Home Apparel শ্রমিকের মজুরি দেয়নি দুই হাজার কারখানা

শ্রমিকের মজুরি দেয়নি দুই হাজার কারখানা

করোনার এই সংকটে মাসের অর্ধেক শেষ হয়ে গেলেও সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও খুলনার প্রায় দুই হাজার কারখানা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করেনি। এসব এলাকায় তৈরি পোশাক, বস্ত্র, সিরামিক, জুতা, পাটকলসহ বিভিন্ন ধরনের কারখানা রয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার। শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও খুলনায় কারখানার সংখ্যা ৭ হাজার ৬২৯। তার মধ্যে পোশাক ও বস্ত্র কারখানার সংখ্যা ৩ হাজার ৪০৫। বাকি ৪ হাজার ২২৪টি অন্য কারখানা। তবে শিল্প পুলিশের হিসাবে, ঢাকা মহানগরীর শিল্পকারখানার তথ্য-উপাত্ত নেই। শিল্প পুলিশের সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭ হাজার ৬২৯ কারখানার মধ্যে ৫ হাজার ৬২৫টি শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করেছে। বাকি ২ হাজার ৩৬টি কারখানা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মজুরি দেয়নি। অবশ্য ১৬ এপ্রিলের মধ্যে মজুরি দিতে ব্যর্থ কারখানা–মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। গত সোমবার প্রতিমন্ত্রীর এই বিবৃতির পর বুধবার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) বিজ্ঞপ্তিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মজুরি না দিতে ব্যর্থ কারখানা–মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আগামী অর্থবছর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না বলে জানিয়েছে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে মজুরি দিতে ব্যর্থ দুই হাজার কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে ডিআইএফইর মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায়ের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে যোগযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

পোশাকশ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ ১৬ এপ্রিলের মধ্যে মজুরি পরিশোধ করতে তাদের সদস্যদের প্রতি অনুরোধ করেছিল। তবে অনেক কারখানার মালিকই নির্ধারিত সময়ে মজুরি দিতে পারেননি। মজুরি না পেয়ে রাজধানীর পাশাপাশি সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহে ৫০টির বেশি পোশাক ও বস্ত্র কারখানার শ্রমিকেরাও বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেন। বিভিন্ন মহাসড়ক অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ দাবি করেছে, তাদের সংগঠনের সরাসরি রপ্তানিকারক ২ হাজার ২৭৪টি কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মজুরি দিয়েছে ৭২ শতাংশ বা ১ হাজার ৬৬৫টি কারখানা। তাতে ২৪ লাখ ৭২ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৮৭ শতাংশ বা ২১ লাখ ৫৯ হাজার মজুরি পেয়েছে বলে দাবি করছে তারা। অন্যদিকে বিকেএমইএ দাবি করেছে, তাদের সচল কারখানা ৮৩৩টি। তার মধ্যে গতকাল ৫১৩ কারখানার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কারখানাগুলোর মধ্যে ৪৭৭টি মজুরি পরিশোধ করেছে। শিল্প পুলিশ জানায়, সাভার ও আশুলিয়ার এ ওয়ান বিডি, অ্যালাইন অ্যাপারেল, ফিউচার ক্লোথিং, আদিয়ার অ্যাপারেলস, জেড অ্যাপারেলস, ক্রিস্টাল কম্পোজিট, জেড বিডি অ্যাপারেল, পেনটাফোর্ড অ্যাপারেলসসহ ১২ কারখানার শ্রমিকেরা বৃহস্পতিবার মজুরি না পেয়ে বিক্ষোভ করেন। গাজীপুরের মাদার ফ্যাশন, শাহ মাকদুম গার্মেন্টস, প্রিন্স সোয়েটার, কেজি গার্মেন্টস, এলাবার্ট ফ্যাশন, স্টাইল ক্রাফট, উলেন ওয়্যার, ডিজাইন এক্সিস, আয়েসা ও গালিয়া ফ্যাশন, বডি ফ্যাশনসহ ২২ কারখানার শ্রমিকেরা মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের টিএস স্পোর্টস, ফাহিম ফ্যাশন, মার্টিন নিটওয়্যার ও মনোরম অ্যাপারেলস এবং চট্টগ্রামের ড্রাগনি ফ্যাশন, এঅ্যান্ডবি ফ্যাশন এবং এক্সিম ফ্যাশনের শ্রমিকেরা মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। ময়মনসিংহের আইডিয়াল স্পিনিং, ইমপ্রোসিভ টেক্সটাইল, সাবাব ফেব্রিকস, সীমা স্পিনিং, বাশার স্পিনিং, গ্লোরি স্পিনিং, ওরকিট জিও টেক্সটাইল, এমজি কটনসহ আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা মজুরি না পেয়ে বিক্ষোভ করেন বলে নিশ্চিত করেছে শিল্প পুলিশ। জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘আমাদের সদস্য কারখানার ৮৭ শতাংশ শ্রমিক মজুরি পেয়ে গেছে। যেসব কারখানা এখনো মজুরি দেয়নি, তাদের অধিকাংশই ছোট ও মাঝারি। আমরা আর্থিক সংকটে থাকা কারখানাগুলোকে সহায়তায় কাজ করছি। তা ছাড়া লকডাউনের কারণেও মজুরি প্রদান কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।’
অন্যদিকে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, যেসব কারখানা মজুরি পরিশোধ করেনি, তাদের অধিকাংশই আগামী সপ্তাহে দেবে। তবে কিছু কারখানা আর্থিক সংকটের কারণে ২৬ এপ্রিল, এমনকি ৩০ এপ্রিল দেবে বলে জানাচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক জুলহাস নাইন বাবু ও সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এক যৌথ বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার বলেছেন, একদিকে করোনার আতঙ্ক আর অন্যদিকে মজুরির অর্থ না পাওয়ার আতঙ্কে শ্রমিকেরা হিমশিম খাচ্ছেন। আজকের বিপদের দিনে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব সরকার, মালিক ও ক্রেতাদের। তাঁরা বলেন, মালিকপক্ষ যদি মজুরি দিতে না পারে, তাহলে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের বিপদে জরুরি নিরাপত্তা তহবিল গঠনের জন্য মালিক ও বিদেশি ক্রেতাদের চাপ দিতে হবে। অনেক কারখানা মজুরি পরিশোধ না করা ও কারখানা লে-অফ ঘোষণার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শ্রম ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, গত চার সপ্তাহে কমপক্ষে ৩০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছে। পরে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রমিকদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েই ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকের তালিকাটি করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here