করোনায় বিপর্যস্ত মার্কিনরা তৈরি পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। দেশটির ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো পোশাক আমদানি চার ভাগের এক ভাগ কমিয়ে দিয়েছে। তাতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সব দেশেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীনের পোশাক রপ্তানি ৪৫ শতাংশ কমেছে। ভিয়েতনামের ৯ ও বাংলাদেশের ১৩ শতাংশ পোশাক রপ্তানি কমেছে। আর প্রতিবেশী দেশ ভারতের কমেছে ২৯ ও পাকিস্তানের ১৩ শতাংশ।বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো গত বছরজুড়ে ৮ হাজার ৩৮২ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এই আমদানি ছিল ২০১৮ সালের চেয়ে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। আর চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৪ হাজার ৭০২ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেন মার্কিন ব্যবসায়ীরা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ দশমিক ৭১ শতাংশ কম। গত বৃহস্পতিবার ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) দেওয়া হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিদায়ী বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল। চলতি বছরের প্রথম মাসে ৬২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রবৃদ্ধি হয় ১৭ শতাংশ। পরের মাসেও প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশ। মার্চ ও এপ্রিলেও রপ্তানি নেতিবাচক হয়নি। করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করে মূলত মে মাসে। ওই মাসে রপ্তানি এক ধাক্কায় ১২ শতাংশ কমে যায়। চলতি বছরের আট মাস শেষে রপ্তানি হয়েছিল ৩৪৮ কোটি ডলারের পোশাক। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি কম হয় সাড়ে ১৪ শতাংশ।
বাজারটিতে ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ৩৯৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ কম। রপ্তানি কমলেও বাজারটিতে বাংলাদেশের হিস্যা ১ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর শেষে হিস্যা ছিল ৭ শতাংশ। বর্তমানে সেটি বেড়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ হয়েছে।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, ২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমে যায়। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো ও বাড়তি শুল্ক থেকে রেহাই পেতে বেশি ক্রয়াদেশ নিয়ে বাংলাদেশে আসে অনেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান। রপ্তানিও আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। কিন্তু করোনার কারণে বাজারটিতে আবার খারাপ সময়ের মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশ। তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলনামূলক ভালো।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাকের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে কি না, তা করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ওপর নির্ভর করছে। ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ইতিমধ্যে লকডাউনের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাদের সব মনোযোগ বর্তমানে নির্বাচন ঘিরে। সব মিলিয়ে করোনা আবার ব্যাপকভাবে হানা দিলে, টিকা না আসা পর্যন্ত টালমাটাল অবস্থা থাকবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও চীনের অবস্থা শোচনীয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে গত বছর চীনের পোশাক রপ্তানি ৯ শতাংশ কমে। তবে কারোনার কারণে পরের মাসগুলোতে রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে চীন ১ হাজার ৯৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ৪৫ শতাংশ কম।বিজ্ঞাপন
চীনের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছর চীনকে টপকে গিয়েছিল ভিয়েতনাম। তবে সেটি বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। আবারও দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে ভিয়েতনাম। চীন প্রথম স্থানটি পুনরুদ্ধার করেছে। তবে রপ্তানি কমার দিক থেকে অন্য প্রতিযোগী দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ভিয়েতনাম ৯১৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ কম। তাদের বাজার হিস্যা ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ইন্দোনেশিয়া ২৬৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের রপ্তানি কমেছে ২১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ ছাড়া আলোচ্য সময়ে ভারতে