Home Bangla Recent চামড়াবিহীন জুতার দাপট বাড়ছে

চামড়াবিহীন জুতার দাপট বাড়ছে

আজকের মতো ফ্যাশনেবল জুতার প্রচলন না থাকলেও প্রায় ৪০ হাজার বছর আগেও মানুষের পায়ে জুতা ছিল। তখন গাছের ছালবাকল দিয়ে জুতা তৈরি হতো। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে গুহায় বসবাসরত মানুষ একধরনের চামড়ার জুতা ব্যবহার করত। বর্তমানের মতো ফিতাযুক্ত চামড়ার জুতা আবিষ্কৃত হয় ১৭৯০ সালে। তখন ইউরোপের অভিজাত মানুষ বিভিন্ন নকশার এই জুতা পরতেন।

কালের বিবর্তনে অবশ্য চামড়ার জুতার আধিপত্যও এখন নিম্নমুখী। সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে সিনথেটিক, রাবার, প্লাস্টিক, কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণে তৈরি জুতা। চামড়ার চেয়ে দামে সস্তা ও টেকসই আর অবশ্যই অনেক বেশি ফ্যাশনেবল হওয়ায় ভোক্তারা সহজেই এসব জুতার প্রতি ঝুঁকছেন। ফলে চামড়াবিহীন জুতার বাজার প্রতিবছরই বাড়ছে।বিজ্ঞাপন

বিশ্বে উন্নতমানের চামড়া উৎপাদনে ভালো অবস্থানে থাকার পর বাংলাদেশেও চামড়ার পাশাপাশি চামড়াবিহীন জুতায় বিনিয়োগ বাড়ছে। যদিও এখন পর্যন্ত চামড়ার জুতার রপ্তানিই হচ্ছে বেশি। তারপরও চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি আয় সাত বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২২টি প্রতিষ্ঠান সিনথেটিক, রাবার, প্লাস্টিক, কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণে তৈরি জুতা উৎপাদন ও রপ্তানি করছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছর ৯১ কোটি ডলারের বা ৭ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকার জুতা রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে চামড়াবিহীন জুতা থেকে এসেছে ৩৪ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই আয় ছিল অর্ধেক, ১৭ কোটি ডলার। গত বছর চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে।

এ খাতের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, বিশ্বজুড়ে চামড়াবিহীন জুতার বড় বাজার রয়েছে। করোনার কারণে দুনিয়াজুড়ে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় সেটি আরও দ্রুত বড় হবে। তবে পণ্যটি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখনো শিশু। কাঁচামালের পুরোটাই আমদানিনির্ভর। সরঞ্জামও বিদেশ থেকে আনতে হয়। তবে প্রণোদনার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করা গেলে রপ্তানিতে ভালো অবদান রাখতে পারবে চামড়াবিহীন জুতা খাত।

ঘুরে আসি বৈশ্বিক বাজার

জুতার বৈশ্বিক বাজারটি কত বড়, সেটি বোঝার জন্য একটু পেছনে যাওয়া যাক। ২০১৮ সালে দুনিয়ার প্রত্যেক মানুষের জন্য গড়ে ৩ দশমিক ১ জোড়া জুতা তৈরি হয়েছিল। তাতে জুতার মোট উৎপাদন দাঁড়িয়েছিল ২৪ হাজার ২০০ কোটি জোড়া। এই বিপুল পরিমাণ জুতার দাম ৩৬ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় ৩১ লাখ কোটি টাকার বেশি। টাকার অঙ্কটি কত বিশাল, সেটি বোঝার জন্য একটি তথ্যই যথেষ্ট। চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। তার মানে বাংলাদেশের ৫টি বাজেটের সমপরিমাণ জুতার বৈশ্বিক বাজারটি।

ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যারের তথ্যানুযায়ী, করোনার ধাক্কায় জুতার বাজার সংকুচিত হয়েছে। গত বছর ২ হাজার ৩০ কোটি জোড়া জুতা উৎপাদিত হয়েছে। তার মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ২১০ কোটি জোড়া জুতা। তবে করোনার পাট চুকলে আবার বাজার বাড়বে। ২০২৭ সালে জুতার বৈশ্বিক বাজার ৫৩ হাজার কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।

