Home বাংলা নিউজ ঈদ আতঙ্কে পোশাক শিল্প মালিকরা

ঈদ আতঙ্কে পোশাক শিল্প মালিকরা

করোনার পর এবার গার্মেন্ট মালিকদের শুরু হয়েছে ঈদভীতি। উদ্যোক্তারা বলছেন করোনা মহামারীর মধ্যে তৈরি পোশাকের কার্যাদেশ কমে যাওয়ার কারণে তারা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যায় পড়েন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলমান থাকার মধ্যেই আগামী এপ্রিল মাসে ঈদ। এ অবস্থায় বোনাস দেওয়া কঠিন হবে, তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।

করোনার মহামারীর কারণে ২০২০ মার্চ থেকে তৈরি পোশাক শিল্পে সংকট চলছে। লকডাউনে এপ্রিল-মে দুই মাস কারখানা বন্ধ ছিল। এর ফলে উৎপাদন যেমন বন্ধ থেকেছে, বন্ধ থেকেছে রপ্তানি ও নতুন কার্যাদেশ। ফলে অনেক কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যে সব কারখানা খোলা ছিল সেগুলোর বড় একটি অংশ আংশিক বা পুরো লে-অফ করেছে বা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেছে। এ সময় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার স্বল্প সুদে সহায়তা ঘোষণা করে। এরপর উৎপাদন যেমন আস্তে আস্তে বেড়েছে, তেমনি কার্যাদেশ ও রপ্তানিও বেড়েছে। এ সময় সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা পোশাক শিল্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কাজে দেয়। কিন্তু ইউরোপীয় বাজারে করোনার নতুন করে ঢেউ লাগলে দেশে পোশাক রপ্তানিতে আরেক আঘাত আসে। কার্যাদেশ কমে যায়। এতে আশাভঙ্গ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। উদ্যোক্তারা বলছেন, আগামী এপ্রিল মাসে ঈদুল ফিতর এবং তারপর ঈদুল আজহা। এ অবস্থায় উৎসবের বিষয়টি তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য জুলুম হয়ে যাবে।  করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শ্লথগতি চলছে। এতে কারখানা চালিয়ে নেওয়া অধিকাংশ উদ্যোক্তার জন্য কঠিন হচ্ছে। এ অবস্থায় ঈদের মাসের বেতনের বাইরেও বোনাস দিতে হবে। এটা তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বোঝা হবে বলে মনে করেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি এমএ রহিম ফিরোজ। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে নতুন করে লকডাউন চলছে। এর ফলে তৈরি পোশাকের আউটলেটগুলো বন্ধ থাকছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদেশি তৈরি পোশাকের উদ্যোক্তারা কার্যাদেশ কমিয়ে দিয়েছে। এ সময় দেশে কার্যাদেশ স্থগিতের হার প্রায় ২০ শতাংশ। এতে আরও একটি ঝুঁকি শুরু হয়েছে। এই ঝুঁকিকে আরও তীব্র করে তুলেছে ক্রয়াদেশের মূল্য কমে যাওয়া (মার্জিন) ও রপ্তানিমূল্য (পেমেন্ট) পেতে দেরি হওয়া। এর ফলে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। কার্যাদেশ বা পোশাক প্রস্তুত করার পর সময়মতো রপ্তানিমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। আগে রপ্তানি করার সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানিমূল্য পাওয়া যেত। এখন পেমেন্ট পেতে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত দেরি হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন করে কবে পেমেন্ট আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে করোনার অভিঘাত মোকাবিলা করার পরবর্তী পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আগামী এপ্রিল মাসে শ্রমিকের জন্য ঈদ বোনাস গুনতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্প খাতের আরেক সংগঠন বিকেএমইএ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ঈদ বোনাস নিয়ে একই আশঙ্কা ও তৈরি পোশাক শিল্প পরিস্থিতি নিয়ে একই কথা