Home বাংলা নিউজ করোনায় চট্টগ্রামের ফ্যাশন শিল্পে ধস

করোনায় চট্টগ্রামের ফ্যাশন শিল্পে ধস

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় পড়াশোনা শেষ করে ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে পেশা শুরু করেন এইচ এম ইলিয়াস, গড়ে তোলেন ফ্যাশন হাউস ‘শৈল্পিক’। ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে একটি শোরুম খোলেন তিনি। ধীরে ধীরে সারাদেশে নামি ফ্যাশন ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় শৈল্পিক। গত ১৬ বছরে চট্টগ্রামে ১৬টিসহ সারাদেশে ৩৪টি আউটলেট দেন তিনি। এসব আউটলেটে ২০১৯ সালের পহেলা বৈশাখ ও রমজানের ঈদে ১২ কোটি টাকার দেশি পোশাক বিক্রি হয়েছে। চলতি বছরও এ দুই উৎসবে পোশাক বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১৫ কোটি টাকার। কিন্তু করোনা দুর্যোগের কারণে গত মার্চ থেকে মে পর্যন্ত মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ থাকায় বন্ধ ছিল সবগুলো আউটলেট। ফলে লক্ষ্যমাত্রার এক শতাংশও বিক্রি হয়নি। আগে শুধু রমজানে যেখানে ১০-১২ কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হতো, সেখানে এবার হয়েছে মাত্র ৪-৫ লাখ টাকার, তাও অনলাইনে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে। বর্তমানে শৈল্পিকের ৩৪টি আউটলেটে প্রায় ২০ কোটি টাকার পোশাক অবিক্রীত পড়ে আছে। মার্কেট-শপিংমল খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই। অথচ প্রতি মাসে আউটলেটের ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৩০ লাখ টাকা। করোনার কারণে চট্টগ্রামের অর্ধশতাধিক নামি বুটিক হাউস ও ফ্যাশন ব্র্যান্ডসহ দুই শতাধিক ফ্যাশন হাউস ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পহেলা বৈশাখ ও ঈদের জন্য তৈরি করা প্রায় ৫০ কোটি টাকার দেশি পোশাক অবিক্রীত পড়ে আছে। ডলস হাউস, রওশনসসহ কয়েকটি ফ্যাশন হাউসের পোশাক আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি হতো। করোনার কারণে তাও বন্ধ। বর্তমানে অনেক উদ্যোক্তা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে। দেশি পোশাকের এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারি প্রণোদনা, ট্যাক্স ও ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফের দাবি জানিয়েছেন তারা। ফ্যাশন ডিজাইনাররা জানান, চলতি বছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে যেসব পোশাক তৈরি করা হয়েছে, পরের ঈদে বা পহেলা বৈশাখে তা আর বিক্রির সুযোগ নেই, কারণ তখন ডিজাইন পাল্টে যাবে। চট্টগ্রামের শতকরা ৮০ ভাগ ফ্যাশন হাউসের উদ্যোক্তা হলেন নারী। তাদের বড় একটি অংশ ঘরেই শোরুম খুলে ফ্যাশন ডিজাইন, পোশাক তৈরি ও বিক্রি করেন। আবার দেশ-বিদেশের নাম করা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া উদ্যোক্তাও আছেন। চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ফ্যাশন ব্র্যান্ড ডলস হাউসের স্বত্বাধিকারী আইভি হাসান জানান, আমেরিকা ও কানাডার বাঙালিদের কাছে তার পোশাকের বেশ চাহিদা রয়েছে। গত পহেলা বৈশাখে কানাডা থেকে শাড়ি, পাঞ্জাবি ও সালোয়ার-কামিজের বড় একটা অর্ডার ছিল। করোনার কারণে তা বাতিল হয়েছে। আইভি বলেন, ‘আমি অস্ট্রেলিয়ান প্যাটার্ন আর বাংলাদেশের ফেব্রিক নিয়ে পোশাক তৈরি করি। আমার প্রতিষ্ঠানের টপস, গাউনসহ নানা পোশাকের বেশ কদর রয়েছে অস্ট্রেলিায়। কিন্তু করোনার কারণে দেশের বা বিদেশের কোনো অর্ডারই নেওয়া যাচ্ছে না, তাই পোশাক তৈরিও বন্ধ। কর্মীদের বেতন দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।’ চট্টগ্রামের আরেকটি নামি ফ্যাশন ব্র্যান্ড হলো জেন্টলম্যান। জেন্টলম্যানের চট্টগ্রামে সাতটি, ঢাকায় তিনটি ও কক্সবাজারে একটিসহ ১১টি আউটলেট রয়েছে। জেন্টলম্যানের পরিচালক ওয়াহিদ আলম বলেন, ‘১১টি আউটলেটে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার পোশাক রয়েছে। কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। অথচ মাসে প্রায় সাত লাখ টাকা দোকান ভাড়া দিতে হচ্ছে। কর্মচারী আছেন ৬০ জন। কষ্ট করে তাদের বেতন দিয়ে যাচ্ছি, কতদিন দিতে পারব জানি না।’ চট্টগ্রাম ডিজাইনার্স ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা রওশন আরা চৌধুরী বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে বছরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হতো। মাসে বিক্রি হতো ৪০-৪৫ লাখ টাকার। অথচ গত সাড়ে তিন মাস ধরে শোরুম বন্ধ। শোরুম ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ মাসে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে, অথচ আয় নেই এক টাকাও।’ চট্টগ্রামের ব্যতিক্রমী ফ্যাশন হাউস কৃষ্টিতে শুধু কাঁথা-ফোঁড়ের পোশাক তৈরি হয়। চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের পরিচালক ও কৃষ্টি বুটিক হাউসের উদ্যোক্তা নূজহাত নূয়েরী বলেন, ‘আমি দেশি ঐতিহ্যের কাঁথা-ফোঁড়ে পোশাক তৈরি করি। গত পাঁচ বছরে অনলাইনে সারা দেশে আমার বড় একটা ক্রেতা গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে অনলাইনেও আর পোশাক বিক্রি হচ্ছে না।’ ফ্যাশন পরিচালক সালেহ রবি জন বলেন, ‘করোনার কারণে চট্টগ্রামের ফ্যাশন শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কোরিওগ্রাফার, মডেল, মেকআপ আর্টিস্ট ও ফটোগ্রাফাররাও চরম ক্ষতিগ্রস্ত। করোনার কারণে ফ্যাশন জগতের অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ আজ বেকার।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here