Home বাংলা নিউজ রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নে নতুন পদ্ধতি।। বিপাকে গার্মেন্টস মালিকরা

রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নে নতুন পদ্ধতি।। বিপাকে গার্মেন্টস মালিকরা

রপ্তানি পণ্যের নতুন শুল্কায়ন পদ্ধতিতে সংশয় প্রকাশ করেছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনিবআর) অস্যাইকুডা শাখা থেকে রপ্তানি পণ্য স্টাফিংয়ের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আবশ্যিকভাবে শুল্কায়ন কার্যক্রম শেষ করে সংশ্লিষ্ট শুল্কায়ন তত্ত্বাবধানকারী সহকারী/ডেপুটি কমিশনারকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বিজিএমইএ নেতারা বলছেন, বর্তমানে অফডক সমূহে কাস্টমস কর্মকর্তার স্বল্পতা রয়েছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রপ্তানি পণ্য চালান স্টাফিং পরবর্তীতে বিল অব এঙপোর্ট শুল্কায়ন করা হলে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ ও জটিলতা হবে। এতে সহজে পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। এছাড়া অফডকগুলোতে বর্তমানে রপ্তানি চালানের শুল্কায়ন পরবর্তীতে কায়িক পরীক্ষা হয়ে থাকে। সাধারণত রাতের বেলায় অফডকে সব সময় কাস্টমস কর্মকর্তা উপস্থিতি থাকে না। এছাড়া স্ট্যাফিং পরবর্তীতে শুল্কায়ন হলে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণসহ জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে ক্রেতার নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে নির্দিষ্ট জাহাজে রপ্তানি চালান প্রেরণ সম্ভব হবে না। তবে রাজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে শর্ট শিপমেন্টের তথ্য হালনাগাদ করা হলে রপ্তানি কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এদিকে এনবিআরের অ্যাসাইকুডা শাখা থেকে নতুন রপ্তানি শুল্কায়ন পদ্ধতি নিয়ে বলা হয়েছে, রপ্তানি পণ্য চালানের বিল বিল অব এক্সপোর্ট, অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে সাবমিট হওয়ার পর স্টাফিং পর্যায়েই পণ্যের কায়িকা পরীক্ষা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সম্পন্ন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের ইন্সপেকশন অ্যাক্ট-এ পরীক্ষণ প্রতিবেদন সংক্রান্ত তথ্য সন্নিবেশিত করতে হবে। অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে উক্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী শুল্কায়নকারী সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক পণ্যের বিবরণ, সংখ্যা, মূল্য ইত্যাদি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে হালনাগাদকৃত তথ্যের ভিত্তিতে বিল অব এঙপোর্ট, রাজস্ব কর্মকর্তা পর্যায়ে রি-রাউটিংয়ের মাধ্যমে শুল্কায়ন সম্পন্ন করতে হবে। কোনো তথ্যগত বিভ্রান্তি বা সমস্যা পরিলক্ষিত হলে তা সংশ্লিষ্ট রপ্তানি শুল্কায়ন গ্রুপ তত্ত্বাবধায়নকারী সহকারী/ডেপুটি কমিশনারের নজরে আনতে হবে। এরপরও কোনো বিশেষ কারণে দাখিলকৃত তথ্য সংশোধনের প্রয়োজন হলে তা সংশ্লিষ্ট শুল্কায়ন গ্রুপ তত্ত্বাবধায়নকারী সহকারী/ডেপুটি কমিশনারের নজরে এনে প্রয়োজনীয় অনুমোদন গ্রহণপূর্বক পোস্ট এন্ট্রির মাধ্যমে শুল্কায়ন সংশোধন করতে হবে। স্টাফিংয়ের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আবশ্যিকভাবে শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা এবং সংশ্লিষ্ট শুল্কায়ন গ্রুপ তত্ত্বাবধায়নকারী সহকারী/ডেপুটি কমিশনারকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখিত প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে অংশীজনদের সাথে প্রয়োজনীয় আলোচনা সম্পন্ন করে কাস্টম হাউস/কমিশনারেটসমূহ কর্তৃক এই লক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চিঠিতে এনবিআরের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে- আজ ১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন শুল্কায়ন পদ্ধতির পরীক্ষামূলক পরিচালনা করা এবং শুল্কায়নকারী কাস্টমস কর্মকর্তা এবং সিএন্ডএফ এজেন্টকে অবহিত করে প্রযোজ্যক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয়ের প্রয়োজন হলে তা এনবিআরের অ্যাসাইকুডা শাখা এবং সংশ্লিষ্ট আইটি টিমের নজরে এনে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের আগে সম্পন্ন করতে হবে। