Home বাংলা নিউজ পোশাক রফতানি করেও অর্থ পাচ্ছে না সিকেডিএল

পোশাক রফতানি করেও অর্থ পাচ্ছে না সিকেডিএল

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আর্থিক সংকট সামাল দিতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে মার্কিন পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কোল্ডওয়াটার ক্রিক (সিডব্লিউসি)। আর এতে বিপাকে পড়েছে সিডব্লিউসিকে পণ্য সরবরাহ করা বাংলাদেশের একটি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান। ক্রয়ডন কওলুন ডিজাইনস লিমিটেড (সিকেডিএল) নামের ওই কারখানাটির কর্তৃপক্ষের দাবি, পোশাক রফতানি করেও প্রাপ্য অর্থ পাচ্ছে না তারা। এজন্য সিডব্লিউসি মনোনীত বায়িং হাউজ নিউটাইমস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের অসহযোগিতাকেও দায়ী করছে সিকেডিএল।

পাওনা আদায়ে অভিযোগ উত্থাপন করে এরই মধ্যে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে সিকেডিএল কর্তৃপক্ষ। তবে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছে নিউটাইমস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের বাংলাদেশ লিয়াজোঁ অফিস। এজন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসেও।

গত বছরের শেষার্ধে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্রেতা ব্র্যান্ড সিডব্লিউসির ক্রয়াদেশ পায় বাংলাদেশে অবস্থিত কারখানা সিকেডিএল। সাভারে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) স্থাপিত কারখানাটি নির্ধারিত সময়ে পণ্য জাহাজীকরণ শুরু করে, যার বিপরীতে কিছু অর্থও পরিশোধ করে সিডব্লিউসি। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বরে কভিডের সংক্রমণ শুরু হলে আগে থেকেই আর্থিক দুর্দশায় জর্জরিত ব্র্যান্ডটির সংকট আরো ঘনীভূত হয়। এক পর্যায়ে মার্কিন আইন অনুসরণ করে লিকুইডেশন বা ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সিকেডিএলকে দেয়া ক্রয়াদেশের বিপরীতে বাকি অর্থ অপরিশোধিত থেকে যায়।

এদিকে কভিড প্রেক্ষাপটে কারখানার ক্রয়াদেশ প্রাপ্তি সংক্রান্ত অনিশ্চয়তায় ক্রেতার অপরিশোধিত অর্থ আদায়ে মরিয়া হয়ে ওঠে সিকেডিএল কর্তৃপক্ষ। পাওনা অর্থ ব্যাংকে টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের (টিটি) মাধ্যমে সরাসরি পরিশোধ করার কথা ছিল সিডব্লিউসির কিন্তু অনেক চেষ্টায় কোনো সাড়া না পেয়ে ক্রয়াদেশটির মার্চেন্ডাইজিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত বায়িং হাউজের দ্বারস্থ হয় সিকেডিএল। হংকংভিত্তিক নিউটাইমস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের বাংলাদেশ লিয়াজোঁ অফিসের সহযোগিতা মনঃপূত না হলে আদালত ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয় তারা।

সিকেডিএলের তত্পরতায় বিপাকে পড়েন নিউটাইমস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের বাংলাদেশ লিয়াজোঁ অফিসের কর্মীরা। সম্প্রতি তারা ফৌজদারি মামলাসহ আইনি হয়রানির অভিযোগ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে উদ্ভূত বিরোধ নিষ্পত্তিতে মন্ত্রী টিপু মুনশির হস্তক্ষেপের আবেদন করেছে।

জানতে চাইলে নিউটাইমস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড বাংলাদেশ লিয়াজোঁ অফিসের কান্ট্রি ম্যানেজার কায়জাদ মিস্ত্রি বণিক বার্তাকে বলেন, বিরোধ নিষ্পত্তিতে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়ে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছি। এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না বলে জানান তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বরাবর পাঠানো চিঠিতে সিকেডিএলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে নিউটাইমস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড বলেছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সমঝোতা না করে আইনি মামলা ও ক্রিমিন্যাল কেসের মাধ্যমে হয়রানি করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। তাদের দাবি, কভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে পোশাকের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছে। কিন্তু এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের কারখানা সিকেডিএল পুলিশি হয়রানির মতো ভুল পথ বেছে নিচ্ছে। এতে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ও রফতানিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।

