Home Apparel এশিয়ায় গার্মেন্ট শিল্পে ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধ বাড়ছে

এশিয়ায় গার্মেন্ট শিল্পে ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধ বাড়ছে

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে কোয়ারান্টাইন ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মতো ঘটনায় চীনসংশ্লিষ্ট সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে এশিয়াজুড়ে কারখানা সাময়িক বন্ধ ও ছাঁটাই এরই মধ্যে মহাদেশটির স্বল্প মজুরির শ্রমিকদের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। খবর রয়টার্স। হান্টার মিয়ানমার অ্যাপারেল কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন ৩১ বছর বয়সী আয়ে সু থান। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আকস্মিকভাবেই কোম্পানির ৯০০ কর্মীকে ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। মাসে ১৩০ ডলার আয় করা পাঁচ মাসের গর্ভবতী আয়ে সু থান জানান, কোম্পানি কারণ হিসেবে জানিয়েছে, তাদের কাছে কোনো কার্যাদেশ নেই, কোনো বায়ার নেই। ভাইরাসের কারণে তারা কারখানা বন্ধ করে দেবে বলে জানিয়েছে। উল্লেখ্য, ইতালির একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক উৎপাদন করত কোম্পানিটি। ছাঁটাইয়ের ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোম্পানি থেকে ৩২০ ডলার পেয়েছেন আয়ে সু থান। চাকরি চলে যাওয়ায় অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন আয়ে সু থান জানেন না এখন কী করবেন; কারণ এ মুহূর্তে কোথাও চাকরি পাওয়া সহজ নয়। এশিয়ার বহু অঞ্চলেই এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা একের পর এক ঘটছে। বিশেষ করে মহাদেশটির ২৯ হাজার কোটি ডলারের বস্ত্র শিল্প ব্যাপক ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধের ঘটনায় জর্জরিত। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য অনুসারে, ২০১৫ সালে বিশ্বের ৬০ শতাংশ তৈরি পোশাক, বস্ত্র ও জুতা শিল্পে অবদান রেখেছে এশিয়া। চীন থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও কোয়ারান্টাইনের ফলে যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এতে নিম্ন মজুরির শ্রমিকরা বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। মহামারী বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকেই বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ইউনিক্লো থেকে শুরু করে এডিডাসের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর বিশ্বব্যাপী সরবরাহকারীদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং চীনে তৈরি উৎপাদন শূন্যতা পূরণে ব্র্যান্ডগুলো চাইলে দেশটির বাইরে উৎপাদন সরিয়ে নিতে পারে। উল্লেখ্য, বিশ্বের বৃহত্তম অ্যাপারেল ও টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারার চীন। এখন পর্যন্ত পোশক শিল্পের সোর্সিংগুলো ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কারখানাগুলো গভীরভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীল; বিশেষ করে কাপড়, বোতাম ও জিপারের মতো পণ্য সরবরাহের শীর্ষ উৎস দেশটি। সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাঘাতের কারণে এরই মধ্যে ১০টি কারখানা কার্যক্রম বন্ধের আবেদন জানিয়েছে বলে চলতি সপ্তাহে কম্বোডিয়া জানিয়েছে। প্রায় তিন হাজার শ্রমিকের আংশিক বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলো। ভাইরাসের কারণে চলতি মাসে মোট ২০০ কারখানা উৎপাদন বন্ধ বা কমিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে দেশটি। এতে প্রায় এক লাখ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উল্লেখ্য, ৭০০ কোটি ডলারের বস্ত্র খাত কম্বোডিয়ায় কর্মসংস্থানের বৃহত্তম উৎস। খাতটিতে সাড়ে আট লাখের বেশি শ্রমিক রয়েছেন। অন্যদিকে চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প রয়েছে বাংলাদেশে। দেশটিতে কারখানাগুলো এখনো সচল থাকলেও ক্রমে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশটির অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি তৈরি পোশাক শিল্প। প্রতিবেশী মিয়ানমারে তুলনামূলক ক্ষুদ্র শিল্পটি অনেক বেশি চীননির্ভর। মিয়ানমার গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সতর্ক করে জানিয়েছে, সংকট অব্যাহত থাকলে চলতি মাস নাগাদ দেশের ৫০০ কারখানার অর্ধেকই বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মিয়ানমারে আসা প্রায় ৯০ শতাংশ ফ্যাব্রিকস সরবরাহ করে চীন। মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভাইরাসের বিস্তার রোধে স্থলসীমান্ত বন্ধের পদক্ষেপ সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। নভেল করোনাভাইরাস সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে শেষ পর্যন্ত খুচরা বিক্রেতাগুলোকে পোশাক সংকটে পড়তে হতে পারে। তবে সুইডিশ ফ্যাশন জায়ান্ট এইচঅ্যান্ডএম জানিয়েছে, এ মুহূর্তে ভাইরাসের কারণে সরবরাহে বড় ধরনের কোনো দেরি দেখা যায়নি। এদিকে ফ্যাব্রিক থেকে শুরু করে বোতাম ও জিপার পর্যন্ত পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্ট সব ধরনের পণ্যের বিকল্প সরবরাহকারক খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ম্যানুফ্যাকচারাররা। কাঁচামালের বিকল্প সরবরাহকারক হিসেবে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও ভারতের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এতে ব্যয় বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রফতানিকারকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here