দেশের রপ্তানি আয়ের বেশির ভাগ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। কিন্তু সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে তুলাসহ পোশাকের কাঁচামালের দাম বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। তাই পরিস্থিতি উত্তরণে আরো কিছু সুবিধা চান এ খাতের মলিকরা। প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট লিমিটি (সর্বোচ্চ ঋণসীমা) বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
গত সপ্তাহে দেওয়া এ চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
সূত্র মতে, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচি থেকে ঋণ সুবিধা নিয়ে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের পর তা ফেরত দিতে ১৮ কিস্তির পরিবর্তে ৩৬ কিস্তি নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছিল বিজিএমইএ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এ দাবি জানিয়েছিল সংস্থাটি। এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নীতিমালার আওতায় খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল বা এককালীন পরিশোধ (ওয়ান টাইম এক্সিট) সুবিধা আরো এক বছর বাড়ানোর দাবি জানায়।
এবার ক্রেডিট লিমিট বা কম্পোজিট লিমিট বাড়াতে গভর্নরকে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েছেন সভাপতি ফারুক হাসান। চিঠিতে বলা হয়েছে, চীনে কভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামালের সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় গত বছরের ফেব্রুয়ারির পর থেকে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। এর প্রভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রেতারা অনেক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে, যার ফলে রপ্তানিকারকরা চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে আছে।
কাঁচামালের দাম বেড়েছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, বর্তমানে সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থার বিপর্যয়ের কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের আমদানীকৃত কাঁচামাল ও স্থানীয় কাঁচামালের মূল্য কল্পনাতীতভাবে বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী তুলার দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় নিট শিল্পের সুতার দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ, ফ্যাব্রিকসের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ, আনুষঙ্গিক দ্রব্য বা অ্যাকসেসরিজের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী পরিবহনব্যবস্থায়ও চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ।
চিঠিতে আরো বলা হয়, শিল্পের এই চরম বিপর্যয়ের সময় অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের স্ব স্ব ব্যাংকের দেওয়া ক্রেডিট লিমিট/কম্পোজিট লিমিটের মধ্য থেকে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতে পারছে না। বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে বর্তমানে ক্রেডিট লিমিট/কম্পোজিট লিমিট ৩০-৫০ শতাংশ বাড়ানো দরকার। অনেক প্রতিষ্ঠানই ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতে গেলে ব্যাংকের দেওয়া ক্রেডিট লিমিটের অতিরিক্ত ঋণের জন্য কোলেটেরেল চাওয়া হচ্ছে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে রপ্তানি আদেশের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলা হয়ে থাকে। সুতরাং অতিরিক্ত ক্রেডিট লিমিটের জন্য কোলেটেরেল চাওয়া কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। তাই তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি কার্যক্রমকে নিরিবচ্ছিন্ন রাখার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কর্তৃক প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট লিমিট/কম্পোজিট লিমিট ৩০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানান বিজিএমইএ সভাপতি।