আজকের পত্রিকা: পোশাকের অর্ডার বাড়ছে, সক্ষমতা বাড়ছে কি না?
সৈয়দ নজরুল ইসলাম: সত্যি কথা আমাদের দেশে অর্ডার বাড়ছে। তবে এটা কোনো অবস্থাতেই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মতো নয়। সমস্যা হলো, লকডাউনের কারণে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা কমেছে। এখন আমাদের কর্মিসংকট দেখা দিয়েছে। করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে আমাদের কারখানাগুলো তাদের কিছু কর্মী কমিয়েছিল। ওই কর্মীদের বেশির ভাগই গ্রামে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে পরে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর্মী কম আসছে। যে কারণে আমাদের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা থাকলেও কর্মিসংকটে সেটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: অর্ডার বাড়ছে, উদ্যোক্তাদের মার্জিন বাড়ছে কি না?
সৈয়দ নজরুল ইসলাম: অর্ডার আসছে বলা হলেও তা যতটা বলা হচ্ছে ততটা নয়। কারণ, এখানে অনেকগুলো বিষয় আছে। টাকার অঙ্কে অর্ডার বেড়েছে কিন্তু প্রকৃত মার্জিনের হিসাবে তা কম। পর্যালোচনা করলে বোঝা যাবে উদ্যোক্তাদের ক্যাশ ফ্লো বা নগদ টাকার প্রবাহ বাড়েনি। কাঁচামালের খরচ বেড়ে গেছে। আগে যদি ১০০ ডলারে কাজ করতাম, সেখানে ৭০ শতাংশ ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতাম। আর এখন আমি ১১০ ডলার বা ১০৫ ডলার দিয়ে কাজ করছি, ব্যাক টু ব্যাক খুলছি ৮৫ শতাংশ। তার মানে কাঁচামালের খরচ বেড়ে যাওয়াতে, এফওবি ভেল্যু কিছুটা বাড়লেও প্রকৃত অর্থে বাড়েনি বরং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমেছে।
আজকের পত্রিকা: খরচ বাড়ছে কেন পোশাক খাতে?
সৈয়দ নজরুল ইসলাম: কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে চীনে বিদ্যুৎ-সংকট এখন প্রকট। ফলে কারখানাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে পারছে না। সেখানে রেশনিং করে কারখানা চালু রাখা হচ্ছে। এতে তাদের উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ কমছে, দাম বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, কাঁচামালগুলোর পরিবহনের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তৃতীয়ত, বায়াররা এখন বেশি খরচ দিয়ে আমাদের পণ্য নিয়ে যাচ্ছে। আগে প্রতি কনটেইনার খরচ ছিল আড়াই থেকে তিন হাজার ডলার, এখন তা আঠারো থেকে বিশ হাজার ডলার। এ বাড়তি খরচ দেওয়ার পর বায়াররা পণ্যের বাড়তি দাম দিচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: খরচ কমাতে করণীয় কী?
সৈয়দ নজরুল ইসলাম: এ জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। খরচ কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আগে আমাদের প্রতি কার্টনে ৫ টাকা খরচ হতো, এখন তা হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। আগে ঢাকা-চট্টগ্রামে ট্রাক ভাড়া ছিল ৪ হাজার টাকা। এখন তা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আগে বিভিন্ন রকম স্পিড মানি সহনীয় পর্যায়ে ছিল, এখন তো আরও বেড়ে গেছে।
আজকের পত্রিকা: সরকার কীভাবে এগিয়ে আসবে?
সৈয়দ নজরুল ইসলাম: এ খাতে সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু তা ধরে রাখতে হলে বন্ড, কাস্টমস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতের নীতিগত সহায়তা খুব দ্রুত দিতে হবে। আমরা কর দিতে চাই। সরকারি সব খরচ আমরা অবশ্যই দিতে চাই। তবে তা কমিয়ে আনতে হবে। সরকার যদি এদিকে একটু সুনজর দেয় তাহলে অর্থনীতি যেভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, সেটা সফল হবে।