বলেন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমরা সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলাম, সরকার এখন পর্যন্ত কোনো কিছু বলছে না। ঈদ এগিয়ে আসছে। ঈদ বোনাস কেমন হবে-এ সম্পর্কে আগে থেকেই সরকারকে ঘোষণা দিতে হবে। যাতে ঈদের আগে শিল্প এলাকাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা না ঘটে। করোনার কারণে ইউরোপের বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় তৈরি পোশাকের কার্যাদেশ কমে গেছে-উদ্যোক্তাদের এ ধরনের কথা সরকারকে বোকা বানানোর কৌশল বলে মনে করেন বাংলাদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান। তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে না তৈরি পোশাক কারখানা কার্যাদেশ হারাচ্ছে, কাজের গতি হারাচ্ছে। তবে কার্যাদেশ দেওয়ার যে গতি তা কিছুটা শ্লথ হয়েছে; বায়াররা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে-বিষয়টি এ রকম নয়। তিনি বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ইউরোপের কিছু দেশে যেমন লকডাউন দিয়েছিল আবার তা তুলেও নিচ্ছে। ও সব দেশে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু হয়েছে। মালিকরা এখন শুধু রাষ্ট্রের প্রণোদনার ওপর নির্ভর কর চলতে চাচ্ছে। তার অংশ হিসাবে তারা কাজ নেই বলে বলে সরকার ও দেশবাসীকে বিভ্রুান্ত করতে চাচ্ছে। তৈরি পোশাক শিল্পে আবারও সংকট তৈরি হয়েছে বলে তারা সুবিধা নিতে চাচ্ছে। আমরা বলছি না তৈরি পোশাক শিল্পে সংকট আসেনি। শিল্পে একটি সংকট আসতে পারে। এটা বৈশ্বিক সংকট, এমন সংকটের মুখোমুখি বাংলাদেশ কখনো হয়নি। নতুন পেক্ষাপট, নতুন চ্যালেঞ্জ, এ জন্য সরকার সহযোগিতাও দিয়েছে। মালিকরা নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে রাষ্ট্রীয় সহায়তা ওপর নির্ভরশীলতা দেখাতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, কার্যাদেশ কমে গেছে-এটা তাদের এক ধরনের আইওয়াস। এর মাধ্যমে তারা সরকারকে বোকা বানাতে চায়। যেহেতু সরকার মনে করে দেশবাসীও জানে, পোশাক শিল্প দেশের প্রধান রপ্তানিমুখী শিল্প, সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থানের জায়গা। প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যম-এটাকে তারা ব্যবহার করে সরকারকে দুর্বল করে সুবিধা নিতে চায়। আগের প্রণোদনা ফেরত দেওয়ার সময় বাড়িয়ে দাও। যেটা ১৮ মাসে পরিশোধযোগ্য সেটা চার বছর করা হোক। যে কোনোভাবেই হোক তারা রাষ্ট্রীয় সাহায্য-সহযোগিতা রাখতে চায়। মালিকদের দাবি মানার আগে সরকার বিষয়টি মনে রাখবে বলে দাবি। তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের এ ধরনের ধারণা পুরোপুরি সমর্থনযোগ্য নয় বলে মনে করেন পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, করোনার কারণে তৈরি শিল্প সংকটে পড়েছিল। তার কিছুটা কাটিয়ে উঠেছেও। ইউরোপ-আমেরিকায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত তৈরি পোশাক শিল্পে কিছুটা লেগেছে। তার মানে তারা এবারের ঈদে বোনাস দিতে পারবে না-পরিস্থিতি এমন নয়। করোনার প্রথম ধাপ ২০২০ সালে ঈদ বোনাস দিতে পারলে এবারও দিতে পারবে। গত বছরের ঈদে এবারের চেয়ে অবস্থা আরও খারাপ ছিল। ঈদ বোনাস দিতে পারলে উৎপাদনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে তিনি এ কথাও স্বীকার করেন, বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের জন্য একটি একেবারে ভিন্ন ধরনের রীতিতে পরিণত হয়েছে। এবার আড়াই মাসের মধ্যে দুটি ঈদ বোনাস দিতে হবে। অন্যান্য দেশে উৎপাদন বোনাস ও অন্যান্য নামে শ্রমিকদের সুবিধা থাকলেও ঈদ বোনাস নেই। যেহেতু এটা প্রচলিত ব্যবস্থা এটা স্বীকার করতেই হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here