Home বাংলা নিউজ সেরাই: তৈরি পোশাক ক্রেতা-বিক্রেতাদের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম

সেরাই: তৈরি পোশাক ক্রেতা-বিক্রেতাদের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম

১৯৬৯ সালের ২৭ অক্টোবর। উচ্চাভিলাষী পোশাক ব্যবসায়ী রিয়াজউদ্দীন তিন নভোচারীর হাতে উপহার হিসেবে তুলে দিলেন নিজের হাতে তৈরি শার্ট। সেদিন পোশাকের আরাম আর উচ্চ মানে অভিভূত হয়েছিলেন তিন জনই। এই ঘটনার পরই তিনি ফ্রান্সে তার শার্ট রফতানি শুরু করতে উদ্বুদ্ধ হন। বিশ্ব দরবারে নিজের ব্যবসাকে তুলে ধরার যে স্বপ্ন রিয়াজউদ্দিন দেখেছিলেন তা থেকেই বাংলাদেশের উদীয়মান পোশাক উৎপাদন শিল্পের পথচলার শুরু, দেশের রফতানি খাতের ৮০% ই এখন যার দখলে। বর্তমান সময়ে এসে রিয়াজউদ্দিনের মতো উদ্যমী তৈরি পোশাক নির্মাতাদের উদ্যোক্তা চেতনা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে যাদের কাছে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য আরও সহজ করে তুলতে পারে এমন একটি প্ল্যাটফর্মের চাহিদা রয়েছে। আর এই চাহিদা পূরণ করতে পারে সেরাই-এর মতো একটি প্ল্যাটফর্ম। সেরাই, এইচএসবিসি-এর একটি ফ্রি ডিজিটাল আরএমজি বিটুবি প্ল্যাটফর্ম। সেরাই ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে যা তার ব্যবহারকারীদের নিকট বৃহৎ পরিসরে ব্যবসায়ীক সুবিধা পৌঁছে দিয়ে থাকে। এক কথায় পরিচিতি গঠন থেকে শুরু করে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সাথে সংযোগ স্থাপন পর্যন্ত সবই বিনামূল্যে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ সহ প্রায় ৬০টিরও বেশি দেশের ৩০০০ এরও বেশি প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে। দেশের তৈরি পোশাক খাতের স্বনামধন্য এফসিআই গ্রুপ, ডিবিএল গ্রুপ ও এনভয় টেক্সটাইলের মতো ৫ শতাধিক বাংলাদেশি আরএমজি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। গ্রাহকরা এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট সকল সাম্প্রতিক খবর, চলমান ট্রেন্ড ও তথ্য পেতে সক্ষম। সেরাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া সহ ইউরোপীয় বেশ কয়েকটি দেশের ক্রেতাদের সাথে সংযোগ স্থাপনের সুযোগও দিয়ে থাকে। (এই প্ল্যাটফর্ম দ্বারা ক্রেতাদের যুক্ত করার পদ্ধতি শুরু হয় প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি তৈরির মাধ্যমে যা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যাবলী তুলে ধরে। এরপর ব্যবহারকারীগণ আগ্রহী ক্রেতাদের খুঁজে বের করে যোগাযোগ করার পাশাপাশি সেরাই-এর বিভিন্ন সু্যোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।) এই প্ল্যাটফর্মের কাউন্টার পার্টি রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সল্যুশনের সুবাদে উৎপাদনকারীরা সম্ভাব্য নতুন ব্যবসায়ীক অংশীদার গড়ে তোলার লক্ষ্যে নতুন সম্পর্ক তৈরি, নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শন এবং ব্যবসায় সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জানতে সক্ষম হবে। মহামারি কভিড-১৯ এর আগেও বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অনলাইন উপস্থিতিতে ঘাটতি ছিল। যার প্রয়োজন তীব্র হয়ে উঠে মহামারীর ধাক্কায়। শিল্প বাঁচানোর উপায়ই এখন ভাবনার বিষয়। আর সম্ভাবনাময় একমাত্র হাতিয়ার এখন প্রযুক্তি। পোশাক খাতের আধুনিকায়ন শুধু যে আন্তর্জাতিক লেনদেনেই সাহায্য করবে তা নয়, বরং এতে করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর সাথে যুক্ত হওয়ার এক অপার সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে যাবে, যেটা নানান কারণে এর আগে হওয়া উচিত থাকলেও বাস্তবে তা আর হয়ে উঠে নি। সেই সাথে বাড়বে আন্তর্জাতিক বাজারের বড় জায়গা দখলে নেওয়ার সম্ভাবনাও।

কভিড-১৯ প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে আগে গতানুগতিক পদ্ধতির উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল ছিল, তারাই এখন প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে দ্রুততার সাথে। অনলাইনে শক্তিশালী উপস্থিতি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা একইসাথে ব্যবসায়ে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি করে এবং গ্রাহক অভিজ্ঞতার সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। গ্রাহকরা কেনাকাটার ক্ষেত্রে একটি ঝামেলামুক্ত ও সহজ পন্থা প্রত্যাশা করে। সেরাই প্ল্যাটফর্মে উৎপাদকরা খুব সহজেই নিজেদের অনলাইন প্রোফাইল তৈরি করতে পারবে এবং ছবি ও ভিডিও আপলোড করার মাধ্যমে পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করতে পারবে। অনলাইনে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানানো কিংবা কাপড়ের থ্রিডি ছবি প্রদর্শনের মতো প্রযুক্তি সুবিধা নিতে পারবে। প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রাপ্ত অ্যাওয়ার্ড ও সনদ প্রাপ্তির মতো অর্জনগুলোও তুলে ধরতে পারবে। তাছাড়া, এখানে প্রোফাইল পাবলিক করে দেওয়ারও সুযোগ আছে, পাবলিক করলে কারও সেরাই অ্যাকাউন্ট না থাকলেও প্রোফাইলটি দেখতে পারবে। সেরাই-এ প্রাসঙ্গিক পণ্য ও পণ্যের উপাদানের ধরণের মতো কী ওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রোফাইল ট্যাগ করা যা। ট্যাগ করলে যেসব আন্তর্জাতিক ক্রেতা বা ব্র্যান্ড এমন পণ্য খুজছে তারা সহজেই উৎপাদক প্রতিষ্ঠানটি খুঁজে পাবে। এসব ফিচার ব্যবহার করার মাধ্যমে সেরাই-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো সরবরাহকারী ও উৎপাদকদের একটি শক্তিশালী ডিজিটাল উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিষ্ঠানের প্রচারে সহযোগিতা করছে। এর মাধ্যমে মূলত বাজারজাতকরণ ও কার্যক্রম পরিচালনার খরচও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসছে, তবে বাড়ছে দক্ষতা ও মুনাফা। এখান থেকে সাশ্রয়কৃত অর্থ প্রতিষ্ঠান নতুন নতুন উদ্ভাবন ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় করতে পারে। সেরাই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পোশাক শিল্পে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা সংবাদ ও নিবন্ধ আকারে তুলে ধরে, যাতে করে তার সদস্যরা আন্তর্জাতিক তৈরি পোশাক খাত সম্পর্কে সম্যক অবগত থাকতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here