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন শুল্কায়ন পদ্ধতি পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর করতে হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর। এদিকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংশোধনের জন্য যেসব রপ্তানি চালান অনিষ্পন্ন রয়েছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সঠিক তথ্য নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এরপর অনিষ্পন্ন চালানের সংখ্যা নির্ধারণ ও কী প্রক্রিয়ায় তার শুল্কায়ন সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রস্তাব চেয়েছে এনবিআর। জানা গেছে, নতুন রপ্তানি শুল্কায়ন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয়ের প্রয়োজন হলে তা এনবিআরের অ্যাসাইকুডা শাখা ও সংশ্লিষ্ট অ্যাসাইকুডা আইটি টিমের নজরে এনে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের আগেই সম্পন্ন করতে হবে। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বন্দর দিয়ে রপ্তানি কার্যক্রমে পূর্ণাঙ্গভাবে এ পদ্ধতি কার্যকরের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে এনবিআরের পক্ষ থেকে। কাস্টমস কর্তারা জানান, বর্তমান তৈরি পোশাক রপ্তানি কার্যক্রমে ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত ইএঙপি (এঙপোর্ট পারমিশন) এর ওপর ভিত্তি করে রপ্তানিকারক/সিএন্ডএফ এজেন্ট বিল অব এঙপোর্ট কাস্টমস অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে দাখিল করে। পরবর্তীতে অফগুলোতে কাস্টমস কর্মকর্তারা রপ্তানি পণ্য চালানের কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করে চালান জাহাজিকরণ করা হয়। ইএঙপিতে ঘোষিত পণ্যের তুলনায় কায়িক পরীক্ষাকালে কম পণ্য পাওয়া গেলে বিল অব এঙপোর্টের ওখানে শর্ট শিপমেন্টের লিখে রাখা হয়। তবে শর্ট/এঙেস শিপমেন্টের বিষয়টি অ্যাসাইকুডা ওয়াল্ড সিস্টেমে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে সংশোধন না করে শর্ট শিপমেন্ট সার্র্টিফিকেট ইস্যু করা বর্তমান পদ্ধতির কারণে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্যে তারতম্য দেখা যাচ্ছে। তথ্যের সমন্বয় বা সংশোধন ছাড়া রপ্তানিকারকের পক্ষে শর্ট শিপমেন্টের বাকি পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। ফলে রপ্তানি মূল্য আংশিক শিপমেন্ট হয়নি দেখানো হয়। এতে রপ্তানিকারকরা নগদ সহায়তা এবং ইডিএফ লোন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দাবি করা হচ্ছে।
রপ্তানিতে নতুন এই শুল্কায়ন পদ্ধতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার ও বিজিএমইএর পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ দৈনিক আজাদীকে বলেন, পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে এনবিআর ট্রায়াল বেসিসে রপ্তানিতে নতুন শুল্কায়ন পদ্ধতি পরিচালনা করবে বলে জেনেছি। এই উদ্যোগটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে আমাদের কিছু সমস্যাও আছে। আমরা এতদিন ব্যাংক থেকে ইএঙপি দিয়ে তারপর শিপিং বিল সাবমিট করে পণ্যের শুল্কায়ন করতাম এবং শুল্কায়ন শেষে কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন হলেই আমরা সকল ধরণের রপ্তানি কাগজ হস্তান্তর করতাম। তবে এখন আমরা চাচ্ছি, শুল্কায়ন এবং কায়িক পরীক্ষা একই সাথে হোক। এছাড়া শুল্কায়নের ক্ষমতা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কিংবা রাজস্ব কর্মকর্তাকে দেয়া হোক। অন্যদিকে আমরা সর্বশেষ বেশ কয়েক মাস ধরে শর্ট শিপমেন্ট নিয়ে বেকায়দায় আছি। আমরা ইএঙপি করার পর দেখা যাচ্ছে, কোনো কারণে শর্ট শিপমেন্ট হলে তার কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে হালনাগাদ হচ্ছে না। পরে যখন আমরা সেইসব পণ্য রপ্তানি করা চাই, তখন সিস্টেমে পণ্য রপ্তানি হয়ে গেছে, এমনটাই দেখায়। এখন আবার স্টাফিং পর্যায়ে শুল্কায়নের কথা বলা হচ্ছে। স্টাফিং পর্যন্ত শুল্কায়নের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন দেখছি না। তবে নতুন পদ্ধতি কার্যকর করতে হলে ২৪ ঘণ্টা অফডকে কাস্টমস কর্মকর্তা রাখতে হবে। একই সাথে তাদেরকে শুল্কায়নের ক্ষমতা দিতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here