জুতা ব্যবহারের পেছনে ক্রয়ক্ষমতার চেয়ে মানুষের সংখ্যাও কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই দেশের অভ্যন্তরে জুতা বিক্রি কিংবা রপ্তানি দুই দিক থেকে চীন সবার ওপরে। গত বছর ৩৯৪ কোটি জোড়া জুতা কিনেছেন চীনারা। দ্বিতীয় ভারতীয়রা, ২০০ কোটি জোড়া। মার্কিনরা কিনেছেন ১৮৩ কোটি জোড়া। এই তালিকায় বাংলাদেশ নবম। গত বছর সাড়ে ৩৬ কোটি জোড়া জুতা কিনেছেন বাংলাদেশিরা।

আগেই বলেছি, দেশের অভ্যন্তরে জুতা ব্যবহারের পাশাপাশি রপ্তানিতেও চীন সবার ওপরে। গত বছর দেশটি ৭৪০ কোটি জোড়া জুতা রপ্তানি করেছে, যা বিশ্বের মোট হিস্যার ৬১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ১২৩ কোটি জোড়া জুতা। তাদের হিস্যা ১০ শতাংশ। তারপরের শীর্ষ তিন রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া, জার্মানি ও তুরস্ক।

চামড়াবিহীন জুতার সময়

চামড়ার জুতার আবেদন এখনো ফুরায়নি। তবে দাম আর ফ্যাশনের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছে চামড়ার জুতা। সেখানে জায়গা পোক্ত করে নিচ্ছে চামড়াবিহীন জুত। ১৯৫৫ সালের পর মূলত রাবার, প্লাস্টিক, সিনথেটিক, কাপড়সহ বিভিন্ন উপকরণের তৈরি জুতার নকশা শুরু হয়।

ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যারের তথ্যানুযায়ী, বৈশ্বিক রপ্তানিবাজারে চামড়ার জুতার রপ্তানি কমছে। ২০০৯ সালে সারা দুনিয়ায় রপ্তানি হওয়া মোট জুতার ১৯ শতাংশ ছিল চামড়ার। ২০১৬ সালে সেটি কমে ১৪ শতাংশে দাঁড়ায়। পরবর্তী দুই বছর সেটি বজায় ছিল। তবে মূল্য বেশি হওয়ার কারণে ২০১৮ সালে অর্থের হিসাবে রপ্তানি হওয়া মোট জুতার ৩৯ শতাংশ ছিল চামড়ার। আর ৬১ শতাংশই চামড়াবিহীন জুতা। তার মানে গত বছর প্রায় ৭৫০ কোটি ডলারে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় যা ৬২ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার সমান।

চামড়াবিহীন জুতার মধ্যে রাবার ও প্লাস্টিকের তৈরি জুতার চাহিদা সবার ওপরে। ২০১৮ সালে পরিমাণের দিক দিয়ে রপ্তানি হওয়া জুতার ৪৭ শতাংশ ছিল রাবার ও প্লাস্টিকের। এ ক্ষেত্রে কাপড়ের তৈরি জুতার হিস্যা ছিল ৩২ শতাংশ। অবশ্য টানা এক দশক কাপড়ের জুতার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার পর গত দুই বছর কিছুটা কমে গেছে।

আগামী বছরগুলোতে কোন ধরনের জুতার চাহিদা বাড়বে, সে বিষয়ে ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার একটি জরিপ করেছে। গত এপ্রিলে প্রকাশিত জরিপে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৪১ জন উৎপাদক, ট্রেডার, পরামর্শক ও সাংবাদিক অংশ নেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশ বলেছেন, আগামী তিন বছর স্নিকারের চাহিদা বাড়বে। ৬৩ শতাংশের মত, স্পোর্টস জুতার চাহিদা বাড়বে। কাপড়ের জুতার বিক্রি বাড়বে বলেছেন ৫০ শতাংশ। তবে ৫৯ শতাংশই বলেছেন, পুরুষদের ব্যবহৃত চামড়ার জুতার বাজার কমবে। আবার ৪৭ শতাংশ মনে করেন, নারীদের চামড়ার জুতার বিক্রি হ্রাস পাবে।

বিস্ময়ের নাম ভিয়েতনাম

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে হটিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে গত সপ্তাহেই ভিয়েতনাম আলোচনায় এসেছে। তবে শুধু পোশাক নয়, জুতা রপ্তানিতেও এখন বিস্ময়কর নাম ভিয়েতনাম। মাত্র আট বছরের ব্যবধানে দেশটির জুতা রপ্তানি ৫ গুণ বেড়েছে।

ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যারের তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে ভিয়েতনাম ৪২২ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি করে। ২০১৮ সালে সেটি বেড়ে ২ হাজার ১১৬ কোটি ডলার হয়েছে। ফলে বৈশ্বিক জুতা রপ্তানিতে দেশটির হিস্যা ৪ শতাংশ থেকে আট বছরের ব্যবধানে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

ভিয়েতনামের জুতা রপ্তানির বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৮ সালে দেশটি তাদের মোট জুতা রপ্তানির ৩০ শতাংশ বা ৬৪১ কোটি জুতা এই বাজারে করেছে। জুতাশিল্পে ভিয়েতনামের দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ। সরকারের নানামুখী সুযোগ-সুবিধার কারণে পোশাকের মতো জুতায়ও চীনারা দেশটিতে বিনিয়োগ করেছে।

২০১১ সালে চামড়া ও চামড়াবিহীন জুতা প্রায় সমান সমান রপ্তানি করত ভিয়েতনাম। তবে সেই অবস্থান থেকে দ্রুত সরে চামড়াবিহীন জুতায় মনোযোগী হয়েছেন দেশটির উদ্যোক্তারা। বর্তমানে তাদের মোট জুতা রপ্তানির মাত্র ২৩ শতাংশ চামড়ার। ৪৮ শতাংশই করে কাপড়ের। আর রাবার ও প্লাস্টিকের জুতা রপ্তানি হয় ২৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে ১ হাজার ৬২৯ কোটি ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম।

ময়মনসিংহের ভালুকায় চামড়াবিহীন জুতার একটি কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা
ময়মনসিংহের ভালুকায় চামড়াবিহীন জুতার একটি কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা

বাংলাদেশ কী করছে

বৈশ্বিক জুতা রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যা ১ শতাংশের কম। অন্যান্য দেশ যেখানে চামড়াবিহীন জুতা উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ অনেকটাই অনুজ্জ্বল। হঠাৎ দু-একটা বিনিয়োগ হলেও ধারাবাহিকতা নেই। সরকারি পর্যায়েও পণ্যটি নিয়ে বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনার কথাও শোনা যায়নি। যদিও চামড়ার জুতা ও পণ্য রপ্তানি বাড়ানো নিয়ে কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চলছে।

চীনের শুধু জুতা রপ্তানিও বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির চেয়ে বেশি। ২০১৮ সালে দেশটি ৪ হাজার ৪৬৭ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি করেছে। তবে তাদের রপ্তানি হওয়া জুতার মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ চামড়ার। ৫৬ শতাংশ জুতাই রাবার ও প্লাস্টিকের। আর ৩১ শতাংশ কাপড়ের তৈরি। বাকি ৬ শতাংশ জুতা অন্যান্য উপকরণে তৈরি। জুতা রপ্তানিতে চীন সবার ওপরে। বাংলাদেশ শীর্ষ ২০–এ নেই। ২০১৮ সালে অবস্থান ছিল ২১। সে বছর বাংলাদেশের জুতা রপ্তানির সবচেয়ে বেশি ৪২ শতাংশ ছিল চামড়ার। ৩৫ শতাংশ কাপড়ের এবং ২২ শতাংশ রাবার ও প্লাস্টিকের। বাংলাদেশের রপ্তানিতে চামড়ার জুতা সবার ওপরে থাকলেও আমদানিতে ৭৬ শতাংশ জুতাই রাবার ও প্লাস্টিকের।

চামড়াবিহীন জুতার দাপট বাড়ছে

চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানির জন্য চট্টগ্রামে এক দশক আগে গড়ে ওঠে ম্যাফ শুজ লিমিটেড। আড়াই কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি চপ্পল, কেডস, স্নিকারসহ বিভিন্ন ধরনের জুতা তৈরি করে। বর্তমানে দিনে ৪৫ হাজার জোড়া জুতা উৎপাদন করে ম্যাফ সুজ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের জুতা রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। করোনার কারণে বিদায়ী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়নি। তবে চলতি বছর তাদের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৭ কোটি ডলার।

ম্যাফ সুজ চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিতে কতটা ভালো করছে তার দুটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ২০১৫ সালে তাদের কারখানায় কাজ করতেন ২ হাজার ৬০০ শ্রমিক। বর্তমানে সংখ্যাটি বেড়ে সাড়ে ৮ হাজারে দাঁড়িয়েছে। আবার ২০১৫ সালে তাদের দৈনিক উৎপাদন ছিল ১৪ হাজার জোড়া জুতা। বর্তমানে উৎপাদনক্ষমতা বেড়েছে ৩ গুণ।

