কভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমলেও অপ্রচলিত বাজার রাশিয়ায় সাফল্য মিলেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, এই সময় আয় হয়েছে ২৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত অর্থবছর এ আয় ছিল ২১ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। সেই হিসাবে গত ছয় মাসে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.২৪ শতাংশ। রাশিয়া ছাড়াও অন্য যেসব দেশে মহামারিতেও রপ্তানি আয় বেড়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ায় অর্থবছরের ছয় মাসে আয় হয়েছে ৩৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। এর আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৩৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার। দেশটিতে প্রবৃদ্ধি হয় ৯.৫০ শতাংশ। আর দক্ষিণ আফ্রিকায় আয় হয়েছে চার কোটি ৫৯ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ শতাংশ। যদিও দেশের শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.২৮ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আয় কমেছে ২.২৩ শতাংশ। এ সময় পোশাক খাতে মোট আয় কম হয়েছে ২.৯৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মহামারির এই সময় পুরো পোশাক খাতের রপ্তানি আয় কমলেও নিট পোশাকের চাহিদা খুব একটা কমেনি। অন্যদিকে দেশের বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় যেভাবে কভিড সংক্রমণ হয়েছে, সেই তুলনায় রাশিয়ায় কম। ফলে নতুন বাজার হলেও রাশিয়ায় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।’ বিজিএমইএর রপ্তানি আয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাশিয়ার বাজারে এ সময় নিট পোশাকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০.৫২ শতাংশ। আর ওভেন পোশাকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৪০ শতাংশ। নিট পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএ সহসভাপতি ফজলে এহসান শামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছোট বাজার হলেও রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশ থেকে উচ্চ মূল্যের পণ্য বেশি যায়। এগুলোর মধ্যে জ্যাকেট, সোয়েটার অন্যতম।’ তিনি আরো বলেন, ‘আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্টস স্টেটসের অনেক দেশে রাশিয়া থেকে আমাদের স্টক লট পণ্য আবার রপ্তানি হয়। ফলে নতুন বাজার হলেও দেশটিতে আমাদের রপ্তানি ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।’ পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়া ও কিরগিজস্তানের সমন্বয়ে গঠিত ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন (ইইইউ)। এ দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, ওষুধ, আলু ও সবজি রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে রাশিয়ায় তৈরি পোশাক, পাট, হিমায়িত চিংড়ি, আলু ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি হলেও বাজার অনুযায়ী পরিমাণ খুব বেশি নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশ পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা চেয়ে আসছে বহু বছর। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এ প্রস্তাব আলোচনায় আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ রাশিয়ায় ডাব্লিউটিওর আওতায় বেশ কিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। এর মধ্যে তৈরি পোশাক আছে।’ শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্যের তালিকা নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে তিনি জানান।