Home বাংলা নিউজ রপ্তানিতে নতুন মাত্রা পিপিই-মাস্ক

রপ্তানিতে নতুন মাত্রা পিপিই-মাস্ক

বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯-এর প্রভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল, কার্যাদেশ স্থগিত ও বিক্রি হওয়া পণ্যের দাম না পাওয়ায় দেশের বেশির ভাগ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকসহ ব্যবসা হারিয়েছে দেশের সব রপ্তানি খাত। ফলে এই সময়ে পুরো রপ্তানি শিল্প পড়ে ইতিহাসের বড় ধসে। এই সময়ে করোনা পণ্য রপ্তানি নতুন মাত্রা যোগ করে রপ্তানি খাতে। দেশের উদ্যোক্তারা বিশ্ববাজারে রপ্তানি করেছেন ব্যক্তি সুরক্ষার পণ্য পিপিই ও মাস্ক

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে কমতে শুরু করে পোশাক বিক্রি। মার্চের পর থেকে তা আরো প্রকট হয়। এই সময়ে খোলা-বন্ধের খেলায় অনেক পোশাক শ্রমিককে হারাতে হয় কাজ। উৎপাদনে ফিরতে পারেনি অনেক কারখানা। তবে সঠিক সময়ে সরকারের প্রণোদনায় প্রথম ধাক্কা সামলে উঠলেও এই সময়ে দেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপে পোশাকের বিক্রি কমে ৪৩ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ শতাংশের নিচে নামে। তাঁরা বলেন, দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সময় গেছে ২০২০। আগামী এক-দুই বছর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে দেশকে।

পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুসারে, এই সময়ে এক হাজার ১৪৫টি কারখানার প্রায় ৩১৮ কোটি ডলার মূল্যের ৯৮ কোটি পিস পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বাতিল অর্ডারের প্রায় ৯০ শতাংশ পুনর্বহাল করা হলেও অস্বাভাবিক ডিসকাউন্ট এবং বিলম্বে পেমেন্ট প্রাপ্তির শর্ত মেনে পণ্য জাহাজীকরণ করতে হয়েছিল উদ্যোক্তাদের।

বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনার প্রভাবে পোশাকশিল্পের প্রায় ১৯৬ কোটি ডলার পরিমাণ ব্যাংক দায় সৃষ্টি হয়েছে, যা মূলত রপ্তানি কার্যাদেশের বিপরীতে আমদানি করা হয়েছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি-নভেম্বর সময়ে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়েছে ১৭.৬৪ শতাংশ। এ ছাড়া আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সামান্য ধনাত্মক প্রবৃদ্ধির মুখ দেখলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তা আবার মুখ থুবড়ে পড়েছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, সামগ্রিকভাবে ২০১৯-২০ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। জুলাই থেকে প্রবৃদ্ধি হলেও তা ১ থেকে ২ শতাংশ। বৈদেশিক বাজারে যে সংকোচন হয়েছে, সেই হিসাবে রপ্তানি খাত এখনো বড় চাপের মধ্যে আছে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার কারণে বড়দিনে যে বাড়তি বিক্রি হওয়ার কথা, সেটাও আশানুরূপ হয়নি।

ইপিবির তথ্য মতে, ২০২০ সালে পোশাক খাতে জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় কম হয় ৫.৭১ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ৫.৫৩, মার্চে ৭.১২, এপ্রিলে ১৪.০৮, মে মাসে ১৮.৯৯, জুনে ১৮.১২, জুলাইয়ে ১.৯৮, আগস্টে ০.০৬, সেপ্টেম্বরে ০.৮৫, অক্টোবরে ১.২ এবং নভেম্বর মাসে ১.৪৮ শতাংশ।

এদিকে সরকার সংকট কাটাতে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা সহায়তা দিয়েছে। তবে করোনার দ্বিতীয় দফার সংকট কাটাতে আবার প্রণোদনার দাবি এই খাতের উদ্যোক্তাদের। বিজিএমইএর তথ্য অনুসারে, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে আবার লকডাউন শুরু হওয়ার কারণে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ২.৬৬ শতাংশ এবং ৭.৬৮ শতাংশ। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনার প্রথম ধাক্কায় রপ্তানিতে মার্চ থেকে মে—তিন মাস বড় ধরনের ধস নামে। এরপর আবার উঠে আসতে শুরু হলেও দ্বিতীয় ধাক্কা নতুন করে সংকট তৈরি করেছে। নতুন এই ধাক্কা আগামী বছর মার্চ পর্যন্ত থাকবে। তবে আশা, এপ্রিল থেকে আবার ঘুরে দাঁড়াবে রপ্তানি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here