Home বাংলা নিউজ মানবাধিকারের উন্নতি হলে রপ্তানি আদেশ বাড়বে

মানবাধিকারের উন্নতি হলে রপ্তানি আদেশ বাড়বে

কারখানা পর্যায়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও উন্নতির দরকার আছে বলে মনে করেন পোশাক খাতের বেশিরভাগ উদ্যোক্তা। অন্তত ৯৪ শতাংশ উদ্যোক্তা মনে করেন, কারখানা পর্যায়ে মানবাধিকারের উন্নতি করা গেলে ব্র্যান্ড এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে আরও বেশি পরিমাণে রপ্তানি আদেশ পাওয়া যাবে। তবে ৭৯ শতাংশই মনে করেন শতভাগ মানবাধিকার নিশ্চিত করতে গেলে তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। ২৫ শতাংশ উদ্যোক্তা মনে করেন, এতে তাদের মুনাফার অংশ কমে যাবে।

পোশাক কারখানায় মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকারের অনুশীলন বিষয়ক এক গবেষণা জরিপে উদ্যোক্তাদের এই মতামত জানা গেছে। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি পরিচালিত জরিপের ফলাফল গতকাল শনিবার প্রকাশ করা হয়। জরিপ প্রকাশ উপলক্ষে ক্রিশ্চিয়ান এইডের সহযোগিতায় এক সংলাপের আয়োজন করা হয়।

‘গার্মেন্ট খাতে শ্রম ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন :জাতিসংঘের নীতি কাঠামোর আলোকে’ শিরোনামে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আলোচনায় উদ্যোক্তা, গবেষক এবং শ্রমিক নেতারা মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও উন্নতির ওপর জোর দেন। তারা মনে করেন, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৬০৩টি কারখানা মালিকদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জরিপ পরিচালনা করা হয়। পোশাক কারখানা অধ্যুষিত ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম থেকে এসব কারখানা নির্বাচন করা হয়েছে। অন্যদিকে, জরিপে মত নেওয়া হয়েছে ২০০ কারখানার ৬০৬ শ্রমিকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে।

জরিপে নেতৃত্ব দেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জম। ফলাফল উপস্থাপনায় তিনি বলেন, জাতিসংঘের শ্রম ও কর্মপরিবেশ বিষয়ক গাইডলাইনের (ইউএনজিপিএস) ভিত্তিতে বাংলাদেশের পোশাক খাতের মানবাধিকার এবং কর্মপরিবেশ বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে জরিপে। এতে মানবাধিকার এবং শ্রমিক অধিকার চর্চা বিষয়ক ১৪টি সূচকের বাস্তব পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এর মধ্যে শিশুশ্রম, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানিসহ সব ধরনের হয়রানি, ন্যায্য মজুরি ও কার্যকর যৌথ দরকষাকষির সুযোগ- এমন মৌলিক বিষয় রয়েছে।

জরিপ অনুযায়ী, মানবাধিকার সংক্রান্ত অন্তত একটি আন্তর্জাতিক সনদ রয়েছে ৬২ শতাংশ পোশাক কারখানায়। সনদের ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের কারখানা পিছিয়ে আছে। ৮২ শতাংশ কারখানা মৌলিক মানবাধিকারের বিষয়গুলো অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করছে। পোস্টার ব্যানারেও প্রদর্শন করা হয়। জরিপ অনুযায়ী ৮২ শতাংশ উদ্যোক্তা মনে করেন, তাদের কারখানায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদারক করার ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে ৩৭ শতাংশ কারখানায় মানবাধিকারের মৌলিক বিষয়গুলো সবার জন্য উন্মুক্ত আছে। শ্রমিকদের পক্ষে নালিশের ক্ষেত্রে গড়ে প্রতিটি কারখানার ৬ শতাংশ শ্রমিক তাদের বিভিন্ন অভিযোগ দাখিল করেছেন।

জরিপে শ্রমিকদের ১৭ শতাংশ দাবি করেছে, কারখানায় শারীরিক এবং মৌখিক হয়রানির শিকার হয়েছেন তারা। মাত্র ৩৪ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের কারখানায় হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি আছে। তবে তা প্রায় অকার্যকর। শ্রমিকদের মতে, ৪৭ শতাংশ কারখানায় পার্টিসিপেশন কমিটি আছে। শ্রমিক কল্যাণ কমিটি আছে ৩১ শতাংশ কারখানায়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচনায় অংশ নিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবং সাবেক শ্রমপ্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, মালিক এবং শ্রমিকরা নিজ অধিকার সম্পর্কে যত সচেতন, দায়িত্ব সম্পর্কে তত সচেতন নন। দু’পক্ষের মধ্যে এখনও মানসিক দূরত্ব রয়ে গেছে। এ কারণেই সমস্যা এবং অভিযোগ কমছে না। মানবাধিকারের উন্নতি হলেও অভিযোগ থাকবেই।

শ্রমসচিব এহসান ই ইলাহী বলেন, কারখানায় মানবাধিকার তদারকিতে সরকারি পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করা হবে। এ জন্য কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, জরিপের সব বিষয়ে তারা একমত নন। এটি খণ্ডচিত্র। তবে যেসব অসংগতি উঠে এসেছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। এসব অসংগতি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শিল্পের টেকসই উন্নয়নে বিজিএমইএ আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে।

বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শ্রমিকদের মানবাধিকার এবং কর্মপরিবেশ উন্নয়ন পোশাকের ন্যায্য দর নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অথচ ন্যায্য দরের বিষয়ে ক্রেতারা কোনো দায়-দায়িত্ব নেননি। শ্রমিক নেতা বাবুল আক্তার বলেন, সবচেয়ে বেশি সবুজ কারখানা আছে দেশে অথচ শতভাগ আইন প্রতিপালনকারী একটি কারখানাও নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here