Home বাংলা নিউজ ৭৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়াতে পারে অর্থনীতি

৭৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়াতে পারে অর্থনীতি

করোনা পরিস্থিতিতে চলমান লকডাউনে কোরবানির পশুর বাজার নিয়ে শঙ্কা ও স্বস্তি দুটিই রয়েছে। স্বস্তি হলো গত বছরের মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নেই। পর্যাপ্ত গরু-মহিষ যেমন রয়েছে, তেমন হাটও হচ্ছে দেশব্যাপী। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও গত বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো। তবে শঙ্কাও রয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন চলছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু-মহিষ আনা-নেওয়া করতে পারবে কি না, হাটে আনলে সঠিক দামে বিক্রি হবে কি না—এমন নানা ধরনের শঙ্কার কথা বলছেন প্রান্তিক চাষি ও খামারিরা।

ফলে গরু-মহিষসহ কোরবানির পশু, পশুর চামড়া, পরিবহনব্যবস্থাসহ দেশের ৭৫ হাজার কোটি টাকার কোরবানির বাজার কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। তবে খামার মালিক, ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা আশার কথাই বলছেন। তাঁদের মতে, সরকারের পক্ষ থেকে হাটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কিছু পদক্ষেপ নিলেও পশু আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখলে গতবারের তুলনায় বাজার অনেক ভালো হবে। হাটে পর্যাপ্ত গরু থাকবে, ক্রেতারাও সুবিধামতো কিনতে পারবেন। এতে কোরবানিকে ঘিরে বিপর্যস্ত অর্থনীতির গতি অনেকটাই ফিরে আসবে। এরই মধ্যে অনলাইন ও খামারগুলোতে কোরবানির পশু বিক্রি জমে উঠেছে। খামার পর্যায়ে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ গরু বিক্রি শেষ হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে কোরবানির জন্য গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়াসহ পশুর চাহিদা রয়েছে ৯৫ লাখ থেকে এক কোটি ১০ লাখ। চলতি বছর দেশে কোরবানির যোগ্য পশু রয়েছে এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ৯ লাখের বেশি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।

কোরবানির যোগ্য এসব পশুর বাজারমূল্য ৫৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে মোট পশুর মধ্যে ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার রয়েছে গরু-মহিষ। বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে এসব গরু-মহিষের মধ্যে ৮৫ শতাংশই ৬০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ছোট গরু। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনুসারে এসব গরু-মহিষের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। সে হিসেবে ছোট গরুর বাজারমূল্য গড়ে ৯০ হাজার টাকা হিসাবে ৩৪ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। বাকি বড় গরু-মহিষের বাজারমূল্য গড়ে দুই লাখ টাকা বলছেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃস্থানীয় খামারিরা। সে হিসেবে এসব গরু-মহিষের বাজারমূল্য দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা।

প্রাণিসম্পদের হিসাবে দেশে চলতি বছর কোরবানির যোগ্য ছাগল-ভেড়া ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার। বাজারদর অনুসারে ছাগল-ভেড়ার গড় বাজারমূল্য সাত হাজার টাকা। সে হিসেবে দেশে কোরবানির যোগ্য ছাগল-ভেড়ার মোট বাজারমূল্য পাঁচ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা রয়েছে।

এ ছাড়া উট-দুম্বাও রয়েছে চার হাজার ৭৬৫টি। গত বছর এসব উট-দুম্বা বিক্রি হয়েছে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকায়। সে হিসেবে উট-দুম্বার মোট বাজারমূল্য ২৩৮ কোটি টাকা বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এর বাইরে রয়েছে পরিবহন ও খাদ্যের খরচ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু-মহিষ আনতে প্রতিটি ট্রাকের ভাড়া দিতে হয় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এসব ট্রাকে ২০টি করে গরু-মহিষ আনা যায়। অর্থাৎ প্রতিটি গরু-মহিষের জন্য পরিবহন খরচ পড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। সে হিসেবে কোরবানির পশু বেচা-বিক্রিকে ঘিরে পরিবহন খাতে লেনদেন হবে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া গো-খাদ্যের বাজার রয়েছে দৈনিক ১১৩ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে কোরবানির পশু বেচাকিনিতে লেনদেন হয় প্রায় ৫৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

যদিও বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরানের মতে এই সংখ্যা আরেকটু বেশি হবে এবার। তিনি বলেন, গো-খাদ্যের উপকরণের আমদানি ব্যয় বেশি। ফলে গরু মোটাতাজাকরণে চাষিদের খরচও বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় সার্বিকভাবে ১০ শতাংশ বেশিতে গরু বিক্রি করতে হবে।

তাঁর মতে গরু আনা-নেওয়া যদি নির্বিঘ্ন হয়, রাস্তায় চাঁদাবাজি ও জোর করে পাইকারদের গরু পথে আটকে রাখা না হয় তবে কোরবানির পশুর বাজার খুবই ভালো হবে। তিনি বলেন, ‘এসব সমস্যা বছরের পর বছর ধরে চলছে। প্রতিবছর কোরবানির সময়গুলোতে আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না। রাত জেগে এসব সমস্যার সমাধান করতে হয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাই কোরবানির হাটের সময়গুলোতে সরকারিভাবে একটি কন্ট্রোল রুম বা মনিটরিং সেল খুলতে হবে। যেখানে ফোন দিলে সমস্যার সমাধান হবে।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার কারণে বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে এবার অনেকটাই গতি ফিরবে কোরবানিকে ঘিরে। কোরবানির অর্থনীতির মূল চালিকা পশু বেচাকেনা হলেও আরো কয়েকটি দিকে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ে। এর মধ্যে অন্যতম হলো চামড়াশিল্পের কর্মকাণ্ড। দেশে সারা বছরের কাঁচা চামড়ার চাহিদা পূরণ হয় মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে।

পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতে চামড়ার ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, প্রতিবছর দেশে দেড় কোটিরও বেশি পশুর চামড়া পাওয়া যায়। এর বড় অংশই আসে কোরবানির পশু থেকে। চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ খাতের মূল বাজার চার-পাঁচ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য বাজারসহ এই খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। এ ছাড়া ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে মসলাজাতীয় পণ্যের ব্যবসাতেও ব্যাপক গতি আসে। কোরবানির বাজারে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় এসব পণ্যের। কোরবানির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো কামার আইটেম। ছুরি, বঁটি, দা, চাপাতি, কুড়াল, রামদা ছাড়া কোরবানিই সম্ভব নয়। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কোরবানিতে এই পণ্যের বাজারও এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

আগামী ২০ কিংবা ২১ আগস্ট দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। কিন্তু এরই মধ্যে জমে উঠেছে কোরবানির পশু বিক্রি। রাজধানীর আশপাশের খামারগুলোতে এরই মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ গরু বিক্রি শেষ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মো. ইমরান হোসেন। এ ছাড়া বেচাকেনা চলছে অনলাইন হাটেও।

kalerkantho

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here