মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমে বেতন পাওয়ায় পোশাক শ্রমিকদের মাঝে ডিজিটাল সচেতনতা বেড়েছে বহুগুণ। নারী পোশাক শ্রমিকরা এখন নিজেরাই ক্যাশ আউট করতে পারেন, মোবাইলে ব্যালেন্স চেক করতে পারেন, সেন্ড মানি করতে পারেন। যেটা যেটা পূর্বে ছিল না। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের ডিজিটাল বেতন ব্যবস্থাপনা: অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য উঠে আসে। মতবিনিময় সভায় বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমে পোশাক শ্রমিকদের বেতন পাওয়ায় তাদের মাঝে ডিজিটাল সচেতনতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালের মে মাসে ৫৩ শতাংশ নারী শ্রমিক নিজেরা ক্যাশ আউট করতে পারতেন একই বছরের সেপ্টেম্বরে এই হার বেড়ে ৬৫ শতাংশে উন্নীত হয়। একই সময়ে নিজেরাই নিজেদের ব্যালেন্স চেক করার ক্ষমতার পরিমাণ ৫৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শ্রমিকদের বড় অংশ সেন্ড মানি ব্যবহার করেন। এই সময়ে নিজেই সেন্ডমানি ব্যবহার করতে পারেন এমন নারীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট (এসিএফডি) পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, শ্রমিকদের মাধ্যমে মাসে এক হাজার ১১ কোটি টাকা গ্রামে যায়। ৬২ শতাংশ শ্রমিক নিয়মিত গ্রামে তার পরিবারের কাছে টাকা পাঠান এবং টাকা পাঠান ৮২ শতাংশ। ৬২% শ্রমিক নিয়মিত গ্রামে পরিবারে টাকা পাঠান এবং এদের ৮২ শতাংশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নেন। শ্রমিকদের ৪৩ শতাংশেরই বিকাশ অ্যাকাউন্ট আছে।
বিকাশের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মিজানুর রশীদ বলেন, সানেম এবং এসিএফডি পরিচালিত জরিপে এই তথ্য আমাদের নিজস্ব (বিকাশ) তথ্যে আশান্বিত হওয়ার মতো। আমরা আমাদের তথ্যে দেখেছি, শ্রমিকরা যারা বিকাশে বেতন পেয়েছেন, তারা কেবল ক্যাশ আউট সেবা নয় আরও কয়েকটা সেবা নিচ্ছেন। তারা সেন্ড মানি করা, মোবাইল রিচার্জ করা, পেমেন্ট করা এসব সেবার মধ্যে অন্যতম। ডিজিটাল ইকোসিস্টেম নির্মাণের পথে যাত্রা বাংলাদেশ শুরু করেছে। সেখানে শ্রমিকদের এই ডিজিটাল সচেতনতা এবং এসএমএস ব্যবহারের ক্ষমতা সার্বিকভাবে তাদের জীবন মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বেতন বিতরণব্যবস্থা অন্য দেশ থেকে এখনও পিছিয়ে আছি। ভারতের ৯৫ শতাংশ শ্রমিক ডিজিটাল বেতন পান, ভিয়েতনামে ৮৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৮৪ শতাংশ শ্রমিক ডিজিটাল ব্যবস্থাই বেতন পান। বাংলাদেশেই হার মাত্র ৪০ শতাংশ। এখাতে ডিজিটাল বেতন বিতরণব্যবস্থা সকলে মিলে এগিয়ে যাওয়ার আরও অনেক সুযোগ আছে। এই পদ্ধতিতে বেতন বিতরণ অব্যাহত রেখে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি সক্ষমতা অর্জন করবে বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, করোনাকালে ৯৮০টি ফ্যাক্টরি প্রায় ১২ লাখ শ্রমিকের তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেতন সরাসরি তাদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে পেয়েছেন। এক মুহূর্তের নির্বিঘ্নে কোভিড পরিস্থিতি শুরু হওয়ার আগে চার লাখ শ্রমিক বিকাশে তাদের বেতন-ভাতা পেতেন। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং একইসাথে অ্যাকাউন্ট খোলার কমপ্লায়েন্স ঠিক রেখে অ্যাকাউন্ট খোলার সহজ ছিল না। সব পক্ষের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি অবস্থার মধ্যেও সফলতার সাথে কাজটি সম্পন্ন করে বিকাশ। আগামীতে বিকাশ অ্যাকাউন্টের গ্রাহকরা বিশেষ করে শ্রমিকরা সিটি ব্যাংকের জামানতবিহীন ঋণ পাবেন। পাইলট প্রকল্প কী চলছে তাদের যখনই প্রয়োজন তখনই জামানতবিহীন ঋণ, তাদের আর্থিক জীবনকে সহজ করে স্বাভাবিক জীবন মানেই পরিবর্তন আনবে। এ জে গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, বেতন দেয়ার জন্য একসময় রাজধানীর মতিঝিল থেকে নগদ টাকা নিয়ে আশুলিয়া-সাভার-গাজীপুর এলাকার কারখানাগুলোতে নিয়ে আসতে হতো। এতে দিনভর টেনশন কাজ করতে হতো মালিকদের, টাকা কখন আসবে, নিরাপদে কারখানায় আসবে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন আমাদের সে কাজটি খুব সহজ করে দিয়েছি বিকাশ। একদিক থেকে শ্রমিকরা খুব সহজেই টাকা পেয়ে যাচ্ছেন অন্যদিকে মালিকদের টেনশন দূর হয়েছে। অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এনামুল হক বলেন, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে বিকাশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেক ভূমিকা রেখেছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাসায় বসে মুহূর্তেই পেমেন্ট দিয়েছে। একসময় শ্রমিকদের মাসিক বেতন দেয়ার সময় তাদের নগদ টাকা গুনে গুনে দিতে হতো, তাদের স্বাক্ষর নিতে হতো। এসব করতে একটা বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হতো। এখন ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম চালু হওয়ায় বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয় না, শ্রমিকরা মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে তাদের ক্যাশ ইন ক্যাশ আউট করতে পারেন। নিউ এজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরিফ ইব্রাহিম বলেন, বিকাশ মুহূর্তেই শ্রমিকদের পেমেন্ট সিস্টেম দিচ্ছে। তাদের এই ব্যবস্থাপনা খুবই সহজ করে দিয়েছে, মালিকপক্ষের টেনশন কমেছে। তবে অনেক শ্রমিকের লেনদেন না হওয়ায় তাদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে গেছে, সেটি চালুর উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানাই। পাশাপাশি শ্রমিকদের যে ঋণ দেয়া হবে সেটার সুদহার যেন সাধ্যের মধ্যে থাকে।