গত এক দশকে, বাংলাদেশ কেবল দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই প্রত্যক্ষ করেনি, শিল্প ও বিভিন্নখাতে হয়েছে বিশাল আকারের ডিজিটাইজেশন; একইসঙ্গে পরিলক্ষিত হয়েছে দেশে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, তৈরি পোশাক (আরএমজি), কৃষি এবং বিভিন্ন সেবাখাত ব্যাপকভাবে ডিজিটালাইজড হচ্ছে এবং দ্রুতগতির ফাইভজি নেটওয়ার্ক বাস্তবে পরিণত হতে আর বেশি দিন নেই।এছাড়াও, বাংলাদেশ বর্তমানে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’র সুবিধা ভোগ করছে। এর মানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যায় অন্তর্গত কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বাকি অংশের তুলনায় বেশি। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সঙ্গে, বাংলাদেশ জাতীয় উন্নয়নের প্রত্যাশিত মাইলফলকগুলো ছোঁয়ার পথেও এগিয়ে যাচ্ছে। “বিদীর্ণ করেছি মাটি, দেখেছি আলোর আনাগোনা, শিকড়ে আমার তাই অরণ্যের বিশাল চেতনা”- সুকান্তের এই পংক্তি মনে করিয়ে দেয় ভবিষ্যতে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান হাতিয়ার আজকের তরুণসমাজ। তরুণরা তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়ে পারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে। সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনে বাংলাদেশের যুবসমাজের প্রবল আগ্রহ অসংখ্যবার প্রতীয়মান হয়েছে। আমাদের প্রয়োজন কেবল যুবসমাজের ক্ষমতায়নে সাহায্য করা এবং তাদের মেধা প্রকাশের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেওয়া। তরুণদের নতুন ধারার চিন্তাভাবনা ও ধারণা প্রকাশের জন্য দরকার যথার্থ ‘এক্সপোজার’, যা চিরতরে মুছে দেবে প্রথাগত চেতনাকে। তরুণসমাজের উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপনের অন্যতম প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ধারণা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর ভিত্তিগত বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু এখানে বাকস্বাধীনতা আর সঙ্গে ‘নিজস্বতা’-কে উপস্থাপনের সুযোগের মত বিষয়গুলো বার বার যুবসমাজকে আকৃষ্ট করেছে। ফেসবুক থেকে ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট এবং হোয়াটসঅ্যাপে আমরা দেখেছি ডিজিটাল যোগাযোগের ব্যাপক অভিযোজন এবং আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের সঙ্গে গভীর সম্পৃক্তি। শুধু একটি শব্দের কি নিদারুণ শক্তি তা দেখিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে একটি মাত্র শব্দ দিয়ে সাধারণ ধারণা প্রচলনে সমগ্র বিশ্বকে এক জায়গায় দাঁড় করানো তা প্রমাণ করে। সম্প্রতি, বেশ কয়েক বছর ধরে লাইকির মত শর্ট-ভিডিও প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিবর্তন গ্রহণ করার মাধ্যমে বর্তমানে তরুণসমাজ গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়াদিতে তাদের মতামত ব্যক্ত করে এবং এর মাধ্যমে তাদের কথা বিশ্বের সবার কাছে পৌঁছে দিতে উদ্যত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ফেসবুকে #রেজএগেইন্সটরেপ ক্যাম্পেইন এবং লাইকির #নোমিনসনো ক্যাম্পেইন। এটি প্রকৃতপক্ষে যুবসমাজের ক্ষমতায়ন ঘটিয়েছে। প্রযুক্তির বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা উপলব্ধি করেছি যে, যুবসমাজই সর্বপ্রথম নতুন পরিবর্তন গ্রহণ করেছে। এই অকপটতাই হয়তো বাংলাদেশের ইতিবাচক রূপান্তরের মূল চাবিকাঠি। কোনো নতুন পরিস্থিতিকে ভালোভাবে যাচাইয়ের জন্য তরুণদের আছে অধিকতর ধৈর্য ও মানিয়ে নেওয়ার সদিচ্ছা। তারা যেকোনো বিষয়কে গভীরভাবে খুঁটিয়ে দেখার আগ্রহ পোষণ করে। শর্ট-ভিডিও প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতি বিপুল উৎসাহ তাই প্রমাণ করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ মূলত একটি ‘ডিজিটাল জাতির’ ওপর নির্ভর করবে, যার অর্থ এমন একটি জাতি যারা প্রযুক্তিগতভাবে অধিক দক্ষ ও সাবলীল। মোটকথা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং প্রযুক্তির সংমিশ্রণ একটি নতুন সূচনায় প্রবেশের জন্য অধিকতর শক্তিশালী প্রযুক্তিগত দক্ষতাসম্পন্ন এবং মানসিকতার অধিকারী একটি গোষ্ঠীর জন্ম দিচ্ছে। এটি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করতে হবে যে পরিবর্তন অনিবার্য, আর তাই কেবল যারা এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে নিজেকে একীভূত করতে পারবে, তারাই টিকে থাকবে দীর্ঘসময়। ডিজিটাইজেশন ইতোমধ্যে এমন একটি কার্যকর প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে। এর নিজস্ব কার্যধারাবাহিকতা রয়েছে। প্রযুক্তিগত দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশের যুবসমাজ এমন একটি কার্য ধারাবাহিকতাকে অনুসরণ করার ক্ষমতা রাখে, যা আরও দৃঢ় ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে নতুন ভোরের সূচনা করে। যে জাতি সবেমাত্র তার ৫০তম বিজয় দিবস উদযাপন করেছে, তাদের জন্য এটি সত্যিই এক চমৎকার বিষয়।