জানতে চাইলে ম্যাফ শুজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসনাত মোহাম্মদ আবু ওবায়দা প্রথম আলোকে বলেন, জুতা উৎপাদনপ্রক্রিয়া খুবই জটিল। চাইলেই আজ এক ব্র্যান্ড, কাল আবার আরেক ব্র্যান্ডের কাজ করা যায় না। একটি জুতার নকশার প্যাটার্ন দাঁড় করাতেই আড়াই মাস সময় লেগে যায়। তা ছাড়া ৯৯ শতাংশ কাঁচামালই চীন থেকে আমদানি করতে হয়। ক্রেতারা সাধারণত ছয় মাস আগেই ক্রয়াদেশ চূড়ান্ত করে দেয়। হঠাৎ কাঁচামালের দাম বেড়ে গেলে বিপদে পড়তে হয়। ফলে সংযোগশিল্পে শক্ত অবস্থান গড়তে না পারলে দ্রুত এগোনো যাবে না।

ম্যাফ সুজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিতে ৪ শতাংশ নগদ সহায়তা পেতে শুরু করেছি আমরা। এই সুবিধা অনন্তকাল প্রয়োজন নেই। তবে আগামী কয়েক বছর অব্যাহত থাকলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আরেকটু ভালো জায়গায় পৌঁছাতে পারবে।’

এদিকে পরিমাণে কম হলেও নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। চামড়ার জুতা রপ্তানিতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার তাদের কারখানায় চামড়াবিহীন জুতা উৎপাদনের জন্য একটি ইউনিট চালু করেছে। সেখানে দিনে প্রায় ৩ হাজার জোড়া জুতা তৈরি হচ্ছে। কাজ করছেন ৪৫০ শ্রমিক।

জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মোমেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমাদের নতুন ইউনিটে শুধু ফ্রান্সভিত্তিক ব্র্যান্ড ডেক্যাথলনের একটি নকশার জুতা উৎপাদন করি। সে কারণে আমাদের উৎপাদনশীলতা তুলনামূলক বেশি। শিগগিরই ব্র্যান্ডটির আরও কয়েকটি নকশার জুতা আমরা তৈরি করব।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে চামড়ার জুতার চাহিদা কমছে। করোনার কারণে সেটি আরও কমেছে।

দেশের প্রথম পরিবেশবান্ধব জুতার কারখানা গড়ে উঠেছে ময়মনসিংহের ভালুকায়। ন্যাশনাল পলিমার গ্রুপের শুনিভার্স ফুটওয়্যার নামের এই কারখানায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের চামড়াবিহীন জুতা তৈরি করা হয়। তাদের দৈনিক উৎপাদন ৮ হাজার জোড়া জুতা। শুনিভার্সে কাজ করেন ১ হাজার ২০০ শ্রমিক। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের চামড়াবিহীন জুতা।

জানতে চাইলে শুনিভার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চমূল্যের কারণে চামড়ার জুতা বর্তমানে শৌখিন মানুষেরা ব্যবহার করেন। ফলে চামড়াবিহীন জুতার চাহিদা বাড়ছে। করোনার কারণে গত বছর আমাদের কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল হয়নি। উল্টো গত ছয় মাসে তিনটি নতুন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের জন্য জুতা তৈরির কাজ শুরু করেছি। আরও চারটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তারা কারখানায় আসতে চায়। কিন্তু করোনার কারণে সম্ভব হচ্ছে না।’

রিয়াদ মাহমুদ আরও বলেন, ‘শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা কারণে চীন থেকে ধীরে ধীরে জুতার ব্যবসা সরছে। সুযোগটি বছরের পর বছর কিন্তু থাকবে না। ইতিমধ্যে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ইথিওপিয়া সুযোগটি নিতে শুরু করেছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ সুবিধা দিলে আমরা বড় আকারে বাজারটি ধরতে পারব। আর চামড়াবিহীন জুতার বাজার ধরতে কাঁচামালসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম ও মোড়কপণ্যের (প্যাকেজিং) সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রচুর বিনিয়োগ লাগবে। তাহলেই নাইকি, অ্যাডিডাস, রিবকের মতো নামীদামি ব্র্যান্ডের জুতা উৎপাদনে যেতে পারব আমরা।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here