Home Apparel বড় চাপে পড়বে রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প

বড় চাপে পড়বে রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প

গ্যাসের দাম বাড়ায় রপ্তানিমুখী পণ্য সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বে। উৎপাদনব্যয় বাড়বে সুতা থেকে শুরু করে পোশাক প্রস্তুতেও। তুলা থেকে হয় সুতা, সুতা থেকে কাপড় আর কাপড় থেকে হয় পোশাক। এর ফলে সব স্তরেই দাম বাড়বে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি কাঁচামাল অর্থাৎ সুতা আমদানির দিকে ঝুঁকবেন ব্যবসায়ীরা। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্পে গ্যাসের ব্যবহার বেশি।

গ্যাসের দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়বে সব ক্ষেত্রে। রক্ষা পাবে না ডেনিম পোশাকও। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ডেনিমপোশাকের কদরই আলাদা। এ পোশাকের চাহিদা ভালো থাকায় অনেকেই ডেনিমের দিকে ঝুঁকছেন। ডেনিম পোশাক তৈরিতে গ্যাসের ব্যবহার অনেক বেশি। এর কাপড় মোটা হওয়ায় গ্যাসের চাপটাও থাকতে হয় বেশি। এ অবস্থায় পুরো সেক্টরই মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা।

জানা গেছে, প্রতিঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭ দশমিক ৩৮ টাকা থেকে ২ দশমিক ৪২ টাকা বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গড়ে দাম বেড়েছে ৩২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩ দশমিক ৮৫ টাকা, শিল্প ১০ দশমিক ৭০ টাকা নির্ধারণ করে। উদ্যোক্তারা বলছেন, গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় পদে পদে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এর প্রভাব পড়বে রপ্তানিতে। বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাবেন। সব দিক বিবেচনায় রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত বস্ত্র ও পোশাকশিল্পে গ্যাসের দাম পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, পোশাকের অন্যতম একটি আইটেম হচ্ছে নিট (গেঞ্জি) পোশাক। এ পোশাক তৈরির উপাদান সুতা দেশে তৈরি হয়। এ পোশাক তৈরিতে কয়েক স্তরে গ্যাস ব্যবহার করতে হয়। এ ধরনের পোশাকের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল দেশিভাবে উৎপাদন হয়। গ্যাসের দাম বাড়ায় প্রতিকেজিতে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে ৬-৭ টাকা। প্রত্যেক ডজনে (১২ পিস) উৎপাদন ব্যয় বাড়বে ২৮-৩০ টাকা। সবচেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহার হয় টেক্সটাইল খাতে। এ খাতের উৎপাদিত পুরোটাই গ্যাসের মাধ্যমে প্রস্তুত করতে হয়। ক্যাপটিভ গ্যাস জেনারেটরে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতিঘনমিটারে ৯ দশমিক ৬২ টাকা থেকে বেড়ে ১৩ দশমিক ৮৫ টাকা হয়েছে। ৫৮৫টি বস্ত্রকলে ক্যাপটিভ জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। প্রতিকেজি সুতার উৎপাদন খরচ বাড়বে ৬-৮ টাকা। অন্যদিকে ডেনিম (জিন্স) পোশাকে বয়লার, ওয়াশিং ও ডায়িং এই তিন স্তরে গ্যাসের ব্যবহার হয়। গ্যাসের দাম বাড়ায় প্রতিটি স্তরেই খরচ বেড়ে যাবে।

উৎপানকারীরা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ায় ডেনিম পোশকের উৎপাদন খরচ বাড়বে দেড় থেকে দুই শতাংশ। এসব খাতে গ্যাসের ব্যবহার খুবই বেশি। গার্মেন্টস খাতে গ্যাসের ব্যবহার একটু কম। অর্থাৎ এ পোশাক তৈরিতে পরে বয়লার ও ডায়িং করতে গ্যাসের ব্যবহার হয়। তাই এ খাতে গড়ে এক শতাংশ উৎপাদন ব্যয় বাড়বে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জ। এর পর গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে উদ্যোক্তারা কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে।

নিট পোশাক উৎপাদনে খরচ সম্পর্কে চানতে চাইলে নিটওয়্যার উৎপাদন ও রপ্তানিকারক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকাই কষ্টের। এর পর গ্যাসের দাম বাড়ায় সব ক্ষেত্রে দাম বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, সুতা তৈরি থেকে আয়রন পর্যন্ত এক ডজন গেঞ্জি তৈরিতে বাড়তি খরচ হবে ৫০-৫৫ সেন্ট। উৎপাদন ব্যয় বাড়ার সঙ্গে বিক্রিমূল্য বেশি হলে টিকে থাকা যেত। এখন যে অবস্থা তাতে উদ্যোক্তাদের ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া পথ নেই। তাই গ্যাসের দাম বিবেচনায় আগের দাম রাখারও অনুরোধ জানান এ ব্যবসায়ী।

বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন জানান, সবচেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহার হয় বস্ত্রশিল্পে। এ শিল্পের প্রায় পুরোটাই গ্যাসনির্ভর। এভাবে গ্যাসের দাম বাড়ালে এ শিল্প আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে। এতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতির মধ্যে পড়বে। তিনি জানান, গত পাঁচ বছরে তিন দফায় ক্যাপটিভ গ্যাস জেনারেটরে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বেড়েছে ২৫০ শতাংশ। এবার গ্যাসের দাম ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেলে বস্ত্রকল সইতে পারবে না।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক জানান, এবারে গ্যাসের দাম ৩৮ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার অর্থ উৎপাদন খরচ প্রায় ১ শতাংশ বেড়ে যাবে। রুগ্ণ পোশাকশিল্পে যারা সংগ্রাম করে টিকে আছে, তাদের জন্য এটি নতুন একটি আঘাত। তিনি আরও বলেন, গ্যাসের পরিস্থিতি কিন্তু এখনো উন্নত হয়নি। এখনো গ্যাসের চাপ সব সময় পুরোটা পাওয়া যায় না। কারখানাগুলো নানা চাপের মধ্যে আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের দামও বাড়েনি। এসব চ্যালেঞ্জ থাকলেও বিনিয়োগকে তেমনভাবে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে না। এর মধ্যে হঠাৎ করে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যাবসায়িক পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হবে।

ডেনিম এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল আমাদের সময়কে জানান, গ্যাসের দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ডেনিম খাত। কারণ এ খাত আন্তর্জাতিক বাজারে উদীয়মান। এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। চাহিদা বাড়লেও বাজারে দাম বাড়েনি। ক্রেতারা পারলে দাম আরও কমানোর চেষ্টা করছেন। শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। এ অবস্থায় লাভ তো দূরে থাক ব্যাংক ঋণ শোধ করাই উদ্যোক্তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here