Home বাংলা নিউজ পোশাক শিল্প মালিকদের নির্বাচন

পোশাক শিল্প মালিকদের নির্বাচন

তৈরি পোশাক শিল্পের চলমান সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান এবং নির্বাচন প্রসঙ্গে উত্তপ্ত তৈরি পোশাক শিল্প খাত। টিপু মুনশি-সালাম মুর্শিদী-ফারুক হাসানের নেতৃত্বে সম্মিলিদ পরিষদ কোভিড-১৯ এর অভিঘাতে বর্তমান কমিটির ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে মাঠে রয়েছে। তাদের অভিযোগ, তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের স্বার্থ নিয়ে বর্তমান এই কমিটি সরকারের সঙ্গে সক্ষমতার সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারেনি। তারা বিজিএমইএর নেতৃত্ব বদল চায়। এজন্য তারা সঙ্গে নিয়েছে উদ্যোক্তাদের নতুন একটি গ্রুপ স্বাধীনতা পরিষদকে। অন্যদিকে ড. রুবানা হকের নেতৃত্বে গত দুই বছর সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন ‘ফোরাম’ নেতৃবৃন্দ। তারা এই সফলতাকে ভিত্তি হিসেবে নিয়ে আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হতে চান। আগামী ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবারই দুপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি রুবানা হকের নেতৃত্বে গঠিত ফোরাম নেতৃবৃন্দ মনে করেন তারা করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। এখনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ সময় নির্বাচনের পরিবর্তে সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। টিপু মুনশি-সালাম মুর্শিদী-ফারুক হাসানের নেতৃত্বে সম্মিলিত পরিষদ তৈরি পোশাক শিল্পের চলমান সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর ফলে তৈরি পোশাক খাতের সমস্যাগুলো অবহেলার শিকার হচ্ছে। তারা শিল্পের চেয়ে রাজনৈতিক পদ-পদবির, নেতা হওয়ার জন্য ব্যস্ত থেকেছে। এ বিষয়ে বর্তমান কমিটির সহসভাপতি ও ফোরামের নেতা আব্দুর রহিম ফিরোজ খোলা কাগজকে বলেন, এখন আমাদের অনেক কাজ। করোনার সময়ে আমাদের গ্রাহকরা দাম কমিয়ে দিয়েছেন। এটা নিয়ে কাজ করার কথা ছিল। আগামী ঈদের সময় বেতন, বোনাস ও দুটি ঈদের বোনাস দিতে হবে। সব কারখানার পক্ষে এটা দেওয়া সম্ভব নয়। যে সময়ে আমরা নির্বাচন করছি সে সময় কাজ করার কথা ছিল করোনার মধ্যে ক্রেতারা যে সব তৈরি পোশাকের দাম কমিয়ে দিয়েছে সেগুলোর ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য দর কষাকষির। ঈদ সামাল দেওয়ার জন্য করণীয় নির্ধারণে মনোযোগ দেওয়ার কথা ছিল। এজন্য আমরা ছয় মাস সময় চেয়েছিলাম। সময় পেলে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য কাজ করা সম্ভব হতো। কিন্তু সম্মিলিত পরিষদের কারণে তা হয়নি। ফলে পোশাক শিল্পের সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। অথচ গত মেয়াদে সম্মিলিত পরিষদের নেতার নেতৃত্বে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে দেড় বছর বাড়তি সময় নিয়েছে। তারপরও ফোরাম নেতৃত্বের সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা আছেন বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা নেতা। অন্যদিকে ফোরামের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পরিষদের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ তুলেছে- তারা করোনার যে অভিঘাত তা সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারেননি। করোনার ভয়াবহতার মধ্যেই তৈরি পোশাক কারখানা খোলা-বন্ধের নাটক করে উদ্যোক্তাদের সারা দেশের মানুষ ও শ্রমিকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, হেয় করেছে। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে করণীয় নির্ধারণ করবে তা করতে বর্তমান নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছে, উদ্যোক্তাদের হতাশ করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য করণীয় নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছে। উত্তরায় বিজিএমইএইএর একটি অফিস থাকলেও সেখানে বর্তমান নেতৃত্ব বসেনি, অনেক টাকা ব্যয়ে গুলশানে একটি অফিস নিলে সেখানেও তারা বসেনি। অনলাইনে সব কিছু করার চেষ্টা করেছে। উদ্যোক্তারা অফিসে এসে বর্তমান কমিটির নেতাদের পায়নি। সমস্যা সমাধানে, বিপদ থেকে উত্তরণে বিজিএমইএর বর্তমান নেতৃত্বের কাছে সহযোগিতা পায়নি। এজন্য পরিস্থিতির পরিবর্তন চায়। সম্মিলিত পরিষদের নেতা ও নির্বাচন সমন্বয়ক বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আ. সালাম মুর্শেদী বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাদ দিয়ে সরকারি বা রাজনৈতিক দলের পদ-পদবির পেছনে দৌড়ান না। ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিক রেখে যোগ্যতা দিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী, এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। আর রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী-মন্ত্রী যদি দোষের কিছু হয় তা বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি রুবানা হকের স্বামী প্রয়াত আনিসুল হক ঢাকা উত্তরের মেয়র হয়ে সে পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। তা ছাড়া রুবানা হক নিজেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নারী বিষয়ক উপকমিটির নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। দেশের তৈরি পোশাক শিল্প ইতিমধ্যে একটি মর্যাদার জায়গা করে নিয়েছে। রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থানের দিক থেকে এই বিবেচনা করা হয়। যখন যে দলই রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে বিজিএমইএর সভাপতি সরকারের কাছে মর্যাদা পেয়ে থাকে। বিজিএমইএও সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় প্রেশার গ্রুপ হিসেবে বিবেচিত। তৈরি পোশাক শিল্প খাতে এতদিন সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম সমঝোতা করে নেতা নির্বাচন করতেন। কিন্তু বিজিএমইএর আসন্ন নির্বাচনে তৃতীয় শক্তি স্বাধীনতা পরিষদ নতুনভাবে আবির্ভূত হয়েছে। গত কয়েক বছরে এককভাবে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছে এই স্বাধীনতা পরিষদ। গত নির্বাচনে সম্মিলিত ও ফোরাম সমঝোতা করলেও স্বাধীনতা পরিষদের কারণে বিজিএমইএ নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করে। এবং সম্মিলিত পরিষদ-ফোরাম যৌথভাবে নির্বাচিত হয়। ওই নির্বাচনকে পক্ষপাতদুষ্ট ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ তোলে স্বাধীনতা পরিষদ। শত বাধার পরও উল্লেখযোগ্য ভোট পায় তারা। এবার সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে ঐক্য করে নির্বাচন করছে স্বাধীনতা পরিষদ। ফলে টিপু মুনশি-সালাম মুর্শেদী-ফারুক হাসানের নেতৃত্বে সম্মিলিত পরিষদ রুবানা হকের নেতৃত্বে ফোরামকে এবার পাত্তা দিচ্ছে- এমনটাই মনে করছে। পাশাপাশি দুপক্ষের হাড্ডাহাডি লড়াই হবে এমন ভাবনা ব্যবসায়ী মহলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here