিতে পোশাক রপ্তানি কমে যায়। ২০১৭ সালে ৫০৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হলেও তা ছিল ২০১৬ সালের চেয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ কম। দীর্ঘ ১৫ মাস পর গত বছরের জানুয়ারিতে এই বাজারে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত গত বছর ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ৫৪০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। বাণিজ্যযুদ্ধই এই বাজারে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। জানতে চাইলে ঢাকাভিত্তিক রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন দুই ক্রেতা প্রতিষ্ঠান পেয়েছি আমরা। এক মৌসুমে বা ছয় মাসে তাদের জন্য আমরা ৪০ থেকে ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পোশাক তৈরি করেছি। তার বাইরে নিত্যনতুন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভালো করতে হলে চীনের উদ্যোক্তারা যেসব পোশাক তৈরি করে, সেসব পোশাক তৈরির চেষ্টা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মাহমুদ হাসান খান। তিনি বলেন, ‘নিট পোশাকের রপ্তানি বাড়াতে হলে ডিজিটাল প্রিন্টিংয়ে যেতে হবে। হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সেই চেষ্টা করছে। তা ছাড়া, সাধারণ সুতার পাশাপাশি উন্নত মানের সুতা উৎপাদনে যেতে হবে। সেটি হলে উন্নত মানের কাপড় পাওয়া যাবে। তাহলেই আমরা বেশি মূল্যের পোশাকের ক্রয়াদেশ পেতে পারি।’

বছরের প্রথম ৫ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ২৫৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি

গত বছরের এই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২২১ কোটি ডলারের পোশাক

চলতি বছরের পাঁচ মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশ

শীর্ষ ৬ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি সর্বোচ্চ

নারায়ণগঞ্জের এমবি নিট ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। কিন্তু দাম খুবই কম। কারখানা চালু রাখার জন্য উদ্যোক্তারা বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়ে হলেও ক্রয়াদেশ নিচ্ছেন। সে জন্য রপ্তানি আয় বাড়ছে। উদ্যোক্তারা যদি কিছু ক্রয়াদেশ ফিরিয়ে দিতেন, তাহলে খুব ভালো হতো।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের পাঁচ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ছয় পোশাক রপ্তানিকারকের মধ্যে প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের বেশি, ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এই সময়ে চীন সবচেয়ে বেশি ৯০৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের প্রবৃদ্ধি দশমিক ৩৭ শতাংশ। ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ৫৩০ কোটি ডলারের পোশাক। দেশটির রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশ।

এ ছাড়া চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ভারত ১৯৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়া পোশাক রপ্তানি করেছে ১৯১ কোটি ডলারের। তাদের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও কানাডার বাজারে পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ক্রেতা ধরতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সহায়তা করবে—এমন তথ্য দিয়ে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ক্রয়াদেশ কমপক্ষে ১০ শতাংশ বেড়েছে। কারখানাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়াদেশ আসার প্রবণতাও ভালো। তবে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের পোশাকশিল্প কতটুকু লাভবান হবে, সেটি বলার সময় আসলে এখনো আসেনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here