বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সভাপতি ফারুক হাসান তাদের সাথে কোন আলোচনা ব্যাতিরেকেই পোশাক কারখানার কর্ম পরিবেশ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘আন্তর্জাতিক অ্যাকর্ড’ নামে নতুন চুক্তির খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
নতুন এই চুক্তির বিষয়ে ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষে বৃহস্পতিবার তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফারুক হাসান বলেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আগে কোনও যোগাযোগ বা আলোচনা না করেই বিদেশি কিছু বড় রিটেইল ব্র্যান্ড এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মধ্যে নতুন ওই চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন বিজিএমইএ কে পাঠানো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রিটেইল ব্র্যান্ড এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে দুই বছর মেয়াদি এই নতুন চুক্তির খবর তাদের জানানো হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ছাড়াও কারখানায় নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে অন্য দেশেও কাজ করার বিষয়ে এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীরা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন বলে জানানো হয়েছে। নতুন এই চুক্তি যার নাম দেওয়া হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফর হেলথ অ্যান্ড সেইফটি ইন দ্য টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি সেটি পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। ফারুক হাসান বলেন বাংলাদেশে যেহেতু মালিক-শ্রমিক ও ক্রেতা-ব্র্যান্ড প্রতিনিধিদের নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আরএমজি সাসটেইনেবলিটি কাউন্সিল বা আরএসসি সংস্কার কাজ অব্যাহত রেখেছে এদেশে নতুন এই অ্যাকর্ডের কোনও কাজ করার সুযোগ নাই।
বাংলাদেশের নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ এর সহ সভাপতি মোহাম্মাদ হাতেম নতুন এই চুক্তি সম্পর্কে সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন বাংলাদেশের আদালতের নির্দেশে অ্যাকর্ডের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। অন্য কোনও নামে কিংবা অন্য কোনও উদ্যোগ নিয়ে তাদের আর বাংলাদেশে ফিরে আসার সুযোগ নাই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেছেন অ্যাকর্ড এর অবসানের পর একই কাজের দায়িত্বে থাকা আরএসসি কয়েকটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন এর সাথে অন্যান্য ব্র্যান্ডকেও যুক্ত করতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশর সবগুলো পোশাক কারখানা, ক্রেতা ও ব্র্যান্ড যেন এর সঙ্গে যুক্ত হয় সেটা দেখা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন আরএসসি এর সক্ষমতা আগামী দিনে আরও বাড়ানো হবে। তিনি বলেন এর কাজ হচ্ছে ফায়ার, ইলেক্ট্রিকাল এবং স্ট্রাকচারাল বিষয়গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এটা নিয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।
উল্লেখ্য, রানা প্লাজা ধ্বসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা এবং কর্ম পরিবেশ নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার যে জন্ম দিয়েছিল সেই প্রেক্ষাপটে ইউরোপের ক্রেতাদের সমন্বয়ে ২০১৩ সালের মে মাসের মাঝামাঝি গঠিত হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ যা অ্যাকর্ড নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রায় একই সময়ে উত্তর আমেরিকার দেশ সমূহের ক্রেতাদের সমন্বয়ে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গঠিত হয় এলায়েন্স। বাংলাদেশে এলায়েন্স এর কার্যক্রম শেষ হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এবং অ্যাকর্ড তাদের কার্যক্রমের সমাপ্তি টানে ২০২০ সালের মে মাসে।