Home Apparel নতুন সংকটে শিল্প খাত

নতুন সংকটে শিল্প খাত

নতুন সংকটে শিল্প খাত
নতুন সংকটে শিল্প খাত

রপ্তানিতে খরচ বেড়েছে, ক্রেতারা দাম বাড়াননি * এলসি ও চলতি মূলধনের সীমা বাড়ানোর দাবি উদ্যোক্তাদের

করোনা পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে শিল্পের কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারেও। বাড়ছে পণ্যের দাম। জ্বালানি তেলের কারণে পণ্য পরিবহণ ব্যয়ও বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। ব্যাংকে বেড়েছে ডলারের দাম। এভাবে মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে দেশের প্রায় সব ধরনের শিল্প।

বাড়তি ব্যয়ে পণ্য উৎপাদন করতে হচ্ছে। কিন্ত হঠাৎ করে বেশি দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্পে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়লেও ক্রেতারা দাম বাড়াননি। সব মিলে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে শিল্প খাত।

এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য উদ্যোক্তারা করোনাকালীন প্রণোদনা অব্যাহত রাখা, এলসির সীমা বাড়ানো, চলতি মূলধনের ঋণসীমা বৃদ্ধির দাবি করেছেন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের প্রণোদনার ঋণ এক দফার পরিবর্তে একাধিকবার দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। এসব বিষয়ে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে বেশি সংকটে পড়েছে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প। এর মধ্যে পোশাক শিল্পের অবস্থা খুবই নাজুক। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৬ শতাংশই আসে এ খাত থেকে।  পোশাক শিল্পের অবস্থা জানিয়ে গত ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন।

এতে তিনি উল্লেখ করেন, করোনায় তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে আমদানি করা শিল্পের কাঁচামাল ও স্থানীয় কাঁচামালের মূল্য কল্পনাতীতভাবে বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী তুলার দাম মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে নিট সুতার দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। একই কারণে ফেব্রিক্সের দাম বেড়েছে ২৫ এবং আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি বা এক্সেসরিজের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী পরিবহণ ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে পণ্য পরিবহণের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এ অবস্থায় অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের নিজ নিজ ব্যাংক থেকে দেওয়া ক্রেডিট লিমিট বা কম্পোজিট লিমিটেডের মধ্যে কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতে পারছে না। পণ্যের দাম বাড়ায় এলসি খুলতেও বেশি ঋণ লাগছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতে গেলে ব্যাংকের দেওয়া এলসি লিমিটের অতিরিক্ত ঋণের জন্য জামানত চাওয়া হচ্ছে। ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে অতিরিক্ত ঋণের জন্য জামানত চাওয়া কোনোভাবে যুক্তিযুক্ত নয়। তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি কার্যক্রমকে নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ব্যাক টু ব্যাক এলসি ও চলতি মূলধনের চলমান সীমা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত দুই মাসে বিশ্ব বাজারে সব ধরনের কাঁচামালের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু রপ্তানির আদেশ পাওয়া গেছে দুই মাস আগে। এখন বাড়তি দামে কাঁচামাল আমদানি করে পোশাক তৈরি করতে বেশি খরচ পড়ছে। কিন্তু ক্রেতা পণ্যের দাম বাড়াতে চাচ্ছে না। এতে করে দেশের রপ্তানি খাত নতুন সংকটে পড়েছে।

সূত্র জানায়, একই অবস্থা অন্যান্য শিল্প খাতে। শিল্পের প্রায় সব ধরনের কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে যেসব কাঁচামাল পাওয়া যায় সেগুলোর দামও বেড়েছে। এ অবস্থায় বেশি দামে কাঁচামাল কিনে আগের দামে পণ্য বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়ছেন উদ্যোক্তারা। ইচ্ছে করলে যেভাবে খরচ বেড়েছে, সেভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না।

এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সব ধরনের পণ্যের পরিবহণ ব্যয় বেড়ে গেছে। বিশ্ব বাজারে গত বছরের এপ্রিলে জ্বালানি তেলের দাম কমে প্রতি ব্যারেল ২০ ডলারে নেমেছিল। এখন তা বেড়ে ৯০ ডলারে উঠেছে।

অক্টোবরে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দামই বেড়েছে। করোনার কারণে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এখন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া হঠাৎ করে সব দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে দাম বাড়ছে। গত বছরের জুনে জ্বালানিবহির্ভূত পণ্যের দামের (শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, পণ্য) গড় সূচক ছিল ৭৫ ডলার। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১১০ ডলার। খাদ্য উপকরণের গড় সূচক একই সময়ে ৮০ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ১১৫ ডলার। একই সময়ে জাহাজে পণ্যের পরিবহণ ব্যয় বেড়েছে ৭৩ শতাংশ।

উদ্যোক্তারা জানান, করোনা পরিস্তিতির উন্নতি হওয়ায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হয়েছে। এ কারণে পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। বিশ্বের খ্যাতিমান ব্র্যান্ডগুলোর শোরুম এখন খালি। পণ্যের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেতারা জাহাজের পরিবর্তে বিমানে দ্রুত পণ্য পাঠানোর তাগিদ দিচ্ছেন। ক্রেতাদের রপ্তানির আদেশও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্টের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাক টু ব্যাকের আওতায় নতুন এলসি খোলা বেড়েছে ৫১ দশমিক ০৮ শতাংশ। আমদানি বেড়েছে ৩৬ দশমিক ১২ শতাংশ। একই সময়ের ব্যবধানে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে ১১ শতাংশ, এলসি খোলা বেড়েছে ১২ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামালের এলসি খোলা বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং আমদানি বেড়েছে ৩৭ শতাংশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here