এদিকে সিকেডিএল কর্তৃপক্ষ বলছে, রফতানি করা পোশাকের বিপরীতে পাওনা অর্থ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কোল্ডওয়াটার ক্রিকের সরাসরি পরিশোধ করার কথা থাকলেও দায় এড়াতে পারে না বায়িং হাউজও। ক্রেতার কাছ থেকে অর্থ আদায়ের কথা বলে টাকা সংগ্রহের অভিযোগও আছে নিউটাইমসের বিরুদ্ধে। আবার কোল্ডওয়াটার ক্রিক দেউলিয়া হয়ে গেলেও তাদের কিনে নিয়েছে নিউটাইমস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। কিন্তু এ তথ্য গোপন করে অর্থ পরিশোধের দায় এড়ানোর কৌশল অবলম্বন করেছে হংকংভিত্তিক পোশাকের সোর্সিং কোম্পানিটি।

জানতে চাইলে সিকেডিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিশাল আলী বণিক বার্তাকে বলেন, হয়রানির অভিযোগ সঠিক নয়। বরং আমরা আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। নিউটাইমস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ভূমিকা শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল। অপরিশোধিত অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তা দিচ্ছিল না প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি অর্থ পরিশোধের দায় ঘাড়ে নিতে না চাইলেও বর্তমানে তারাই কোল্ডওয়াটার ক্রিকের মালিকানা কিনে নিয়েছে। আবার এ তথ্য গোপনও করেছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিভ্রান্ত করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে নিউটাইমসের প্রতিনিধিদের মধ্যে। আমরা মনে করি, স্থানীয় আইনের আওতায় থেকেই নিউটাইমসের কাছ থেকে আমরা অপরিশোধিত অর্থ আদায় করতে সক্ষম হব। আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, শুধু আমাদের সঙ্গে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রায় সব পোশাক সরবরাহকারীর সঙ্গে প্রতারণার কূটকৌশল অবলম্বন করে বড় পরিমাণের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে নিউটাইমস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তাদের পাঠানো চিঠিতে তারা একবারের জন্যও উল্লেখ করেনি যে প্রকৃতপক্ষে তারা অনেক কম মূল্যে কোল্ডওয়াটার ক্রিক কিনে নিয়েছে, যা তাদের খারাপ উদ্দেশ্যই প্রমাণ করে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোল্ডওয়াটার ক্রিক আশির দশকের মাঝামাঝি ব্যবসা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি কভিডের আগে থেকে নানা সমস্যা মোকাবেলা করে এলেও ২০২০ সালের শুরুতে তাদের বিক্রি বাড়তে থাকে। কিন্তু এর মধ্যে কভিড-১৯ মহামারী এসে তাদের চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে দেয়। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির ৮৬ লাখ ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়। এরপর দ্বিতীয় প্রান্তিকে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫৬ লাখ ডলার। ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার সময় বিশ্বের ১৩টি গন্তব্য ব্যবসা পরিচালনা করত প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের সিকেডিএলকে দেয়া প্রতিষ্ঠানটির ক্রয়াদেশের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। যার মধ্যে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ডলার পরিশোধ হয়েছে বলে দাবি বায়িং হাউজ নিউটাইমস ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের।

এদিকে হংকং ভিত্তিক নিউটাইমস ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা করে আসছে বলে দাবি করছে। বাংলাদেশসহ মোট ২৮ দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় রয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কোল্ডওয়াটার ক্রিকসহ তারা যেসব ব্র্যান্ডের হয়ে সোর্সিং করে তার মধ্যে আছে পোলো রালফ লরেন, অ্যাম্বারক্রম্বি অ্যান্ড ফিচ, অ্যামেরিকান ঈগল, জে. জিল, নর্ডস্ট্রম, অ্যাসেনা গ্রুপ অ্যান্ড অ্যান টেইলর, হান্না অ্যান্ডারসন, ট্যাকটিক্যাল ও বোর্ড রাইডার্স। চলতি বছরের জুলাইয়ে কোল্ডওয়াটার ক্রিক বন্ধ হয়ে গেলে সব মজুদ ও মেধাসম্পদসহ ১ কোটি ২২ লাখ ডলারের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে কিনে নেয় নিউটাইমস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here