Home Apparel কারখানা খোলার সঙ্গে বাড়ছে শ্রম অসন্তোষও

কারখানা খোলার সঙ্গে বাড়ছে শ্রম অসন্তোষও

নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে দেশব্যাপী কারখানা চালু হওয়ার পর দিনে দিনে এ সংখ্যা বাড়ছে। কারখানা চালু করার পর দ্বিতীয় দিন গতকাল ৪০০ কারখানা নতুন করে খুলেছে। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ৮২০টি কারখানায় উৎপাদন কাজ হয়েছে। তবে কারখানা খোলার সঙ্গে শ্রম অসন্তোষও বাড়ছে। রবিবার দেশব্যাপী ২০টি কারখানায় শ্রম অসন্তোষের খবর পাওয়া গেলেও গতকাল সোমবার এই সংখ্যা ৩৫টিতে দাঁড়িয়েছে বলে শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। শ্রমিক ছাঁটাই, বেতন-ভাতা ও লে-অফ ইস্যুতে মূলত শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন।

গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ এক পর্যায়ে সহিংসতায় রূপ নেয়। এ সময় একাধিক কারখানার শ্রমিকরা জড়ো হয়ে কয়েকটি কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে কারখানার প্রাঙ্গণে থাকা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গতকালও চাকরি রক্ষায় শিল্পাঞ্চলমুখী শ্রমিকদের আসতে দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে। শ্রমিক নেতারা বলছেন, কারখানা খুললেও শ্রমিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে—তাদের চাকরি থাকবে কি না। তারা আসলে নিশ্চিত হতে চায়, তাদের চাকরি যাবে না। এছাড়া বেতনভাতা, ছাঁটাই আর লে-অফ (সাময়িক বন্ধ ঘোষণা) ইস্যুতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। শ্রমিকনেতা ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন ইত্তেফাককে বলেন, ইতিমধ্যে ১৩ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হওয়ার তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। প্রকৃত ছাঁটাই এর চেয়ে অনেক বেশি।

গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ইত্তেফাককে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রতি সম্মান রেখে আমরা এখন কোনো কারখানাতে শ্রমিক ছাঁটাই না করতে মালিকপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছি। আগামী দুই মাস কোনো শ্রমিক ছাঁটাই হবে না। তবে তিনি অভিযোগ করেন, বেশকিছু কারখানায় শ্রমিকরা অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছেন। তিনি বলেন, সরকার এবং গার্মেন্টস খাতকে বেকায়দায় ফেলতে এর পেছনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, তা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাকে খোঁজ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সবচেয়ে বেশি অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরে। এছাড়া আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামেও অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে।

আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় গতকাল সকালে বকেয়া বেতন ও লে-অফ থাকা স্টাইলিশ গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে শিল্প পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জালাল উদ্দিন জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোগড়া এলাকার স্টাইলিশ গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ এক মাস আগে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে। লে-অফ করার আগে ৩০ শ্রমিক ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৬০ শতাংশ বেতন বকেয়া ছিল। দুই দিন ধরে কারখানার শ্রমিকরা বন্ধ কারখানা দ্রুত খুলে দেওয়া এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তারা কারখানার সামনে জড়ো হন। তারা ঐ কারখানার আশপাশে চলমান ভলমন্ট ফ্যাশন, ক্রাউন ফ্যাশন, টেকনো ফাইবার কারখানার শ্রমিকদের কাজ না করার আহ্বান জানান এবং ঐসব কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে তারা ক্রাউন ফ্যাশন কারখানার সামনে মহাসড়কের পাশে পার্কিং করা তিনটি মোটরসাইকেল ও আটটি বাইসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন। পরে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

সাভার থেকে ইত্তেফাকের স্টাফ রিপোর্টার জানান, সেখানেও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ ও চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। এছাড়া নতুন করে কারখানা চালু হলেও স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে কাজ করতে অনীহা জানিয়ে কয়েকটি কারখানা থেকে শ্রমিকদের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ তালিকায় রয়েছে আশুলিয়ার ধনাইদ এলাকার ‘সিগমা ফ্যাশন লিমিটেড’, হা-মীম গ্রুপের কারখানা, জামগড়ার নেক্সট কালেকশন, সাভারের উলাইল এলাকার কে এল ডিজাইন অ্যাপারেলস। অবশ্য গত রাতে যোগাযোগ করা হলে হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদ ইত্তেফাককে বলেন, তার কারখানায় তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। বুধবার থেকে কারখানা খুলবে।

গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের পাশাপাশি লে-অফ, ছাঁটাই বন্ধে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

শিল্পাঞ্চল পুলিশের এসপি মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, গতকাল সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫টি কারখানায় শ্রম অসন্তোষ ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এখনো প্রায় ৬০০ কারখানা বেতন পরিশোধ করেনি। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য কারখানা রয়েছে শতাধিক। বেতন-ভাতা, ছাঁটাই, লে-অফ ইস্যুর পাশাপাশি কারখানায় ব্যক্তিগতভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া, কারখানায় শ্রমিকদের দূরত্ব বাড়ানোর দাবিতে গণ্ডগোল করছে।

নতুন করে ৪০০ কারখানা খুলেছে: গতকাল সোমবার নতুন করে আরো ৩৯৩টি কারখানা খুলেছে। অবশ্য এ তালিকায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) আওতাধীন কারখানার হিসাব নেই। ঐ হিসাব যুক্ত হলে চালু হওয়া কারখানার সংখ্যা আরো বাড়বে।

নৌঘাটে ঢাকামুখী শ্রমিকদের ভিড় বাড়ছে: এদিকে গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার খবরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা শিল্পাঞ্চলের দিকে আসছে। ক্রমেই এ ভিড় বাড়ছে। যদিও সরকারের নির্দেশনা ছিল, দূরবর্তী শ্রমিকদের না এনে স্থানীয়দের দিয়ে উত্পাদনকাজ চালাতে হবে। তবে দূরবর্তী শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় শ্রমিকরা ঢাকামুখী হচ্ছে বলে জানা গেছে।

আমাদের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শিমলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুট দিয়ে সোমবার সকাল থেকেই ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে মানুষজন। এর বেশির ভাগ যাত্রীই গার্মেন্টস ও কলকারখানার শ্রমিক। যে যেভাবে পারছেন, ঢাকামুখী হচ্ছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here