Home বাংলা নিউজ ব্যবসায়িক নেতৃত্বে পিছিয়ে নারীরা

ব্যবসায়িক নেতৃত্বে পিছিয়ে নারীরা

দেশের ব্যবসায়িক নেতৃত্বে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ১৫ শতাংশের নিচে। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তারা মূলত কৃষি ও মৎস্যের মতো প্রাথমিক ব্যবসায় জড়িত।

  • নারী উদ্যোক্তাদের জন্য যেসব পদক্ষেপ সবচেয়ে কার্যকর হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে এসএমই খাতের জন্য বড় সহায়তা (মজুরি ভর্তুকি, বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকা কর্মীদের বেতন–ভাতা, নগদ সহায়তা) ও শিশুর যত্নে সহায়তা।

বাংলাদেশের উন্নতিতে নারীর ক্ষমতায়ন বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদেরা। পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে তা ঠিক, কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা এখনো পিছিয়ে আছেন। দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ১৫ শতাংশের নিচে। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তারা মূলত কৃষি ও মৎস্যের মতো প্রাথমিক ব্যবসায় জড়িত। যেসব খাতের প্রভাব অর্থনীতিতে বেশি, সেসব খাতে নারী নেতৃত্বের অনুপাত ২০ দশমিক ৭ শতাংশ। শ্রমশক্তিতে পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণের দিক থেকেও বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে। দেখা গেছে, কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ কাজে যুক্ত আছেন, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৮১ শতাংশ। তবে তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। এদিকে ভারতের বেলায় চিত্রটা আরও বৈষম্যমূলক—কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ কাজে যুক্ত আছেন, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৭৬ শতাংশ। নারীদের কাজে যুক্ত হওয়ার হার কম থাকা বা ব্যবসায়িক নেতৃত্বে পিছিয়ে থাকার কারণ হলো, অর্থনীতি ও সমাজ এখনো অতটা নারীবান্ধব নয়। মাস্টারকার্ড ইনডেক্স অব উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস শীর্ষক এক জরিপের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে কোভিডের প্রভাবও তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিডের প্রভাবে নারী ব্যবসায়ীরা পুরুষ ব্যবসায়ীদের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৮৭ শতাংশ নারী ব্যবসায়ী বলেছেন, তাঁদের ব্যবসা মার খেয়েছে। এর একটি কারণ হচ্ছে, যেসব খাত কোভিডের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব খাতে নারীদের অতি অংশগ্রহণ—পর্যটন, খুচরা বিক্রয়, ফ্যাশন ও সৌন্দর্য ইত্যাদি। এর সঙ্গে আছে ক্রমবর্ধমান এই ডিজিটাল পরিসরে নারী-পুরুষের ডিজিটাল ব্যবধান। আর শিশুর যত্ন নেওয়ার চিরাচরিত দায়িত্বের চাপ তো আছেই। মূলত কোন অর্থনীতি কতটা নারী উদ্যোক্তাবান্ধব, তার ভিত্তিতে এই সূচক প্রকাশ করে থাকে মাস্টারকার্ড। ২০২০ সালের তালিকায় দেখা গেছে, ইসরায়েলি অর্থনীতি পৃথিবীর সবচেয়ে নারীবান্ধব। মূলত এসএমই খাতে বিশেষ জোর দিয়ে এক বছরের মধ্যে চতুর্থ স্থান থেকে প্রথম স্থানে চলে এসেছে ইসরায়েল। এই খাতকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিয়েছে। তবে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নীতি প্রণয়নে সবচেয়ে বেশি পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজিল্যান্ড। যদিও এবার তারা প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান থেকে দ্বিতীয় ও চতুর্থ স্থানে চলে গেছে। নারীদের ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণ সহজ করতে তারা ধারাবাহিকভাবে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। দুই দেশের বেলাতেই দেখা গেছে, উদ্যোগ-সহনীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশ ও নারী নেতৃত্বের দৃশ্যমানতা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। নারী উদ্যোক্তারা অন্যদের জন্য অনুকরণীয় চরিত্র। সবচেয়ে বড়কথা হলো, উদ্যোক্তা-সহায়ক পরিবেশ ও ব্যবস্থা দুই দেশেই নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সহজ করেছে। মাস্টারকার্ডের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জুলিয়েন লো প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘সবখানেই নারীরা বৈষম্যের শিকার, তা সে উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ, যেখানেই হোক না কেন। মহামারির আগেও এটা ছিল, তারপর পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই মহামারিতে নারীদের টিকে থাকার সক্ষমতা দেখেছি আমরা। তবে এই সময় সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো ভূমিকা রেখেছে—সুনির্দিষ্ট সহায়তামূলক কর্মসূচি, নতুন পৃথিবীতে নতুন দক্ষতা শেখানো ও সহজ অর্থায়ন। এগুলো নিশ্চিত করা সহজ ছিল না। তবে এ ধরনের বিনিয়োগ শুধু নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ভালো তা নয়, সামগ্রিকভাবে সমাজের জন্যই ভালো।’ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য যেসব পদক্ষেপ সবচেয়ে কার্যকর হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে এসএমই খাতের জন্য বড় সহায়তা (মজুরি ভর্তুকি, বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকা কর্মীদের বেতন–ভাতা, নগদ সহায়তা) ও শিশুর যত্নে সহায়তা।অথচ বাংলাদেশের এসএমই ও বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তারা প্রণোদনার ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনঃ অর্থায়ন তহবিল করলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এদের ঋণ দিচ্ছে না বা দিতে পারছে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here