তৈরি পোশাকসহ সব খাতের উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন অর্থবছর শুরু হওয়ার মাস চারেক পর এই কর কমানো হয়। ২১ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকেই তা কার্যকর করা হয়। কিন্তু তৈরি পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ চায়, সুবিধাটি যেন ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়।
যেদিন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, সেদিনই বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক এনবিআরের চেয়ারম্যানকে এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি তৈরি পোশাক খাতের চলমান দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরেন। এই বিবেচনায় তিনি ১ জুলাই থেকে নতুন উৎসে করহার কার্যকর চান।
এদিকে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে রপ্তানি পণ্যের ওপর ১ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হয়েছে। এখন বিজিএমইএ পোশাক খাতে হ্রাসকৃত উৎসে করের হার ১ জুলাই থেকে কার্যকরের দাবি জানিয়েছে। রপ্তানি পণ্য বিদেশে যাওয়ার আগে রপ্তানিমূল্যের ওপর উৎসে কর কাটা হয়। পণ্য উৎপাদন থেকে বন্দরে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক মূল্যকে রপ্তানিমূল্য হিসেবে ধরা হয়।
এই বিষয়ে এনবিআরের সদস্য কানন কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানি খাতে নতুন উৎসে কর তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে। এখন ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা বেশ কঠিন। কারণ, ইতিমধ্যে রপ্তানি পর্যায়ে অনেক টাকা উৎসে কর হিসেবে কাটা হয়ে গেছে। অর্থবছরের শুরু থেকে এটি কার্যকর করা হলে কেটে নেওয়া টাকা কীভাবে সমন্বয় করা হবে? সমন্বয় করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল।
কানন কুমার রায় আরও বলেন, অনেক রপ্তানিকারক হয়তো রপ্তানি করে ফেলেছেন, চলতি অর্থবছরে আর কোনো রপ্তানি করবেন না—আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁদের টাকা তো সমন্বয় করা যাবে না।
বিজিএমইএর চিঠিতে রপ্তানি পোশাক খাতের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ রপ্তানি আয় অর্জনকারী এই শিল্পটি বর্তমানে দেশ-বিদেশে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তাই এই খাতকে সহায়তা দেওয়ার অংশ হিসেবে উৎসে কর কমানো হয়েছে। নতুন প্রজ্ঞাপনে ভূতাপেক্ষ সময় উল্লেখ করা হয়নি। এর ফলে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। বর্তমানে পোশাকশিল্প ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যাহত দরপতন, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
বিজিএমইএর সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনো প্রজ্ঞাপন অর্থবছরের প্রথম থেকেই হওয়া উচিত। পোশাক খাতের চলমান পরিস্থিতির কারণে আমরা তৈরি পোশাকের উৎসে করের হারও জুলাই থেকে চাই। এমনটি আগেও হয়েছে।’ কিন্তু কেটে নেওয়া উৎসে কর কীভাবে সমন্বয় করা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক চাইলে কেটে নেওয়া অর্থ সমন্বয় করতে পারে।
আগেও রপ্তানিপণ্যের ওপর ১ শতাংশ হারে উৎসে কর ছিল। তবে প্রজ্ঞাপন দিয়ে কিছু কিছু পণ্যের উৎসে কর কমিয়ে দেওয়া হতো। যেমন তৈরি পোশাক খাত বহু বছর ধরে এই সুবিধা পাচ্ছে। প্রতিবছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এনবিআর প্রজ্ঞাপন দিয়ে তৈরি পোশাকসহ বেশ কিছু খাতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উৎসে কর আরও কমিয়েছে। সর্বশেষ দশমিক ২৫ শতাংশ হারের উৎসে করের মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে, অর্থাৎ আগামী বছরের জুন মাসে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, তৈরি পোশাক খাত থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা উৎসে কর পাওয়া গেছে। এর আগের ২০১৭-১৮ বছর ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মতো মিলেছে। তার আগের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
তৈরি পোশাক দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত। পোশাক খাতের পর চামড়া ও পাটপণ্য থেকে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়।