কভিড-১৯ মহামারীর কারণে একটা দীর্ঘসময় পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশ আটকে ছিল নানা নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে। টিকাদানের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে সংক্রমণ। দেশগুলোও তাদের বিধিনিষেধ অনেক শিথিল করে দিয়েছে। কিন্তু ভিয়েতনামে এখনো কমেনি বিধিনিষেধ, আর সেটিই বিশ্বের বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যারা জুতা ও পোশাকের জন্য দেশটির কারখানাগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
সিএনবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য ডিসেম্বর ছুটির সময়। এ সময়টি ঘিরে রমরমা থাকে পণ্যবাজার। ফলে বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড এ সময়ের জন্য মুখিয়ে থাকে। কিন্তু তার আগেও যদি ভিয়েতনামে বিধিনিষেধ বহাল থাকে এবং সময়মতো তারা পণ্য সরবরাহ করতে না পারে তাহলে বিপদে পড়ে যাবে পশ্চিমা বহু প্রতিষ্ঠান।
ওয়াল স্ট্রিটভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিটিআইজি জানিয়েছে, গত সপ্তাহে নাইকির শেয়ারের দরে পতন হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিশ্বখ্যাত স্নিকার প্রস্তুতকারী এ প্রতিষ্ঠান বেশ বড় ধরনের উৎপাদন জটিলতায় পড়েছে। সরবরাহ চেইন নিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আর এ সপ্তাহের শেয়ারবাজারের লেনদেন শেষে প্রতিষ্ঠানটির ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
এ সমস্যা কেবল নাইকির একার নয়। অন্য খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোও এ সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ তাদের পণ্য উৎপাদন হয় ভিয়েতনামের বিভিন্ন কারখানায়। আর দেশটিতে কভিড-১৯ সংক্রান্ত নানা বিধিনিষেধ থাকায় তা উৎপাদন ব্যাহত করার পাশাপাশি সরবরাহ চেইনে বেশ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিয়েতনামের পরিস্থিতির কারণে চিন্তায় পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেকেই চীন থেকে ভিয়েতনামে উৎপাদন ব্যবস্থা সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছে।
ভিয়েতনামের ব্যবসায়িক কেন্দ্র হো চি মিন সিটিতে চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়ানো হয়েছে। মূলত সেখানে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে কারখানাগুলোর জন্য নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কারখানাগুলো পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হবে। আর যদি তারা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে চায় তাহলে কারখানার ভেতরেই কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। অর্থাৎ কারখানা এলাকা থেকে বের হতে পারবেন না কর্মীরা।
এমন পরিস্থিতিতেও কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশা করছে যে হয়তো শিগগিরই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে। লেগিংস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান লুলুলেমন বলছে, তাদের প্রত্যাশা সেপ্টেম্বরের শেষভাগে হয়তো ভিয়েতনামের কারখানাগুলো পুরোপুরি কাজে ফিরবে।
বাস্তবতা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। কবে নাগাদ ভিয়েতনাম বিধিনিষেধ তুলে নেয় ও উৎপাদন সক্ষমতা ফিরে আসে তা নজরে রাখা হচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য উৎপাদনের জন্য চীন থেকে সরে এসে ভিয়েতনামে বিনিয়োগ শুরু করে। এখন অনেকেই আবার সে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছেন। গোটা বিষয়টিকেই রোলার কোস্টারে চড়ার মতো বর্ণনা করা হচ্ছে। অনেকেই উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে অন্য দেশের প্রতি ঝুঁকছে। বিশেষ করে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউন তুলে নিলেও আগের মতো উৎপাদন সক্ষমতায় ফিরতে ভিয়েতনামের আরো পাঁচ থেকে ছয় মাস লেগে যেতে পারে। যেটি খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য লোকসানের কারণ হতে পারে। আর তাই এখনই বিকল্প খুঁজে নিতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।